শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন

ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদের আগ মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ। মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ইলিশ মাছ ধরা পড়ায় জেলে পল্লীতে ফিরেছে কর্মব্যস্ততা। মৎস্য বিভাগ মনে করছেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ও ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালন করার সুফল পাচ্ছেন জেলেরা। গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ অ লের অন্যতম মৎস্য বন্দর আলীপুর ও মহিপুরে অন্ততপক্ষে ২ হাজার মণ ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে। ফলে উপকূলীয় জেলেপল্লীর অধিকাংশ পরিবারে খুশির জোয়ার বইছে। গতকাল শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার হাজী আহমেদ কবিরের মালিকানাধীন এফবি আল্লাহর দয়া-১ নামের একটি মাছ ধরা ট্রলার ১৫০ মণ ইলিশ নিয়ে মৎস্য বন্দর আলীপুর ঘাটে ফিরে এসেছে। তবে বরফ না থাকায় ২৫ মণ ইলিশ মাছ পচে গেছে। বাকি ১২৫ মণ ইলিশ কুয়াকাটার মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম খানের মালিকানাধীন খান ফিশে নিলামের মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকা বিক্রি করা হয়েছে।
ট্রলারের মাঝি সূর্য নিয়ে জানান, দুদিন সমুদ্রে ফিশিং করে এই মাছগুলো তারা পেয়েছেন। ট্রলারে থাকা বরফে ১৭ হাজার পিস ইলিশ সংরক্ষণ করতে পেরেছেন। ওজন করে তা ১২৫ মণ ইলিশ পাওয়া গেছে। বাকি ২৫ মণ ইলিশ মাছ জালসহ তারা ঘাটে নিয়ে এসেছেন। ঘাটে পৌঁছে মাছগুলো জাল থেকে ছাড়িয়ে নিতে বিলম্ব হওয়ায় পচে গেছে। মাছগুলো তাজা থাকলে আরও ১০ লাখ টাকা বেশি বিক্রি হতো। তিনি আরও বলেন, আমার ট্রলারের জাল নিরাপদ রাখা এবং ইলিশ সংরক্ষণের জন্য অন্য একটি ট্রলারকে জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে নিতে বলেছি। ওই ট্রলারটি অন্তত ৭ হাজার মাছ ছাড়িয়ে নিয়েছে। এর আগে শুক্রবার দুপুরে আলীপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী ইউসুফ হাওলাদারের মালিকানাধীন এফবি তামান্না ও এফবি রাইসা নামের দুটি মাছ ধরা ট্রলার ১৪০ মণ ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরেছে। এফবি তামান্না ট্রলারের ৭৮ মণ ইলিশ ২৫ লাখ টাকা এবং এফবি রাইসা ট্রলারের ৬০ মণ ইলিশ ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এফবি তামান্না টলারের মাঝি ইউনুস মিয়া বলেন, সমুদ্রে এই মুহূর্তে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। তবে অসংখ্য কাঁকড়া জালে পেচিয়ে পড়ার কারণে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। যার কারণে মাত্র দুদিন ফিশিং করে ঘাটে ফিরে এসেছি। জাল ঠিক করতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে। তাই ঈদের আগে আর সমুদ্রে যাওয়া হচ্ছে না। এফবি রাইসা ট্রলারের মাঝি নেছার উদ্দিন বলেন, তুলনামূলক কম গভীর এলাকায় প্রচুর ইলিশ মাছ আছে। তবে অতিরিক্ত কাঁকড়া থাকার কারণে মাছ ধরতে বেগ পেতে হয়েছে। যেসব ট্রলারের জেলেরা কাঁকড়ার কারণে আমাদের থেকে আরও গভীর সমুদ্রে গিয়েছে, তারা মাছ পায়নি। এর আগে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার আলীপুরের ফাইভ স্টার মৎস্য আড়দের দুটি ট্রলার ২০০ মণ মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরে এসেছিল। এসব ট্রলারের জেলেরা জানিয়েছেন, যারা কম গভীর সমুদ্রে ফিশিং করেছেন, তারা কমবেশি সবাই মাছ পেয়েছেন। ৫ থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত বিক্রি করেছে অনেকগুলো ট্রলার। যেসব ট্রলার বেশি গভীর সমুদ্রের ফিশিং করেছে তারা কোনও মাছ পায়নি। তাদের তেল ও বাজার খরচ লোকসান হয়েছে। উপকূলের বিভিন্ন মৎস্য পল্লীতে খোঁজ দিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহখানেক ধরে সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরা পড়ছে। কলাপাড়া উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার জেলে পরিবারে ঈদ উদযাপনের দুশ্চিন্তা কেটে গেছে।
উপজেলার ধোলাই মার্কেট এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সমুদ্রে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য প্রজাতির প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। সামনের বর্ষা মৌসুমে আরও বেশি মাছ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মেসার্স মনি ফিশের ম্যানেজার হাসান মাহমুদ বলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ায় জেলে পল্লীতে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। মৎস্য সংশ্লিষ্ট সকল পরিবারে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালন হওয়ায় আগের চেয়ে সব মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধ মান্য করার সুফল পাচ্ছেন উপকূলের জেলেরা। বর্তমানে সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। আশা করছি, এভাবে আগামী আষাঢ় মাস পর্যন্ত ইলিশ মাছ ধরা পড়বে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com