রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে বিএনপির নেতা কর্মীদের কাজ করতে হবে বনশ্রী আফতাব নগর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি বাবলু পন্ডিত, সম্পাদক জহুরুল ইসলাম ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ১৫তম সভা মহানগরী জোন আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাইলস্টোন কলেজের কৃতিত্ব স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব

সন্তোষ রবিদাসের মা পেলেন ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ সম্মাননা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪

চা শ্রমিক মায়ের ছেলে সন্তোষ রবিদাস। পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে। ২০২২ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘মায়ের নামটা কেটে দিল’ শিরোনামে একটি পোস্ট দেন। এই পোস্টটি সে সময় আলোড়ন সৃষ্টি করে। পোস্টে তিনি লিখেছিলেন : ২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ মা হিসেবে উপজেলায় মাকে সম্মাননা দেওয়া হবে বলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানানো হয়। পরে মায়ের নামটা কেটে দেওয়া হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মা আমার চা শ্রমিক। স্টেজে উঠে নাকি কিছু বলতে পারবেন না। তাই নাম কেটে দিয়েছে! মা এখনো প্রতিদিন সকালে একটা বোতলে লবণ, চা-পাতা ভর্তা, আটার রুটি, সামান্য ভাত পলিথিনে ভরে নিজের পাতি তোলার গামছায় মুড়িয়ে নিয়ে দৌড়ান চা-বাগানে। আট ঘণ্টা পরিশ্রম করে মাত্র ১২০ টাকা মজুরি পান! এই মজুরিতে কীভাবে চলে একজন শ্রমিকের সংসার? আজকাল মায়ের শরীর আর আগের মতো সায় দেয় না। বলেন, ‘তোর চাকরি হইলে বাগানের কাজ ছেড়ে দেব।’ আমি এখন সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছি….!
মায়ের সেই অপেক্ষার শেষ হয়েছে। রবিদাস এখন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিলেট লালদীঘির পাড় শাখায় রিলেশনশিপ অফিসার হিসেবে কর্মরত। এবার কিন্তু মায়ের নামটা কাটা পড়েনি। মা চা-শ্রমিক কমলি রবিদাস ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪’ দিবসে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।
এই মায়ের সংগ্রামের চিত্র খুঁজে পাওয়া যায় ছেলের লেখায়। সেখান থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার শমসেরনগরে ফাঁড়ি কানিহাটি চা-বাগানের এক চা শ্রমিক পরিবারের ছেলে রবিদাস। জন্মের ছয় মাসের মাথায় বাবাকে হারান। মা চা-বাগানের শ্রমিক। তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। সেই সময় পটের দুধ খাইয়ে, অন্যের বাসায় রেখে মা কমলি রবিদাস যেতেন বাগানে কাজ করতে। ২০০৭ সালে রবিদাস যখন ক্লাস ফাইভে তখন মায়ের মজুরি হয় ৮৮ টাকা। এক দিন মা ছেলেকে বাজারে গিয়ে পাঁচ কেজি চাল নিয়ে আসার কথা বলেন। সেই চাল দিয়ে এক মাস চলেছে তাদের। রবিদাস লিখেছেন : পরদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি মা চাল ভাজলেন। পলিথিনে সেই ভাজা চাল, আটার রুটি আর লাল চা একটা বোতলে ভরে গামছায় প্যাঁচালেন। আর আমাকে আটার রুটি ও লাল চা দিলেন। দুপুরে খেতে গিয়ে দেখি শুধু পেঁয়াজ, শুকনা ভাত, তেল আর লবণ আছে। তা দিয়ে মেখে খেলাম। রাতেও কোনো তরকারি ছিল না। তখন পাশের বাসার কাকু আমাকে ডেকে কুমড়া আর আলু দিয়েছিলেন, যা দিয়ে আমরা দুইটা দিন পার করেছিলাম। তখন কুপি বাতির আলোয় পড়তাম। মা আগেই রেডি করে দিতেন বাতি। তেল শেষ হয়ে গেলে আর পড়া হতো না। দোকানদার বাকিতে তেল দিতেন না। পঞ্চম শ্রেণির পর ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুলে পাঁচ বছরের জন্য ফ্রি পড়ালেখার সুযোগ পাই। মা অনেক খুশি হয়েছিলেন। তখন তাঁর সামান্য আয়ের একটা অংশ থেকে আমাকে টিফিন খাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে ৭০-৮০ টাকা দিতেন। ২০১৩ সালে বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হই। তখন মা ১০২ টাকা করে পেতেন। এই সময়ে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কিস্তি তুলে আমার ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর। মায়ের হাতে টাকা নেই। তখন এইচএসসির রেজিস্ট্রেশন চলছিল। মা ৫০ টাকার একটা নোট দিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেছিলেন, ‘কেউ ধার দেয়নি রে বাপ!’
