শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন

সারা দেশে হিটস্ট্রোকে ৭ জনের মৃত্যু

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে মাঝারি থেকে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে নতুন করে সারা দেশে আবারও ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের হিট এলার্ট (তাপপ্রবাহ) জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। গতকাল রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকালে আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ ২৮ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ ১ মে সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার থেকে তিন দফা ৭২ ঘণ্টা করে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া অফিস। তীব্র তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। সারা দেশ থেকে আকষ্মিক মৃত্যুর খবর আসছে। গতকাল রোববার (২৮ এপ্রিল) সারা দেশে ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামে হিট স্ট্রোকে মাওলানা মো. মোস্তাক আহমেদ কুতুবী আলকাদেরী (৫৫) নামে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে চট্টগ্রাম নগরের বাসা থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে মাওলানা মো. মোস্তাক আহমেদ কুতুবী হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
তিনি বোয়ালখালী উপজেলার খিতাপচর আজিজিয়া মাবুদিয়া আলিম মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
রাজশাহীতে হিটস্ট্রোকে দিলীপ বিশ্বাস (৩৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান তিনি। তিনি রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার দামকুড়া থানার কাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছেন, দিলীপ বিশ্বাস সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন। রোববার সকালে হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মুহূর্তের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। তারা ধারণা করছেন, বৈশাখের এই তীব্র গরমের কারণে হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। যশোরে অব্যাহত তাপ প্রবাহে হিটস্ট্রোকে আহসান হাবীব (৩৭) নামে এক স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি যশোর আমদাবাদ হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
এ নিয়ে যশোরে হিট স্ট্রোকে তিন জনের মৃত্যু হলো। এর আগে, যশোর সদর ও মনিরামপুরে একজন করে হিট স্ট্রোকে মারা যান।
আমদাবাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এ জেড এম পারভেজ মাসুদ বলেন, শিক্ষক আহসান হাবীব সকালে মাঠে কাজ করে ৯টার দিকে স্কুলে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নরসিংদীতে হিটস্ট্রোকে আদালত প্রাঙ্গণে সুলতান উদ্দিন মিয়া (৭২) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর ৩টার দিকে তার মুত্যু হয়। তিনি নরসিংদী কোর্টে আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্বজনদের বরাতে জানা গেছে, মৃত সুলতান উদ্দিন মিয়া সকালে প্রতিদিনের মতো বাসা থেকে বের হয়ে নরসিংদী কোর্টে যান। কোর্টে কাজ করার সময় দুপুরে তার বুকে ব্যথা অনুভব হয়। পরে সে আদালতের মসজিদের সামনে এলে পড়ে যান। লোকজন উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাদারীপুরে তীব্র তাপপ্রবাহে অসুস্থ হয়ে দুই জন মারা গেছেন। নিহতদের একজন খুচরা ব্যবসায়ী ও অপরজন কৃষক।
গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে জেলার কালকিনি উপজেলার পশ্চিম শিকারমঙ্গল এলাকায় ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী শাহাদাত সর্দার (৫৫) ও ২টার দিকে ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের মোসলেম ঘরামি (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলাউল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রচ- গরমে দুই জন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ
* যখন কোনো ব্যক্তি দীর্ঘক্ষণ গরম বাতাস ও সূর্যের আলোতে থাকে, তার মুখ ও মাথা দীর্ঘক্ষণ সূর্যের আলো ও গরম বাতাসের সংস্পর্শে এসে সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।
* হিট স্ট্রোকের কারণে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে। হিট স্ট্রোকের কারণে শরীরে পানিশূন্যতার সমস্যা বেড়ে যায়।
* হিট স্ট্রোকে ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং তাপ শরীর থেকে বের হতে পারে না। শরীরে ক্র্যাম্প দেখা দিতে পারে এবং দুর্বলতা বাড়তে থাকে।
* হিট স্ট্রোক এলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘুরতে শুরু করে। ব্যক্তি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং তার মানসিক অবস্থাও প্রভাবিত হয়।
* হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে শরীর গরম এবং লাল হয়ে উঠবে কিন্তু ঘাম হবে না। সেইসঙ্গে হৃদস্পন্দন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত বাড়তে থাকবে।
হিটস্ট্রোক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে যেভাবে
কেউ যদি দীর্ঘ সময় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকেন তবে তিনি হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। হিট স্ট্রোকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাপপ্রবাহের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মস্তিষ্ক, কিডনি, লিভার, হার্ট এবং পেশী। বেশিরভাগ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি কিডনিকে প্রভাবিত করে। পানির অভাবে কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। যে কারণে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। হিট স্ট্রোকের কারণে রোগীর অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সচেতন হওয়া জরুরি।
সুস্থ থাকবেন যেভাবে
গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে বেশি করে পানি পান করতে হবে। সেইসঙ্গে পান করতে হবে বেশি করে ফলের রস এবং ওরস্যালাইন। তবে দিনে দুটির বেশি স্যালাইন পান করবেন না। ওরস্যালাইন তৈরির আগে প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা মেনে তবেই তৈরি করুন। শসা, তরমুজ ও ডালিম খাবেন নিয়মিত। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় গরমে থাকা এড়িয়ে চলুন। চেষ্টা করুন তুলনামূলক শীতল তাপমাত্রায় থাকার। পোশাক হিসেবে সুতির ঢিলেঢালা জামা ব্যবহার করুন।
বৃষ্টির আভাস, তারপরও কেন ‘হিট অ্যালার্ট’: আবহাওয়া অধিদফতর নতুন করে আরো তিন দিনের জন্য ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে। সংস্থাটি বলেছে, আজ থেকে শুরু হওয়া এই তিন দিনেও জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। আবহাওয়া বিভাগ এ নিয়ে দেশে পঞ্চমবারের মতো ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করলো এবং সবমিলিয়ে টানা ২৮ দিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ডও হয়েছে।
