খেজুর স্বাস্থ্যসম্মত ভিটামিনসমৃদ্ধ একটি খাবার। দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যঘাটতির চাহিদার পরিপূরক জাদু ও বিষ প্রতিরোধক খাবার। পবিত্র রমজানুল মুবারকে সারা দিনের রোজার ক্লান্তি শেষে ইফতারিতে এক দুটো খেজুর খেলে দুর্বলতা কেটে যায়। ইফতারিতে খেজুর খাওয়া সুন্নত। রাসূলে কারিম সা: খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। হাদিস শরিফেও খেজুর দিয়ে ইফতারি করার নির্দেশ রয়েছে।
খেজুর দিয়ে ইফতার করার ব্যাপারে হাদিস : হজরত সালমান ইবনে আমির রা: সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। কেননা, তাতে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে।’ (মিশকাত-১৮৯৩)
অন্য হাদিসে রয়েছে- আনাস বিন মালেক রা: বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেঁজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি-৬৩২)
শুধু রমজানই নয় অন্যান্য দিনেও খেজুর শরীরে বিশেষ পুষ্টিদানকারী খাবার। হজরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা: বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম) সুতরাং পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং হাদিসের নির্দেশনায় খেজুর মানুষের জন্য অনেক উপকারী।
খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা : ১. কয়েকটি খেজুরই সাময়িক ক্ষুধা নিবারণে সহায়তা করে। ২. খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকায় দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী, সামান্য পরিশ্রমেই যারা ক্লান্ত হয়ে যায়, ইফতারে খেজুর খেলে তাদের দুর্বলতা কেটে যায় এবং রোজা রাখা সহজ হয়। ৩. শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের স্বাভাবিকভাবে রোজা রাখা সহজ হয়। ৪. খেজুর হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বলবর্ধক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ক্ষুধামন্দা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে খেজুর বিশেষ উপকারী। ৫. খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি, অ্যাজমা ও গ্যাসের জন্যও উপকারী। ৬. রোজাদারের পেট খালি থাকায় শরীরে গ্লুকোজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খেজুর সেটি দ্রুত পূরণে সাহায্য করে।
কথিত আছে, বছরে যতগুলো দিন আছে খেজুরে তার চেয়েও বেশি গুণ রয়েছে। খেজুর যেমনি সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর ফল। খেজুর খাওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ অনেক। যেমন খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রচুর। খেজুরে সুগারের পরিমাণ এত বেশি থাকে যে, এক কামড়েই অনেকটা এনার্জি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, গ্লুকোজ, ম্যাগনেশিয়াম ও সুক্রোজ থাকে। যে কারণে খেজুর খাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে এনার্জি বেড়ে যায়। সারা দিন উপোস করে শরীরে ক্লান্তি আসে, তা দূর করে এনার্জি জোগাতে সাহায্য করে খেজুর।
রোজা রাখলে সাধারণত অ্যাসিডিটি হয়। যার থেকে অস্বস্তি হতে থাকে। খেজুর শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে অস্বস্তি কমায়। সারা দিন না খেয়ে থাকলে খাওয়ার সময় বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলে এর মধ্যে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে। তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে তা পৌষ্টিকতন্ত্রের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে। খেজুর শরীরে উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে হজম ভালো হয়। লেখক : কবি ও গীতিকার।