মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০২ পূর্বাহ্ন

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষ : নিহত ১৪

নূরুল ইসলাম আনজু ও বেলায়েত হোসেন লিটন ফরিদপুর থেকে
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

ফরিদপুরের সদরের কানাইপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ১১ জন নিহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, সেখানে মৃত্যু হয়েছে আরো দুজনের। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা এ্যাবলুম হাইওয়ে রেষ্টুরেন্টের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে সাতজন নারী, দুইজন শিশু ও চারজন পুরুষ রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে একই পরিবারের চারজন।
নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের চারজন হলেন বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামের রাকিবুল ইসলাম মিলন (৪০), তার স্ত্রী সুমি (৩০) ও দুই ছেলে আবু রায়হান (৬), আবু সিনান রুহান (৫)।
অপর নিহতদের মধ্যে ছত্রকান্দা গ্রামের ওহাব মোল্যার স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৭০), আলফাডাঙ্গার মিল্টন শেখের স্ত্রী সোনিয়া (২৫), হিদাডাঙ্গা গ্রামের সূর্য (৬০), কুসুমদি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে নজরুল ইসলাম (৩৫), চরবাইল গ্রামের রশিদ খানের ছেলে তবিবুর রহমান (৬০) ও হিদাডাঙ্গা গ্রামের আমীর আলীর স্ত্রী কোহিনুরের (৫৫) পরিচয় পাওয়া গেছে। স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মাগুরাগামী ইউনিক পরিবহনের সাথে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী পিকআপের সাথে মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে নারীসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে নেয়ার পর আরো দু’জনের মৃত্যু হয়।
করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে হতাহতদের নাম ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, একটি পরিবারের লোকজন পিকআপ ভাড়া করে ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছিলেন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, পিকআপটি উল্টা লেনে চলে আসার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, নিহতদের দাফনের জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তা হিসেবে ২০ হাজার টাকা দেয়া হবে। এছাড়া নিহত প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহতদের তিন লাখ টাকা দেয়া হবে।
ত্রাণ দিয়ে ঢাকা ফেরা হলো না মিলনের, স্ত্রী-ছেলেসহ নিহত সপরিবারে: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার ছেলে রাকিবুল ইসলাম মিলন (৪০)। তিনি চাকরি করতেন ঢাকায়, সচিবালয়ে লিফটম্যান হিসেবে। চাকরির সুবাদে পরিচিতদের মাধ্যমে সম্প্রতি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের জন্য তদবির করে ত্রাণ হিসেবে কয়েক বান্ডিল টিন সহায়তার বরাদ্দ আনেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে একটি পিকআপে করে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে আশপাশের গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে সেই টিন আনতে যাচ্ছিলেন ফরিদপুরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কিন্তু পথে বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মিলনের স্ত্রী সুমি বেগম (৩৩) ও দুই সন্তান আবু রায়হান (৬), আবু সিনান রুহান (৫)-সহ ১৩ জনে নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিলনের মা খুড়িয়া বেগম। দুর্ঘটনায় মর্জিনা বেগম (৭০) নামে মিলনের এক নানী শাশুড়িরও মৃত্যু হয়েছে। মর্জিনা বেগম একই গ্রামের ওহাব মোল্লার স্ত্রী। বোয়ালমারীর ছত্রকান্দা গ্রামটি আলফাডাঙ্গা উপজেলার সীমান্ত ঘেষা। তাদের ডাকঘর এই আলফাডাঙ্গাই।
রাকিবুল ইসলাম মিলনের মামাত ভাই নুরুজ্জামান খসরু বলেন, ‘ঢাকা থেকে কয়েকটি দরিদ্র পরিবারের জন্য ত্রাণের টিনের ব্যবস্থা করে সোমবার বিকেলে বাড়িতে আসে মিলন। সকালে ফরিদপুর রওনা হয়। তার আগে গত রাতে সর্বশেষ কথা হয়েছিল তার সাথে। বলেছিল যে ত্রাণের টিনগুলো বুঝিয়ে দিয়ে ওই পথেই চলে যাবে ঢাকা। কিন্তু এটিই যে তার শেষ যাওয়া সেটি কেউ জানতো না।
খসরু আরো জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মিয়ার তিন ছেলের মধ্যে রাকিবুল ইসলাম মিলন মেজো ছিলেন। তার বড় ভাই ফরিদুল ইসলাম স্কুলশিক্ষক, আর ছোট ভাই হাবিবুর রহমান মাস্টার্স পাশ করে আলফাডাঙ্গা সদরে মোবাইল টেলকমের দোকান করেন। আট বছর আগে আলফাডাঙ্গার বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের রোকায়েশ মোল্লার মেয়ে সুমির সাথে তার বিয়ে হয়।
নিহত রাকিবুলের ফুফাত ভাই মকিবুল ইসলাম এভাবে পিকআপে যাত্রী চলাচলের ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘এভাবে সকলের সামনে পিকআপে ১৫-২০ জন মানুষ যাত্রা করল, অথচ কেউ কিছু বলল না! সড়কপথে এভাবে যাত্রী চলাচল নিষিদ্ধ হলেও কেউ সে আইন মানে না। আবার যাদের দেখভাল করার কথা তারাও কিছু বলে না।’
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম অবশ্য এ ব্যাপারে যাত্রীদেরই সচেতন হওয়ার ওপরে জোর দেন বেশি। তিনি বলেন, ‘যেই পিকআপটিতে করে তারা যাচ্ছিলেন হয়তো তার চালকের কোনো লাইসেন্সই ছিল না। এ জন্য যখন কেউ কোনো পরিবহনে উঠবেন, নিজের দ্বায়িত্বশীলতা থেকেই জেনে নেবেন গাড়িটি উপযোগী কিনা, কিংবা চালকের বৈধতা আছে কিনা। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা এ্যাবলুম হাইওয়ে রেষ্টুরেন্টের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাস-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ১১ জন নিহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, সেখানে মৃত্যু হয়েছে আরো দুজনের।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com