শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

নড়িয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

মঞ্জুুরুল ইসলাম রনি শরীয়তপুর
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪

নড়িয়া উপজেলায় ২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। তার মধ্যে ১১টি ভবনের নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে উপজেলার মঙ্গলসিদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন হস্তান্তরের ১১ দিন পর থেকেই ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি এবং ফ্লোরের প্লাস্টার উঠে যাওয়ার কারণে নতুন ভবন ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবনেই শিশুদের ক্লাস করানো হচ্ছে। অপর ১০টি বিদ্যালয়ে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা। জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে নড়িয়া উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন ও পূর্বের ভবন পুনরায়নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে যোগপাট্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেজংগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রোকন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মালতকান্দি অন্ধার মানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর শিরঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মঙ্গলসিদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেলীপাড়া হাই সংযুক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিগম্ভরপট্টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায়লসহ ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মঙ্গলসিদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা হন্তান্তর করে।হন্তান্তর করার ১০ দিনের মাথায় নতুন ভবনের সব কক্ষের ফ্লোর ভেঙে বালু বের হয়ে যায়। ১১টি দরজার হুক লাগানো হয়নি, দুটি জানালা ভাঙা, তৃতীয় তলার ছাদের পিলার দিয়ে পানি চুইয়ে পড়া, পুরো বিদ্যালয়ের রঙ নি¤œমানেরসহ নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছেন ঠিকাদার। এতে আতঙ্কিত হয়ে শিক্ষকরা তাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ফের জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনে নিয়ে ক্লাস শুরু করেন। একই অভিযোগ উপজেলার নির্মাণাধীন ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ মো. ইকবাল মনসুর ও উপজেলা প্রকৌশলী শাহাব উদ্দিন খান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর মঙ্গলসিদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ঠিকাদার মোক্তার চৌকিদার নামসর্বস্বভাবে চলতি মাসের শুরুতে পুর্নরায় মেরামত করে দেন। তাও কয়েকদিন পর আবার মেরামতের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয় এবং পূর্বের অবস্থা হয়ে যায়। ১১টি স্কুলের শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগে আরও জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে উপজেলা প্রকৌশলী শাহাব উদ্দিন খানকে ম্যানেজ করে নি¤œমানের ইট, মানহীন দরজা-জানালার কাঠ ব্যবহার, রেলিংয়ে নি¤œমানের রড ব্যবহার করেছে। ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার পর অধিকাংশ ফ্লোরে গর্ত দেখা দিয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার শরীয়তপুর জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে। মঙ্গলসিদ্দি স্কুলের ঠিকাদার মোক্তার চৌকিদার বলেন, ‘আমি যদি শতভাগ কাজ করি তবুও উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) এবং উপজেলা প্রকৌশলীসহ অন্যদের সাড়ে তিন পার্সেন্ট টাকা দিতে হয়।’ উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আল মুজাহিদ দিপু বলেন, ‘শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরিদর্শনে গিয়ে এর সত্যতা পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই।’ উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আতিয়ার রহমানকে এ ব্যাপারে একাধিক বার ফোন করে পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ মো. ইকবাল মনসুর বলেন, ‘শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীকে পাঠিয়েছি। এরপর তারা কোনো রকম লেপন দিয়েছেন, এটা কোনো সমাধান নয়। কোনো কোনো স্কুলে কোনো রকম প্লাস্টার করেছেন ঠিকাদার, এটা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। এগুলো সুন্দর করে মেরামত করতে হবে।’ উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহাব উদ্দিন খান বলেন, ঠিকাদারদের কাজগুলো মূলত এসওরা তদারকি করেন।’ শরীয়তপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল ইসলাম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com