শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন

বান্দরবানে ৬ উপজেলার সব ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৪

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে গত দুদিনে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সদর উপজেলা বাদে জেলার ছয়টি উপজেলার সব ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (৩ এপ্রিল) বান্দরবান সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ওসমান গণি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে রুমা সোনালী ব্যাংক এবং আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সব ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অপহৃত সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে উদ্ধারে কাজ চলছে
পুলিশের মহাপরিচালক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ‘দুষ্কৃতকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রুমা এবং থানচিতে ব্যাংক হামলার ঘটনার তদন্তে সাপেক্ষে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপহৃত ম্যানেজারকে উদ্ধারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।’
গতকাল বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে বান্দরবানের রুমায় ডাকাতি হওয়া সোনালী ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ টাকা লুট হয়েছে সাংবাদিকদের করা এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, তাকে (ম্যানেজার) দ্রুত উদ্ধারের মাধ্যমে কী পরিমাণ লুটপাট করা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। পাহাড়ে শান্তি বিনষ্টকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এর আগে আজ বুধবার সকালে রুমায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, পুলিশের ৮টি চীনা রাইফেল, ২টি এসএমজি ও ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী আনসারের ব্যবহৃত ৪টি শর্টগানসহ মোট ১৪টি বন্দুক ও ৩৮০ রাউন্ড গোলাবারুদ ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। রুমা শাখার ব্যাংক ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। ওই কর্মকর্তাকে কোথায় নিয়ে গেছে জানাতে পারেননি তারা।
এসময় ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি গোলাম মাহফুজুর রহমান, সোনালী ব্যাংকে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক(জিএম) মুছা খান, সোনালী ব্যাংকে এসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) ওসমান গনি, বান্দরবান পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন, বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসেন মো. রায়হান কাজেমী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহ্ আলম (সদর সার্কেল), সহকারী পুলিশ সুপার (রুমা সার্কেল) মো. জুনায়েদ জাহেদীসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ছিলেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৮০-১০০ জন সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা পাঁচ-ছয়টি দলে বিভক্ত হয়ে গ্রিল ভেঙে ব্যাংকের লকারে থাকা টাকা লুট করার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীর ব্যবহৃত ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় তারা। সেইসঙ্গে ওই শাখার ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বর্তমানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ব্যাংকটি তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল জোড়দার করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারাবি নামাজের সময় শতাধিক কেএনএফ সদস্য চতুর্দিকে ঘেরাও করে সবার মোবাইল কেড়ে নেন। পরে নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্র লুট করে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এখনো তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মারধর শিকার এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অস্ত্রসহ প্রায় ৮০-১০০ জন সন্ত্রাসী এসে আশপাশের পাহাড় ও ভবনগুলো ঘেরাও করে। পরে ব্যাংকের সামনে তাকে ছয়জন অস্ত্রধারী সদস্য মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যাংকের ভেতরে নিয়ে যায়। ব্যাংক কর্মকর্তা, আনসার ও পুলিশ সদস্যদের মারধর করা হয়।
মারধরের শিকার হয়েছেন ব্যাংকের ক্যাশিয়ার উথোয়াইচিং মার্মা। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা ব্যাংকে ঢুকে ভল্টে থাকা টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ভল্ট ভাঙতে না পেরে এই শাখার ম্যানেজার ও আমাকে খুঁজতে শুরু করে। পরে আমাকে উপজেলা ঢরমেটরি থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যাংকে নিয়ে আসে। পকেটে থাকা দেড় হাজার টাকাও হাতিয়ে নিয়ে যায়। অন্য সদস্যরা ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে মসজিদ থেকে ব্যাংকে নিয়ে আসে। সবাইকে একরুমে বন্ধ করে ভল্টে থাকা টাকা লুটপাট করা চেষ্টা করে। দুর্বৃত্তরা টাকা নিতে পেরেছে কি-না এখনো জানতে পারিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com