স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তরিত করতে কাজ করছে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার। তারই অংশ হিসেবে শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে কারিগরি সহায়তা, প্রণোদনাসহ পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন। এরই ফলশ্রুতিতে প্রতিবছরই জেলায় বাড়ছে উচ্চ মূল্যের ফসল ভুট্টার আবাদ। স্বল্প ব্যয় ও কম ঝুঁকিতে ভালো ফলন পাওয়া যায় বলে কৃষকরাও বেশ আগ্রহী। ভুট্টা আবাদে কৃষকের বিঘায় খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। কোন প্রাকৃতিক সমস্যা না হলে বিঘায় ফলন হয় ৩৫ থেকে ৪০ মণ। গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় ২৮৮ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বাসস’কে বলেন, কৃষি বান্ধব সরকারের উদ্যোগ খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তরিত করতে প্রণোদনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলে স্বল্প ব্যয় ও কম ঝুঁকিতে ভালো ফলন পাওয়া যায় বলে বাড়ছে উচ্চ মূল্যের ফসল ভুট্টার আবাদ। তাছাড়া গমের জমিতে ইদুরের আক্রমণের সুযোগ থাকলেও ভুট্টায় সুযোগ কম থাকায় কৃষকরাও ভুট্টা আবাদে ঝুঁকছেন। ভুট্টা আবাদে জমিতে সার, কীটনাশক ও সেচ কম লাগায় ভুট্টা কেবল কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবেই লাভবান করে না, ধান ও গমের চেয়ে ১১ শতাংশ আমিশ ও ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ভুট্টা বহুমুখী খাদ্যপণ্যে ব্যবহারসহ গো-খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ফলে গো-খাদ্য সংকট নিরসনসহ জ্বালানি সংকট সমাধানেরও সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ভুট্টা আবাদে কৃষকদেরকে লাভবান করতে আমরা মাঠ পর্যায়ে কারিগরি সহায়তাসহ সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছি। ভুট্টা সহজে আবহাওয়ার সাথে খাপ খেতে পারে বলে এক ফসলী জমিকে দুই ফসলী ও দুই ফসলী জমি তিন ফসলী জমিতে পরিণত হচ্ছে।
তাছাড়া ভুট্টা শিশু খাদ্য, কনফেকশনারী, গো-খাদ্য, পোলট্রি ও ফিস ফিডসহ বহুমুখী খাদ্যপণ্যে ব্যবহার হওয়ায় বাজার ব্যবস্থাও বেশ ভালো। গত বছর জেলায় ৫২৫ হেক্টরে ভুট্টার আবাদ হলেও এবার আবাদ হয়েছে ৮১৩ হেক্টরে। বিঘায় আবাদ খরচ ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। ভুট্টার আবাদ সম্প্রসারণের এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে আমরা আশাবাদি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বাছারকান্দি গ্রামের কৃষক মোঃ আলমগীর হোসেন খান বলেন, আমি কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ বছরই ১ একর ৬০ শতক জমিতে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে ভুট্টার আবাদ করেছি। আমার এ জমিতে আগে কোন ফসলেরই ভালো ফলন পেতাম না। মাশাআল্লাহ ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছি বর্তমান যে বাজারমূল্য আছে তাতে ২ লাখ থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। ভুট্টার গাছ থেকে আমার গরুর খাদ্যেরও যোগান হবে, আবার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করতে পারব। আমার ভালো ফলন দেখে আশপাশের অনেক কৃষকই এখন আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে আগামীতে কিভাবে ভুট্টার চাষ করবে।
জাজিরা উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের ইয়াছিন আকন কান্দি গ্রামের কৃষাণী শাহনাজ আক্তার বলেন, গত বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ভুট্টা আবাদ করে দেড় লাখ টাকা বিক্রি করেছি। জমিতে তেমন কোন নিরানী দিতে হয় নাই। তাই এবার সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। আগে আমার জমিতে দুইটি ফসল করতাম। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও সহায়তায় পেঁয়াজের সাথে ভুট্টা আবাদ শেষে আবার পাট আবাদ করতে পারছি। এতে করে ভুট্টার জন্য অতিরিক্ত কোন সার ও সেচ ছাড়াই ফসলটি পেয়ে যাচ্ছি।