শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৯ অপরাহ্ন

পোশাক খাত: বেতন-বোনাস-বকেয়া দিতে গার্মেন্টস মালিকদের ধার-দেনা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বলা যায় এ খাতের হাত ধরেই ঘুরছে দেশের অর্থনীতির চাকা। সম্প্রতি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে খাতটি। বিশেষ করে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও অর্ডার কমে যাওয়া বাড়তি চাপে ফেলেছে মালিকদের। এছাড়া চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি- এ আট মাসে তৈরি পোশাক খাতের বড় রপ্তানির দেশগুলো থেকে কমেছে আয়। সব মিলিয়ে সংকটে রয়েছেন বলে দাবি মালিকদের।
এরই মধ্যে দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। সাধারণত ঈদের সময় আগের বকেয়া, বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হয় মালিকদের। তবে আসন্ন ঈদুল ফিতরে মালিকদের জন্য বেতন-বোনাস পরিশোধ করা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, ব্যাংক লোন না পাওয়ায় অনেক কারখানা মালিক ধার-দেনা করছেন বেতন পরিশোধের জন্য। এমন অবস্থায় যেভাবেই হোক ঈদের আগে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন তারা। অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, ২০ রোজার মধ্যেই শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ করতে হবে। ঈদের আগ মুহূর্তে বেতন-বোনাস পরিশোধের আশ্বাস দিলেও অনেক কারখানাই শতভাগ পরিশোধ করে না। ছুটি হয়ে যাওয়ায় শ্রমিদের দাবি-দাওয়া নিয়েও কোনো সুরাহা করা যায় না। তাই ঈদের আগ মুহূর্তে নয়, অন্তত ১০ দিন আগে দিলে তারা কাজের ফাঁকে সুবিধা মতো কেনাকাটা করতে পারবেন। এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ২০ রোজার মধ্যে পোশাক কারখানায় পূর্ণাঙ্গ বোনাস দিতে হবে। একই সঙ্গে এপ্রিল মাসের অর্ধেক বেতনসহ সব বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। এর মাধ্যমে শ্রমিক ভাই-বোনেরা নিজ পরিবারের সঙ্গে ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবে। আর কোনো সমস্যা যদি থেকেই যায়, তাহলে তার সমাধানও আগে থেকেই করতে হবে। কোনো শ্রমিক যেন হয়রানির শিকার না হয়।
কথা হয় মমসন সার্ভিসেস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুশরাত বারী আশার সঙ্গে। বিজিএমইএ’র এ পরিচালক বলেন, বর্তমানে পোশাক খাত কঠিন চ্যালেঞ্জে রয়েছে। কারখানায় ইউটিলিট খরচ বেড়েছে, বেতন বেড়েছে। ব্যাংক লোনের সুদহারও বেড়েছে। এরপরও মালিক চায় তার শ্রমিক সুখে থাক। কারণ শ্রমিককে নিয়েই কারখানা। তিনি বলেন, কোনো কারখানা ধ্বংস হোক এটা মালিক চায় না। এখন আমাদের সমস্যা হলো চতুর্মুখী। জাতীয় নির্বাচনের পর এখন অর্ডার মাত্র আসা শুরু হয়েছে। কারখানা মালিকরা জানুয়ারির অর্ডার নিতে পারেননি। এখনকার অর্ডারের অর্থ আসবে জুনে। কিন্তু সুদহার ও ইউটিলিটি খরচ বৃদ্ধি পরিস্থিতি কঠিন করে দিয়েছে উদ্যোক্তাদের। শ্রমিকের কারখানার প্রতি মায়া থাকতে হবে। তবে পরিস্থিতি আরও কঠিন সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা ব্যবসায়ীদের। তারা তৃতীয় পক্ষের কাজ করেন, অর্থ আনেন তারপর শ্রমিক পান। অনেক সময় পেমেন্ট পেতেও দেরি হয়ে যায় তাদের।
তবে এসব সমীকরণ বাদ দিয়ে ঈদের আগে ছোট-বড় বা সাব-কন্ট্রাকট, সব কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবি করেছেন শ্রমিক নেতারা। শ্রমিক নেতা মঞ্জুর মঈন বলেন, সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে যে কাজ করেন তিনি তো কোনো না কোনো বড় কারখানার কাজই করেন। তাদের রপ্তানিতে সারা বছর সাপোর্ট করে থাকেন। তাহলে সেই কারখানা বা তাদের সংগঠন কেন ঈদের বোনাস-বেতনের দায়ভার নেবে না?
এ নিয়ে আলফি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল, যিনি সাব-কনট্রাক্টে কাজ করেন, তিনি বলেন, আমরা বড় বড় কারখানার কাজ নিয়ে সেগুলো উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে ছুটির দিনে বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয় বা বেতন আগে, বোনাস পরে দেওয়া হয়। কারণ অনেক সময় পেমেন্ট পেতে হলে সেটাতো কিছুটা দেরি হয়ই। আমরা শ্রমিকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই এটার সমাধান করে থাকি। এবার সমস্যা হবে না আশা করছি।
পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, শ্রম মন্ত্রণালয় পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় যা গত ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা এ নিয়ে সেভাবে এগিয়ে আসেনি, পোশাকের দাম বাড়ায়নি। পণ্যের দাম বাড়েনি, উল্টো উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে ব্যাংক লোনের জটিলতাও রয়েছে। আবার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এ খাতের বড় গন্তব্যের দেশগুলোতে আয় কমেছে। এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি, বিজিএমইএ’র সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, এখন খুবই খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। ব্যাংক লোনের সুবিধা নেই, সুদহার বেড়েছে, পণ্য উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এখন কারখানা মালিকরা ধার-দেনা করছেন ঈদ বোনাস-বেতন-বকেয়া পরিশোধ করার জন্য। ব্যাংক সুবিধা না থাকায় যে যার মতো করে ধার করছেন শ্রমিকদের ভালো রাখতে। আমরাও মনিটর করছি সদস্য কারখানাগুলোকে। আশা করছি শতভাগ কারখানায় সময় মতো বেতন-বোনাস হবে।-জাগোনিউজ২৪.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com