কলেজের এক শিক্ষকের কাছ থেকে ধার নিয়ে সেবার রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়েছিলাম। এইচএসসির পর ভর্তি পরীক্ষার কোচিং। মা তখন আবার লোন নিলেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে। লোনের কিস্তির জন্য এই সময় মা বাড়ি থেকে অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বিনিময়ে পেতেন ৩০০ টাকা। আমি জানতাম ঘরে চাল নেই। শুধু আলু খেয়েই অনেক বেলা কাটিয়েছেন মা। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলাম। মা তখন কী যে খুশি হয়েছিলেন! কিন্তু ভর্তির সময় যত ঘনিয়ে আসছিল, মায়ের মুখটা তত মলিন দেখাচ্ছিল। কারণ চা-বাগানে কাজ করে যা পান তা দিয়ে তো সংসারই চলে না। ভর্তির টাকা দেবেন কোথা থেকে? পরে এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহায়তা করল। বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশনি করেই চলতাম। হলের ক্যান্টিনে ২০ টাকার সবজি-ভাত খেয়েই দিন পার করেছি। অনেক দিন সকালে টাকার অভাবে নাস্তাও করতে পারিনি। দুর্গাপূজায় কখনো একটা নতুন জামা কিনতে পারিনি। লিখেছেন রবিদাস। রবিদাসের সেই দুর্দিন ফুরিয়েছে। তিনি বলেন, আজকের এই পর্যায়ে আসার মূল কৃতিত্বের দাবিদার আমার মা। এ ছাড়া আরো আছেন আমার শিক্ষক, সহপাঠী, ভাইবোন ও শুভকাঙক্ষীরা।
চা শ্রমিক অন্য মায়েরা কেমন আছেন? জানতে চাইলে রবিদাস বলেন, এখন চা শ্রমিকদের জীবনমান আগের মতোই বিরাজমান। জন্ম থেকেই অমরা পিছিয়ে পড়া সংগ্রামী জাতি। আমাদের আন্দোলনের ফলে যে মজুরি বেড়েছে তা আজকের নিত্যপণ্যের বাজারে গেলে হতাশার। কারণ ১৭০ টাকা মজুরি দিয়ে একটা সংসার চলে না।
চা শ্রমিকদের সন্তানদের সঠিক শিক্ষাদান, প্রযুক্তিগত শিক্ষাপ্রদান, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রয়োজন উপবৃত্তি। আশাকরি আমাদের এ সব সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশের বিভিন্ন দাতা সংস্থা এগিয়ে আসবে। বলেন সংগ্রামী মায়ের উদ্যমী ছেলে রবিদাস। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচ জয়িতাকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন। সম্মাননা পেয়েছেন ময়মনসিংহের আনার কলি, রাজশাহীর কল্যাণী মিনজি, সিলেটের কমলি রবিদাস, বরগুনার জাহানারা বেগম ও খুলনার পাখি দত্ত হিজড়া।- রাইজিংবিডি.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com