যদিও গরমের কারণে বেশ কয়েকদিন বন্ধ রাখার পর আজ রোববার থেকে স্কুলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে, তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ক্লাস শুরুর আগের অ্যাসেম্বলি বাতিলসহ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, আবহাওয়ার বিভিন্ন মডেল পর্যালোচনা ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে দেশের ওপর চলমান তাপদাহ বা হিট ওয়েভ আরো ৭২ ঘণ্টা বিলম্বিত হতে পারে। রাজধানী ঢাকাসহ কমপক্ষে ৪৫টির বেশি জেলার ওপর দিয়ে গত প্রায় এক মাস ধরে নানা মাত্রার এই তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। একইসাথে, দিনের গড় তাপমাত্রাও কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় সারাদেশেই গত কিছুদিন ধরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তবে পূর্বাভাস অনুযায়ী শনিবার থেকেই সিলেটসহ কিছু এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে সাধারণত কোনো স্থানের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেখানে সতর্কবার্তা জারি করা হয়।
কেমন যেতে পারে এই ৩ দিন
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, আজ থেকে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর সাথে কোনো কোনো জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টিও হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য জায়গার আবহাওয়া শুষ্কই থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে। এছাড়া আরো অনেকগুলো জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের যে তাপপ্রবাহ বইছে তা অব্যাহত থাকতে পারে।
একইসাথে আজ সোমবার ও পরশু মঙ্গলবারও বিরাজমান এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। তবে এরপর বৃষ্টিপাত ভালো করে হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতেও পারে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এর বাইরে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়ার কুমারখালি ও যশোরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি ছিল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এপ্রিল হচ্ছে সর্বোচ্চ গরম মাস। এই সময়ে পৃথিবী সূর্য থেকে রশ্মি বা কিরণ পায় সেটি লম্বালম্বিভাবে পায়। অর্থাৎ এপ্রিল মাসে সূর্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে, যার কারণে সূর্যের তাপ বেশিই পরে এই অঞ্চলে।
বৃষ্টির প্রবণতা শুরু, তাও সতর্কবার্তা কেন
নতুন করে তিন দিনের হিল অ্যালার্ট জারি হলেও আবহাওয়া বিভাগ আশা করছে, চলতি সপ্তাহের শেষ থেকেই উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
‘আবহাওয়ার বিভিন্ন মডেল পর্যালোচনা ও তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে ২ মে বা তার পর থেকে বৃষ্টিপাত হবে বিভিন্ন জায়গায়। স্থান ও সময়ের হেরফের হতে পারে সামান্য তবে এটিই হবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ড. মল্লিক।
এর আগে চতুর্থ দফার হিট অ্যালার্ম জারির পর আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদও বিবিসি বাংলাকে একই ধরণের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন।
তিনি তখন বলেছিলেন ২৯ এপ্রিলের দিক থেকেই সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ‘তবে এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে আগামী মাসের শুরুতে মোটামুটি ভালোই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে,’ বলছিলেন তিনি।
শনিবার সিলেট এলাকায় ঝড়ো বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। সে কারণে সিলেটের তাপমাত্রা কমেও এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ও সর্বনি¤œ ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সেখানে। আজ ও কাল আরো কিছু এলাকাতেও বৃষ্টি হতে পারে।
কিন্তু তারপরও তিন দিনের হিট অ্যালার্মের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলছেন, ‘দেখা যাচ্ছে টুকটাক বৃষ্টি হলেও তাপপ্রবাহ চলতি মাস জুড়েই থাকছে। সে কারণেই হিট অ্যালার্ম দেয়া হয়েছে। ১/২ তারিখ থেকে বৃষ্টি হলেও তার আগের তিন দিন তাপপ্রবাহ একই থেকে যাচ্ছে।’
উষ্ণতম বছর দেখছে বাংলাদেশ
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই এপ্রিল মাসে গড়ে সাধারণত দুই-তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দু’টি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
কিন্তু এবছর তীব্র তাপপ্রবাহ অনুভূত হওয়ায় ইতোমধ্যেই তিনটি হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেও নতুন হিট এলার্ট জারি করতে হতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে গড়ে তাপমাত্রা থাকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এ বছর সেটি বৃদ্ধি পেয়ে গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এ বছরের তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।
এর আগে ২০২৩ সালকে বাংলাদেশের উষ্ণতম বছর হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন আবহাওয়াবিদরা। ওই বছর একটানা তিন সপ্তাহ পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলার রেকর্ড হয়েছিল।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম হচ্ছে। ফলে গরম থেকেই যাচ্ছে।’
গরম কাটাতে জুনে মাসে ভারী বৃষ্টিপাত পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদদের অনেকে।
তবে আবুল কালাম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন মে মাসের শুরুতেই তারা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখছেন। যদিও সেটি কয়দিন স্থায়ী হয় তা এখনি বলা কঠিন।
এবার এতো তাপমাত্রা কেন
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের ওই অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলোর অবস্থান।
এইসব প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করে।
‘যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়,’ বিবিসি বাংলাকে সম্প্রতি বলেছেন আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি এই আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী এবছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
‘বিগত বছরের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে ২০২৪ সাল উত্তপ্ত বছর হিসেবে যাবে। আমরা এ বছর তাপপ্রবাহের দিন এবং হার বেশি পেতে যাচ্ছি,’ বলছিলেন ড. মল্লিক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com