সিরিয়ায় কন্স্যুলেটে ইসরাইলের হামলায় ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান। তারা এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। বলেছে, এর পূর্ণ দায় নিতে হবে ইসরাইলকে। দামেস্কে ওই কন্স্যুলেটে আকাশ থেকে বোমা হামলা করে পুরো গুঁড়িয়ে দেয় ইসরাইল। এতে ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের শীর্ষস্থানীয় দু’জন কমান্ডারসহ নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩ জন। ইরান বলেছে, এর উচিত জবাব দেয়ার অধিকার আছে ইরানের। মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মিটিংয়ে এমন ঝাঁঝালো বক্তব্য দিয়েছেন তেহরানের ডেপুটি পার্লামেন্ট প্রতিনিধি জাহরা এরশাদি। তিনি বলেন, ইরান বিবেচ্য সংযম প্রদর্শন করছে। কিন্তু আমাদের ক্ষমা করে দেয়ার একটা সীমা আছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ। গত সোমবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কন্স্যুলেটে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল।
এতে ইরানের দু’জন জেনারেল, লেবাননের যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর একজন সদস্য সহ নিহত হন ১৩ জন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৬ জন সিরিয়ার নাগরিক। ওই হামলায় ভবনটি পুরো মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এ হামলার নিন্দা জানাতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান এরশাদি। তিনি বলেন, যে ঘটনা অপরাধকেও অতিক্রম করে, প্রতিনিধি, কূটনৈতিক ও কন্স্যুলার ভবনের নীতি লঙ্ঘন করে, তার বিরুদ্ধে আপনারা নিন্দা জানান। গাজার যুদ্ধকে উস্কানি দেয়া এবং একে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে ইসরাইল- এমন অভিযোগ করেন তিনি। তারা সেখানে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে এবং যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে মানুষকে অনাহারে রাখাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আর জবাবদিহিতা এড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের প্রাথমিক উদ্বেগ হলো তার বর্ণবাদী নীতি, জাতিনিধন, গণহত্যা, এবং যেকোনো মূল্যে গাজায় সামরিক শক্তি এগিয়ে নেয়া। ক্ষোভের সঙ্গে এরশাদি বলেন, জবাবদিহিতার অভাব ও নিরাপত্তা পরিষদের নিষ্ক্রিয়তায় শুধু ইসরাইলের এই শাসকগোষ্ঠী বিনা জবাবদিহিতায় আইন লঙ্ঘন করছে ও করতে উৎসাহিত হচ্ছে। এর দায় যুক্তরাষ্ট্রেরও বলে তিনি মন্তব্য করেন। জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, ইরানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ওয়াশিংটন। সেটা হলো কন্স্যুলেটের এই হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যোগসূত্র নেই। হামলার আগে এ বিষয়ে কোনোভাবে জানতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। একটি বিষয় পরিষ্কার। তা হলো এ অ লে উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়িয়ে যাওয়া উচিত ইরান ও তার অংশীদার গ্রুপের। ৭ই অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বার বার ইরানকে সতর্ক করেছে, এই উত্তেজনাকে যেন তারা আরও উস্কানি না দেয়। রবার্ট উডের অভিযোগ, সেই সতর্কতাকে উপেক্ষা করেছে ইরান।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা এবং কিছু সশস্ত্র গ্রুপ, যাদেরকে সিরিয়া ও ইরানের শাসকগোষ্ঠী মদত দেয়, তারা ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থাপনা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হামলার ষড়যন্ত্র করতে ব্যবহার করে সিরিয়াকে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সদস্যদের সুরক্ষিত রাখতে কোনো দ্বিধাবোধ করবে না যুক্তরাষ্ট্র।
এ সময় তিনি গাজায় ত্রাণকর্মে নিযুক্ত ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের গাড়িতে ইসরাইলের আকাশ থেকে হামলায় বেদনা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এই জরুরি মিটিং আহ্বান করেছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া। তিনি বলেন, দামেস্কে ইরানের কন্স্যুলেটে ইসরাইলের হামলায় কঠোর নিন্দা জানান। বলেন, এর মধ্য দিয়ে ইসরাইল তার হামলা সিরিয়া ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এই আগ্রাসনের মাধ্যমে ইসরাইল যুদ্ধের উস্কানিকে আরও বিস্তৃত করতে চাইছে। তাদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অগ্রহণযোগ্য এবং তা বন্ধ করতে হবে। আমরা পশ্চিম জেরুজালেমকে অনুরোধ করবো সিরিয়ায় ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে তাদের এই উস্কানিমূলক তৎপরতাকে এড়িয়ে যেতে। নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সতর্ক করে বলেন, যদি কোনো আকাশপথের হামলায় অন্য কোনো দেশে কূটনৈতিক মিশনে হামলা হয়, তাহলে কি তারা তার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হবেন?
গাজা যুদ্ধকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জোরালো এই তৎপরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্লোভেনিয়া। দেশটির কূটনীতিক স্যামুয়েল জোগার সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।