রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন

তরমুজের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও ক্রেতা কম মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

শামীম আহমেদ বরিশাল
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪

প্রতিবছর রমজান এলেই বরিশালের ব্যবসায়ীদের কাছে তরমুজ যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ হয়ে দাড়িয়ে যায়। যা ঘসলেই লাখ টাকা বাড়তি মুনাফা। আর বাড়তি মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা অল্পদিনেই আ্গংুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। সমগ্র মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজান এক সংযমের মাস হলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের কাছে বাড়তি মুনাফার মাস। রোজাদারদের ইফতারের তালিকায় তরমুজ রসালো ও তৃপ্তিকর আল্লাহতায়ালার অন্যতম নেয়ামত। এরমধ্যে কিছু অসৎ ব্যবসায়ীদের কারণে ন্যায্য মূল্যে মিলছে না এই দেশীয় জনপ্রিয় ফলটি। সারা বিশ্বে রমজান মাসে যখন পণ্যের দাম কমে, ঠিক উল্টো চিত্র আমাদের দেশে। এর ব্যতিক্রম নয় বরিশালও। পিছ বা শতক হিসেবে তরমুজ কিনে কেজি হিসেবে বিক্রি করে বেশ কয়েক বছর ধরে বরিশালের তরমুজের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল বাড়তি মুনাফা লোভী একটি ব্যবসায়ী চক্র। অবশ্য সেই অবস্থান থেকে সরে এসে এবার বাধ্য হয়ে পিছ হিসেবে বিক্রি করতে হচ্ছে তরমুজ। জনগণের সচেতনতা, সরকারের নির্দেশনা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের কঠোর অভিযানের কারণে এখন কেজির পরিবর্তে পিছ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। এতে ভাটা পড়েছে তাদের তরমুজ ব্যবসায়। এদিকে রোজাদারদের জন্য আল্লাহ’র বাড়তি রহমত হিসেবে যুক্ত হয়েছে বৈরী আবহাওয়া। গত দুই দিনের বৈরী আবহাওয়ায় তাপমাত্রা কম থাকায় তরমুজের বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা কমেছে, যে কারণে দাম নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে। দু’দিন আগেও যে তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকায়, একই তরমুজ এখন বিক্রি হচ্ছে দেড়শ থেকে ২শ টাকায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরও কম। কেজিতে হিসেব করলে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি পড়ছে। তবুও ক্রেতা মিলছে না। ইতিমধ্যে পঁচতে শুরু করেছে তরমুজ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট সাইজের তরমুজ জোড়া বিক্রি হচ্ছে একশ টাকায়। হিসেব করলে যার কেজি পড়ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট এলাকার কৃষক মো: হারুন জানান, তরমুজের শতক চলে ১২ হাজার টাকা। ৬ থেকে ৮ কেজি ওজন হয়ে থাকে গড়ে। তাতে তার দাম পড়ে পিছ ১২০ টাকা। তবে এই দামে কেজি হিসেব করলে ব্যবসায়ীদের গড় ক্রয় মূল্য কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০টাকা। রাঙ্গাবালীর আরেক চাষী মোসলেহ উদ্দিন জানান, ছোট সাইজের তরমুজের শতক ৬ হাজার টাকা, তাও আড়ৎদাররা কিনছে না। পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালাইয়া থেকে ট্রলারে তরমুজ নিয়ে আসা চাষী আব্দুস সাত্তার জানান, ‘গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে’। ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকার কারণে তরমুজ বাজারে ধস নেমেছে বলে তিনি মনে করেন। নিয়ম অনুযায়ী বিক্রেতারা তরমুজ যেভাবে কিনবেন, সেভাবেই বিক্রি করতে হবে। কেউ পিছ হিসেবে কিনলে তা কেজি দরে বিক্রির সুযোগ নেই। যিনি কেজি হিসেবে কিনবেন, তিনি কেজি হিসেবেই বিক্রি করবেন। তবে এর সপক্ষে পাকা ভাউচার থাকতে হবে। তা না হলে শাস্তির বিধান রয়েছে। যদিও বছরের পর বছর এই নিয়মের তোয়াক্কা করেনি অসাধু ব্যবসায়ীরা। এদিকে কয়েকটি ফলের দোকানে সরজমিনে গিয়ে এখনও বেশী দামে তরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেছে, বেশী দামে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে হাওলাদার ফল ভান্ডার এর ব্যবসায়ী মো: আরাফাত হোসেন জানান, আমাদের এখনও একটু বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ আমাদের তরমুজগুলো আগে বেশী দামে কেনা। এজন্য দাম একটু বেশী। বরিশাল জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে বার বার সতর্ক করে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অভিযান ও জরিমানা আদায় করেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অভিযানের সময় কিছুটা দাম কমলেও অভিযান শেষে ফের আগের চিত্রে ফিরে যায় বাজারের পরিস্থিতি। এদিকে একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাইকার ও আড়ৎদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হন চাষীরা। বিক্রি করেন ক্ষেত বা জমির পরিমাপ আকারে। তবে সব তরমুজ চাষীদের বিষয় একই নয়। আড়ৎ’র ব্যবসায়ীরা জানান, এবারের তরমুজ কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছিল, তবে এখন দাম চাইলেই ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন। বিক্রি করতে না পারায় মজুদকৃত তরমুজ পঁচতে শুরু করেছে। ফলে হুমকির মুখে লাখ লাখ টাকার মূল ধন। তরমুজ কিনতে আসা সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের দেশেই চাষ হওয়া জিনিসের যদি এত দাম হয় তাহলে আমরা কিভাবে কিনে খাব? ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও জনসেচেতনাতা বৃদ্ধ পাওয়ায় বর্তমানে দাম কিছুটা কমেছে। একটা তরমুজ সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ টাকা হলে সেটা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু জাফর মজুমদার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে জানান, বাজার মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে আমাদের কয়েকটি টিম অভিযান পরিচালনা করছে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে দ্রব্যমূল্য রাখতে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে নই। তবে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ভোক্তাদের জিম্মি করার কোনো সুযোগ নেই। জনসাধারন ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com