মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

চরফ্যাসন ভাসমান দরিদ্রের ঠিকানায় আশার আলো

অশোক সাহা চরফ্যাসন
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪

চরফ্যাশনের ভাসমান দরিদ্র মানুষের ঠিকানা আশ্রয়ন প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরগুলো পুনঃনির্মাণ শুরু হওয়ায় আশ্রিত হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। প্রথম ধাপের পুনঃনির্মাণকৃত এমন ৩শ ৭০টি ঘর শীঘ্রই আশ্রিত পরিবারগুলোকে বুঝিয়ে দেয়া হবে এবং বাকী ১ হাজার ২০টি ঘর পর্যায়ক্রমে পুনঃনির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক। সূত্রে জানাগেছে, গেলো বছরের জুলাই মাসে চরফ্যাশন ইউএনও’র পদে নওরীন হক যোগদানের পরপর আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় আশ্রিতদের দুর্দশা এবং ঘরগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন তিনি। প্রকল্পের ঘরে আশ্রিত হতদরিদ্র অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছু করার উদ্যোগী হন এবং মুজিববর্ষের ঘরের আদলে আশ্রায়ন প্রকল্পের সবগুলো ঘর পুনঃনির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করেন। প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান করে এমন জরাজীর্ণ ১ হাজার ৩শ ৯০টি ঘরে আশ্রিতদের তালিকা প্রস্তাব করা হলে প্রস্তাব অনুযায়ী গত নভেম্বর মাসে মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম ধাপে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃনির্মাণের বরাদ্দ দেয়া হয়। জাতীয় নির্বাচনের মধ্যেও পুনঃনির্মাণ কাজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চালিয়ে এখন পুনঃনির্মিত ঘরগুলো আশ্রিতদের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পে আশ্রিত পরিবার এবং প্রকল্পের ঘর পুনঃনির্মাণে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এই প্রকল্প নিয়ে আশ্রিতদের জীবনের হতাশা আর আশাজাগানিয়া অজানা অনেক কথাই জানা গিয়েছে। হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ঝিনুক আশ্রয়নে আশ্রিত ৭০ বছরের বৃদ্ধা জোবেদা জানান, ৩০ বছর আগে দিনমজুর স্বামী মোস্তফা মারা গেলে নিঃসন্তান জোবেদার আপনজন কেউ না থাকায় মাথাগোজার ঠিকানাও ছিলো না। ভূমিহীন ইসমাইল-জোবেদার আপনজন বলতে যেমন কেউ নেই, তেমনি ছিলো না নিজের কোন জমি বা মাথাগোঁজার ঠাই । বাংলাদেশ নৌবাহিনীর করুণায় ২০ বছর আগে হাজারীগঞ্জের ঝিনুক আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর পান জোবেদা। সেই ঘর হয়ে উঠে জোবেদার ঠিকানাহীন জীবনের আশার প্রদীপ। সময়ের ব্যবধানে ঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে যায়। মেরামত করার সামর্থ ছিলোনা ভিক্ষাজীবী জোবেদার। পলিথিন মুড়িয়ে ওই ঠিকানা আকঁড়ে ছিলেন তিনি। এখন সরকারের উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন জোবেদার জরাজীর্ণ ঘরটি পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করেছে। ফলে জীবনসায়াহ্নে এসে সেমি পাকা ঝকঝকে একটি নতুন ঘর জোবেদার মুখে একঝলক উজ্জ্বল হাসি হয়ে ধরা দিয়েছে। সব থেকেও সর্বহারা ষাটোর্ধ বিধবা ফাতেমার জীবনেও এক ঝলক হাসি হয়ে ধরা দিয়েছে আবাসন প্রকল্পের পুনঃনির্মাণ করা নতুন ঘর। ১৭ বছর আগে ২ ছেলে ও ১মেয়ে রেখে মারা যান ফাতেমার স্বামী সামসুল হক। স্বামী মৃত্যুর পর স্বজনরা স্বামীর ভিটে থেকে ৩ সন্তানসহ ফাতেমাকে উচ্ছেদ করে দিলে ঠিকানাহীন হয়ে পরেন ষাটোর্ধ্ব বিধবা ফাতেমা। এ অবস্থায় ৯ বছর আগে হাজারীগঞ্জের ঝিনুক আশ্রয়ন প্রকল্পের জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত একটি ঘরে আশ্রয় নেন তিনি।পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় ঘরটি আর সংস্কার করা হয়নি। এখন উপজেলা প্রশাসন ঘরটি পুনঃনির্মাণে উদ্যোগ নেয়ায় মহাখুশি এই বিধবা নারী ৭০ বছর বয়সি ভিক্ষাজীবী প্রতিবন্ধী ওমর ফারুক ২০ বছর আগে ঝিনুক আশ্রয়নে একটি ঘর পান। এ ঘরে থেকেই স্ত্রী জয়নব এবং ৫ ছেলে এবং ১মেয়েকে নিয়ে বিশাল সংসারের ভার বয়েছেন তিনি ভিক্ষা করেই। কর্মক্ষম হওয়ার পর ছেলেরা বিয়ে করে প্রতিন্ধী বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে অন্যত্র চলে গেছেন। বিয়ে করে মেয়ে চলে গেছেন স্বামীর কাছে। প্রতিবন্ধী এ বৃদ্ধ জরাজীর্ণ ঘরটি পলিথিলিন মুড়িয়ে রোদ আর ঝড়-ঝঞ্চা থেকে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করলেও আর্থিকভাবে দারুণ দৈণ্যতার কারণে ঘরটি সংস্কারের কথা চিন্তাও করতে পারেননি। সেই ঘরটিও এখন ইউএনও নওরীন হকের প্রচেষ্টায় পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। ঘরটি পুনঃনির্মাণের এ আয়োজনে প্রতিবন্ধী ফারুক-জয়নব দম্পতির কাছে মেঘ চাওয়ার আগেই বৃষ্টি হয়ে ধরা দিয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানাযায়, আশ্রয়হীন,ভূমিহীনদের মতো ভাসমান মানুষের নিজস্ব ঠিকানা নিশ্চিত করতে আশ্রয়ন প্রকল্প শুরু হয় এবং এসব প্রকল্পে নিজের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন জোবেদা, ফাতেমা আর ওমর ফারুকের মতো সমাজের চরম নিঃস্ব অসহায় ১ হাজার ৩শ ৯০টি হতদরিদ্র পরিবার। এক যুগ বা তার চেয়েও বেশী আগে নির্মিত বসতী স্থাপনাগুলো সময়ের ব্যবধানে এখন জরাজীর্ণ এবং বাস অযোগ্য হয়ে পরেছে। দীর্ঘ সময়ে সরকারি ভাবেও ঘরগুলো সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দারিদ্রের কবলে পতিত অসহায় মানুষগুলোর এসব ঘর সংস্কারের সামর্থ কখনো হয়ে ওঠেনি। এমন বাস্তবতা দেখে ইউএনও নওরীন হকের উদ্যোগে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে আশ্রয়ন প্রকল্পের জরাজীর্ণ ১ হাজার ৩শ ৯০টি ঘর পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ গ্রহনের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হলে প্রথম পর্যায়ে চরফ্যাসনে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃনির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক বলেন, ভাসমান দরিদ্র মানুষের আশ্রয় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে টিনের ছাউনী আর টিনের বেরা বেষ্টিত এসব ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো এতো জরাজীর্ণ যে তা সংস্কারের উপযোগী নয়। তাই আশ্রিত পরিবারগুলোর দুর্দশা লাঘবের কথা ভেবেই ঘরগুলো মুজিববর্ষের ঘরের আদলে পুনঃনির্মাণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর করা হলে প্রথম ধাপে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃ নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরগুলো পুনঃনির্মাণে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রত্যেকটি ঘর পুনঃনির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। সেমি পাকা এসব ঘরে থাকছে রঙ্গিন টিনের ছাউনি। বারান্দাসহ ২টি কক্ষ, রান্নাঘর এবং একটি সংযুক্ত শৌচাগার। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং পাকা ঘাটলাসহ পুকুর। ঘর পুনঃনির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর উপ-সচিব মো. আরিফুল ইসলাম সরদার জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে আশ্রীতদের জন্য ঘর গুলো পূর্ণঃনির্মান করে বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। পরবর্তীতে এসব ঘরের বাসিন্দাদের সরকারী নানান সুযোগ সুবিধার আওয়াতায় আনা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com