সারা দিন কর্মব্যস্ততার পর মানুষ চায় একটু সুখ। চায় আত্মার প্রশান্তি। আর সেই সুখটুকু পাওয়ার জন্য কতই না আয়োজন। সবসময় তার খোঁজে মানুষ নিজেকে ব্যতিব্যস্ত রাখে। জীবনের সবটুকু বিসর্জন দেয় শান্তির জন্য। টাকা-পয়সা বাড়ি-গাড়ি স্ত্রী-পুত্র আরো কত কী? মৌল উদ্দেশ্য একটাই, একটু সুখ। একটু শান্তি। কিন্তু প্রকৃত সুখ কোথায়? কোথায় গেলে মিলবে আত্মার প্রশান্তি?
একজন মুমিনের জন্য প্রকৃত শাস্তি হলো আল্লাহর জিকিরের মধ্যে। মুমিনের আত্মা প্রশান্ত হয় রবের জিকিরে। এক অদ্ভুত মাদকতা কাজ করে তাতে। এটা নিছক দাবি কিংবা কল্প কথা নয়। বরং তা চিরসত্য আল কুরআনের মহাবাস্তব কথা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, শুনে রাখো আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমেই অন্তরগুলো প্রশান্ত হয় (সূরা রা’দ-২৮)। আর হবেই না কেন? প্রেমাস্পদের নাম তো প্রেমিকের মন প্রশস্ত করবেই। জিকির মুমিনের জীবনের জন্য বড় কল্যাণ বয়ে আনে। ভালোবেসে যেমন জিকির করা আমাদের প্রয়োজন ঠিক তেমনিভাবে অক্সিজেনের মতো তা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
ফজিলত।
জিকিরের রয়েছে নানামুখী উপকারিতা ও আত্মার সজীবতা: জিকির আত্মাকে জীবিত রাখে। মনকে করে সজীব। ফলে কাজকর্মে মুমিন বান্দা পায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। বিপরীতে জিকিরবিহীন অন্তর হলো মুরদার মতো। সে কখনো কোনো কাজে স্বস্তি পায় না। ইবাদতের স্বাদ পায় না। রাসূল সা: বলেন, যে আল্লাহর জিকির করে আর যে আল্লাহর জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত হলো মৃত আর জীবিতের মতো। (বুখারি-৬৪০৭)
ইবাদতের পূর্ণতাদাতা: জিকির হলো ফরজের পর সব ইবাদতের পরিপূরকস্বরূপ। জিকিরের মাধ্যমেই অন্যান্য ইবাদতের ঘাটতি পূরণ হয়। আবদুল্লাহ ইবনে বুসর রাঃ থেকে বর্ণিত, একজন লোক রাসূল সা:-এর কাছে এলো এরপর বলল,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইসলামের এতগুলো বিধিবিধান পালন করা আমার জন্য কষ্টকর। সুতরাং আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যা আমার জন্য যথেষ্ট হবে। তখন রাসূল সা: বলেন, তোমার জবান যেন আল্লাহর জিকিরে সজীব ও ভিজা থাকে। (তিরমিজি-৩২)
উঁচু মর্যাদার সোপান জিকির হলো ইবাদতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও মর্যাদাবান ইবাদত। জিকিরকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে উঁচু মর্যাদা এবং বিপুল সাওয়াবের অধিকারী হবে। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে উত্তম, পবিত্র ও মর্যাদাবান আমলের কথা বলে দেবো, যা তোমাদের জন্য স্বর্ণ রুপা খরচ করার চেয়ে উত্তম হবে এবং জিহাদের ময়দানে শত্রুর শিরোশ্ছেদ করার চেয়েও উত্তম হবে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ: রাসূল সা: বলেন, তা হলো আল্লাহর জিকির। (জামে’সাগীর-২৮৭১)
নৈকট্য লাভের মাধ্যম জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সবচেয়ে কাছে যাওয়া যায়। কারণ জিকির হলো আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আলাপ আলোচনা। এই প্রসঙ্গে আবু জর রা: বলেন, রাসূল সা: বলেন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কথা কী জানো? আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় কথা হলো, ‘সুবহানাল্লাহ অবি হামদিহি’। (সাহিহ তারগিব- ১৫৩৮)
কুরআনের একাধিক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা আমাদের তার জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা আমার জিকির কর তাহলে আমিও তোমাদের কথা আরশে আলোচনা করব। তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় কর। আমার অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাকারা-১৫২) সুতরাং আমাদের হৃদয়ের প্রশান্তির জন্য এবং আত্মাকে সজীব রাখতে হলে প্রয়োজন বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা। লেখক: প্রবন্ধকার