শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

তাপপ্রবাহে ‘অতি উচ্চঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

দেশে মাসজুড়ে চলা টানা তাপপ্রবাহের কারণে স্বাস্থ্যগত উচ্চঝুঁকিতে আছে শিশুরা। বুধবার (২৪ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট। একইসঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তানদের পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান এই তাপপ্রবাহসহ জলবায়ু পরিবর্তনের আরও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় আমাদের আগে শিশু ও সবচেয়ে অসহায় জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে রাখার প্রতি নজর দিতে হবে। ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ‘অতি উচ্চঝুঁকিতে’ রয়েছে শিশুরা। অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে শিশুদের জন্য। বিশেষ করে নবজাতক, সদ্যোজাত ও অল্পবয়সী শিশুদের জন্য। হিটস্ট্রোক ও পানি শূন্যতাজনিত ডায়রিয়ার মতো, উচ্চতাপমাত্রার প্রভাবে সৃষ্ট অসুস্থতায় শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরু থেকেই দেশব্যাপী বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। শুরুতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকলেও ক্রমে তা তীব্র থেকে অতি তীব্র হয়ে উঠেছে। এমনিতে এপ্রিল বছরের উষ্ণতম মাস। তবে অন্যান্য যে কোনো বছরের চেয়ে অনেক বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে এবারের মাসটি। অসহনীয় গরমে এক পশলা বৃষ্টির জন্য হাঁসফাঁস করছে জনজীবন।
মাসের এখনও বাকি সপ্তাহখানেক, এরই মধ্যে কয়েক দফায় হিট অ্যালার্ট জারি হয়েছে দেশে। মাসের মাঝামাঝি এসে প্রতিদিন মরুর দেশগুলোর তাপমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে দেশের কোনো কোনো অ লের তাপমাত্রা। টানা এই তাপপ্রবাহকে অস্বাভাবিক বলছেন দেশের আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেছেন, গত এক দশক থেকেই এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকছে তাপমাত্রা। এপ্রিল মাসের গড় স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.২। তবে এবার এপ্রিলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। অধিকাংশ জায়গায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির ওপরে থাকছে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের ওপর অসহনীয় গরমের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সারা দেশে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। জলবায়ুর ক্রমবর্ধমান বিরূপ পরিবর্তনে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফও।
তাপপ্রবাহ থেকে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সুরক্ষার জন্য সম্মুখসারির কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, পরিচর্যাকারী ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: শিশুরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের বসা ও খেলার জন্য ঠান্ডা জায়গার ব্যবস্থা করুন। তপ্ত দুপুর ও বিকেলের কয়েক ঘণ্টা তাদের বাড়ির বাইরে বেরোনো থেকে বিরত রাখুন। শিশুরা যেন হালকা ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পরে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে সারা দিন তারা যেন প্রচুর পানি পান করে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসা: যদি কোনো শিশু বা অন্তঃসত্ত্বা নারীর মধ্যে ‘হিট স্ট্রেস’ বা তাপমাত্রাজনিত সমস্যার উপসর্গ দেখা দেয় (যেমন, মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাংসপেশিতে টান, ডায়াপার পরার জায়গাগুলোতে ফুসকুড়ি) তাহলে তাকে একটি ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান, যেখানে ছায়া এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের সুযোগ আছে। এরপর ভেজা তোয়ালে দিয়ে তার শরীর মুছিয়ে দিন বা গায়ে ঠান্ডা পানি দিন। তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা খাবার স্যালাইন পান করতে দিন। হিট স্ট্রেসের (তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতার) উপসর্গ তীব্র হলে (যেমন কোনকিছুতে সাড়া না দিলে, অজ্ঞান হয়ে পড়লে, তীব্র জ্বর, হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলে, খিঁচুনি দেখা দিলে এবং অচেতন হয়ে পড়লে) তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিতে হবে।
প্রতিবেশীদের প্রতিও খেয়াল রাখার পরামর্শ:তাপপ্রবাহ চলাকালে অসহায় পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও প্রবীণ ব্যক্তিরাই সবার আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন, এমনকি মৃত্যুর উচ্চঝুঁকিতেও তারাই বেশি থাকেন। আপনার প্রতিবেশী, বিশেষ করে যারা একা থাকেন, তাদের খোঁজ নিন ও খেয়াল রাখুন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com