রাজধানীর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বাদ জোহর জানাজা নামাজ শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে। শহীদ সলিম উল্লাহর ছেলে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ এবং নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ বাংলাদেশে সংস্কৃতি অঙ্গনে খুবই চেনা মুখ। প্রখ্যাত এ শিল্পী বুধবার সন্ধ্যার দিকে মারা যান। বাসার একটি কক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। পুলিশের ধারণা, আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন এই শিল্পী।
বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্র সংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা সাদি মহম্মদ একাধারে শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার ছিলেন। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। অসংখ্য সিনেমা ও নাটকে প্লেব্যাক করেছেন সাদি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক। ২০১২ সালে সাদি মহাম্মদকে আজীবন সম্মাননা দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার দেয়।
এমন মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে নীপা বলেন, ‘ওনার মা মারা যাওয়ার পর থেকেই একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান। ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিল। বুধবার রোজা রাখলেন। ইফতারও করলেন। এরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছি।’ এ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতলের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. স্বাগতিক লোহানী বলেছেন, ‘তার গলায় দাগ পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে নিজ কক্ষ থেকে তাকে উদ্ধার করেন পরিবারের সদস্যরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালে আনা হলে আমরা তাকে মৃত পাই। প্রাথমিক সিদ্ধান্তে আমরা এটাকে আত্মহত্যা হিসেবে মনে করছি। পরিবারের সদস্যরা তাকে নিজ কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় পেয়েছেন বলেও জানান এই চিকিৎসক।
সাদি মহম্মদের ব্যক্তিগত সহকারী জানান, বেগুনি-মুড়ি দিয়ে ইফতার শেষে নিজ রুমে যান তিনি। বেশ কিছুক্ষণ রেয়াজ করেন তানপুরা নিয়ে। যেটা তিনি প্রায় সময় করে থাকেন। এরপর অনেক সময় চুপচাপ থাকেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা ডাকাডাকি করলে সাড়া মিলছিল না। তারা গিয়ে দেখেন দরজা বন্ধ। পরে দরজা ভেঙে সাদিকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন তারা। সাদি মহম্মদের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাপাতালে ছুটে এসেছেন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের পরিবারের কিছু সদস্য বিদেশে অবস্থান করছেন। সবার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।