এ যুগে বাস্তব কোন দৃষ্টান্তে নয়, ‘যৌতুক’ শব্দটি শুধু অভিধানেই পাওয়ার কথা ছিল। চরম পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে আজও দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে যৌতুকের বলি হচ্ছেন নারীরা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ১নং রহিমপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড কালেঙ্গা গ্রামে যৌতুকের জন্য শ্বশুরবাড়িতে শেফালী বেগম নামের এক গৃহবধূ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শেফালী বেগম একই এলাকার মো: রব্বান মিয়ার মেয়ে। বিয়ের ১০ বছর অতিবাহিত হয়েছে শারীরিক নির্যাতন আর দু:খ যাতনায়। বিচার শালিশ বৈঠক হয়েছে একাধিকবার। যৌতুক ও পর পর ৩টি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ায় স্বামী ও শাশুড়ি, ননদ এর অমানবিক নির্যাতন সহে ১০টি বছর কাটালেন শেফালি বেগম। ২লাখ টাকা যৌতুক দিতে না পারা ও পর পর কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ায় ফলে শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন চালিয়ে শেষ পর্যন্ত এক কাপড়ে মারধোর করে ৩টি কন্যাসহ শেফালী বেগমকে পাঠিয়ে দেয়া হয় গরীব পিত্রালয়ে। ৩ সন্তানকে নিয়ে গরীব দিনমজুর পিত্রালয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন শেফালী। তাদের কন্যারা হলেন, তারমিন বেগম, বয়স ৮ বছর ৬ মাস,তানজুম বেগয়, বয়স ৭ বছর,ফারজানা আক্তার, বয়স ০৬ মাস। স্থানীয় ভাবে বার বার বিচার বৈঠকে মন গলেনি পাষ- স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের। এঘটনায় নিরুপায় হয়ে ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার শেফালি বেগম বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩নং আমলী আদালত মৌলভীবাজারে তার স্বামী চেরাগ মিয়া আকাশ(৩০) ও তার বোন রহিমপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রেজিয়া বেগম(৩৫) উভয় পিতা: মৃত শাহাব উদ্দিন এর নাম উল্লেখ পুর্বক একটি মামলা দায়ের করেন। সি আর মামলা নং-১৩৪/২৪ কমল:। যৌতুকের অভিশাপ থেকে নারী সমাজকে বাঁচাতে সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে কম উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যৌতুকের বিরুদ্ধে আছে শক্ত আইন, যৌতুকের বিরুদ্ধে জনমত গঠনেও নেয়া হয়েছে নানামুখী কর্মসূচী। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলামের অনুসারী। ইসলাম ধর্মে যৌতুক প্রথা নিষিদ্ধ। যৌতুক দেয়া-নেয়াকে ইসলাম ধর্মে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু যৌতক প্রথা দূরীকরণে এখনও কাংক্ষিত ফল লাভ সম্ভব হয়নি। প্রতিদিনই যৌতুকের বলি হচ্ছে নারীরা। যৌতুক দিতে না পারার কারণে গরিব ঘরের মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না সময় মতো। হলেও পাচ্ছে না যোগ্য পাত্র। আবার বিয়ের পর যৌতুকের জন্য চলছে অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন। অনেকে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা দেশ ও জাতির জন্যে কিছুতেই মঙ্গলকর না হলেও তা থামানো যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌতুক একটি সামাজিক অভিশাপ। প্রতিবছরই যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে অসংখ্য নারী। যার সঠিক পরিসংখ্যান কারও জানা নেই। যৌতুক কেবল গরিবের ঘরে নয় মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত, ধনী সব ধরনের পরিবারেই ছড়িয়ে আছে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনও মনে করে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা স্বামীর অধিকার। এ মানসিকতা অনেক উচ্চশিক্ষিত পুরুষের মাঝেও আছে। এ মানসিকতার পরিবর্তন করলেই সমাজের বহু নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু আইন দিয়ে সমাজের এই অন্যায় অনাচার দূর করা সম্ভব নয়। যৌতুকবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে যৌতুকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন।