দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম হ্রদ হিসেবে পরিচিত রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে দেশীয় মাছের প্রাকৃতিক পজনন, কার্প জাতীয় মাছের বংশবিস্তার নিশ্চিতকরণে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের মাছ আহরণ, বাজারজাত ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার(১৮ এপ্রিল) বিকেলে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন কতৃক আয়োজিত কাপ্তাই লেকে মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মোঃ আশরাফুল আলম ভূঁইয়া, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অধীর চন্দ্র দাশ, বিএফডিসি’র ফিশ কলেচারিস্ট মোঃ ইসমাইল হোসেন, নৌ-পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ এহতেশামুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়–য়া, বৃহত্তর বনরূপা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ আবু সৈয়দ সহ মৎস্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মোঃ আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, গতবছর এই সময়ে আমাদের বিএফডিসি ঘাটে মাছ অবতরণ হয়েছিল ৫৩৮৯ মেট্রিক টন, আর এইবছর বুধবার(১৭ এপ্রিল) পর্যন্ত আমাদের মাছ অবতরণ হয়েছে ৭৫০৮ মেট্রিক টন। আমরা যদি মাছের প্রজননটা শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে পারি তবে এই উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। গতবছর হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকাকালীন সময়ে অবৈধ মাছ শিকারের বিরুদ্ধে প্রায় এক হাজারটি অভিযান পরিচালনা করেছিলাম আমরা, এই বছরও সেটি অব্যাহত থাকবে। মাছ শিকার বন্ধথাকালীন সময়ে অবৈধ ভাবে মাছ শিকার পরিবহন ও বাজারজাতকরণ না করার জন্য তিনি মৎস্য ব্যবসায়ী, পরিবহন ও বাজার সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন। রাঙ্গামাটির জেল প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, শুধুমাত্র মৎস্য সম্পদের জন্যই নয়, পর্যটন খাত, বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন কারণে কাপ্তাই হ্রদ আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। কাপ্তাই হ্রদে কার্প প্রজাতির মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করার জন্য ডিম ছাড়ার মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখা প্রয়োজন। তাই কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক নিশ্চিতকরণে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত আগামী তিনমাস কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। মাছ শিকার বন্ধে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিমও কাজ করে যাবে। এসময় কেউ হ্রদে মৎস্য আহরণ করলে অপরাধ অনুযায়ী তাকে দন্ড দেয়া হবে। এ সময় মাছ শিকার বন্ধে কাপ্তাই হ্রদে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে এবং স্থানীয় বরফ কলগুলোও বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।