রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:১৭ অপরাহ্ন

সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়মের পর শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

শেয়ারবাজারে সার্কিট ব্রেকারের (দাম কমার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা) নতুন নিয়ম চালু করার পর গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। লেনদেন শুরুর পরপরেই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আতঙ্কে দিনের সর্বনিম্ন দামে বিপুল শেয়ার বিক্রির আদেশ দেন। ফলে লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিট পরেই ক্রেতা সংকটে পড়ে শতাধিক প্রতিষ্ঠান। এ ক্রেতা সংকট পরিস্থিতি লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
ক্রেতা সংকট দেখা দেওয়ায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে।
ঈদের ছুটি শেষে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন দেখা দিলে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম আজ থেকে কার্যকর হয়েছে।
বিএসইসি’র নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৭ জুন শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের যে নিয়ম নির্ধারণ করা হয় তা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে দাম কমার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা হবে ৩ শতাংশ। ফ্লোরপ্রাইসে থাকা সিকিউরিটিজ বাদে সব সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হবে।
বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসির নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ারবাজারের উপকার হবে না। বরং বাজারে স্বাভাবিক চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটবে। সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম চালু করার পর বুধবার রাত থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে বিএসইসির সমালোচন করা হয়। আর বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম। লেনদেন শুরু কয়েক মিনিটের মধ্যেই দিনের সর্বনিম্ন দামে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের বিপুল শেয়ার বিক্রির আদেশ আসে। ফলে লেনদেন শুরুর অল্পসময়ের মধ্যেই সূচকের বড় পতন হয়।
দিনের সর্বনি¤œ দামে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির আদেশ লেনদেনের শেষপর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০০টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে নেমে গেছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫১১ কোটি ৪৩ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬০২ কোটি ৭৪ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাভেলো আইসক্রিমের ২৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আইটি কনসালটেন্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- কহিনুর কেমিক্যাল, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, মালেক স্পিনিং, ফার্মা এইড, বিচ হ্যাচারি এবং বেস্ট হোল্ডিং। অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৬৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬১টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৬ কোটি ৭ লাখ টাকা। সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম শেয়ারবাজারের জন্য কেমন হবে জানতে চাইলে বুধবার শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এভাবে বাজারে হস্তক্ষেপ করা ঠিক না। মার্কেট এক জায়গায় গিয়ে ঠিক হয়ে যেতো। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আগের নিয়ম রাখা হয়েছে, কিন্তু কমার ক্ষেত্রে কমতে পারবে না, এটা আগের মতো আরও একটা ভুল সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, বিএসইসি সূচক নিয়ে এত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে কেন? তাদের উচিত বাজারে যে অনিয়ম হয় তা দেখা। সেইসঙ্গে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বসে বিনিয়োগকারীদের সিস্টেমে কিছু প্রণোদনা দেওয়া যায় কিনা, তার ব্যবস্থা করা। এটার জন্য চেষ্টা, তদবির করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, দাম কমার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের যে নিয়ম করে দেওয়া হলো এটা বাজারের কোনো উপকার করবে না। ক্ষতিই করবে। বাজারে ফ্রি ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। এত সমালোচনার পর ফ্লোরপ্রাইস উঠিয়েছে, তারপর আবার সেই দিকে যায়। ফ্লোরপ্রাইস পড়াটাকে জোর করে বেঁধে রাখা যায় না। যেটা পড়ার সেটা পড়বেই।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com