বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টিকুমড়া চাষে নীলফামারীর কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। অন্যান্য সবজির তুলনায় এটির চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা কুমড়া চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয় চাষিরা জানান, আলুর ক্ষেতে বাড়তি ফসল হিসেবে কুমড়া চাষকে তারা লাভজনক হিসেবে দেখছেন। কারণ, আলুর জমিতে প্রচুর জৈব সার থাকায় বিনা খরচে কুমড়া ঘরে তোলা যায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এটি (মিষ্টিকুমড়া) একটি বাড়তি ফসল। সার নেই, সেচ নেই, নিড়ানির খরচ নেই তবুও বিঘায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ পর্যন্ত কুমড়ার ফলন হয়। তাই কুমড়া চাষ পুরোটাই লাভজনক একটি ফসল বা সবজি। এর ঝরে পড়া পাতা ও ফুল জমিতে জৈব সারের কাজ করে। স্বল্প সময়ে উৎপাদিত এই সবজির চাষ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। গ্রামের অনেক কৃষক লাভবানও হয়েছেন।
জেলার জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আলুর জমিতে ব্যাপক পরিমাণে কুমড়ার চাষ হয়েছে। উপজেলার মাঠজুড়ে আলুর ক্ষেতে রয়েছে শত শত মিষ্টিকুমড়া। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। এখানকার উৎপাদিত কুমড়া স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এদিকে, নীলফামারী সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়াল খাতা গ্রামের কুমড়াচাষি ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এবার এক বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলাম। আলুর সারির (আইল) ফাঁকে ফাঁকে ওই জমিতে মিষ্টিকুমড়ার বীজ বপন করেছিলাম। সেখানে কুমড়ার ভালো ফলন হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০০ পিস বড় বড় কুমড়া বিক্রি করেছি। আরও ৫০০-৬০০ পিস বিক্রি করতে পারবো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কুমড়া বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো।’
একই এলাকার আরেক চাষি মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বছর ২২ শতাংশ আলুর জমিতে কুমড়া চাষ করেছি। এতে আমার সার, সেচ ও নিড়ানি কিছুই দিতে হয়নি। আবহাওয়া ভালো থাকায় জমিতে কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় পাইকাররা প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে এসে কুমড়া নিয়ে যায়। ইতোমধ্যে সাড়ে চারশ কুমড়া বিক্রি করতে পেরেছি। আরও ৫০০ পিস বিক্রি করতে পারবো। প্রতি পিস আকারভেদে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। আশা করছি, বাকি কুমড়া ঘরে তুলতে পারলে আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ বলেন, ‘নীলফামারী সদরে ৬০ হেক্টর জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে আলুর ক্ষেতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ হয়েছে। মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সঠিক পরিচর্যার পরামর্শ দিয়েছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা কুমড়া চাষে ভালো সফলতা পেয়েছেন। পাশাপাশি বাজারদর ভালো থাকায় তারা লাভবান হতে পারছেন।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, নীলফামারী জেলায় এবার ৪৭১ হেক্টর জমিতে কুমড়ার চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়াও বাজারে কুমড়া ও শাকসবজির দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।