ইরানের সর্ব্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বুধবার শিক্ষক দিবসে (শহীদ মোতাহারির শাহাদাত বার্ষিকী) সারা ইরানের হাজার হাজার শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
ওই সমাবেশে তিনি আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে ফিলিস্তিনি জাতির সমর্থনে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে বিশ্বজনমতের মধ্যে গাজা ইস্যুটি অগ্রাধিকার পাবার প্রমাণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন: ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধ এবং তাদের সাথে আমেরিকার জড়িত থাকার ঘটনা দখলদার ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে ইরানের সরকার ও জাতির অবস্থানের বৈধতা প্রমাণ করেছে।
ওই বৈঠকে ইসলামী বিপ্লবের নেতা দখলদার ইসরাইলের ওপর জনমতের ক্রমবর্ধমান চাপকে প্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন:ইহুদিবাদী উন্মত্ত কুকুরগুলোর নৃশংস ও নিষ্ঠুর আচরণ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ও ইরানি জাতির অবস্থানের যথার্থতা প্রমাণ করেছে। ত্রিশ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে তারা যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু। এই নৃশংসতা ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ঘৃণ্য প্রকৃতির চেহারাই ফুটিয়ে তুলেছে এবং সমগ্র বিশ্বের কাছে ইরানের স্থায়ী অবস্থানের যথার্থতা প্রমাণ করেছে।
ইমাম খামেনি ইসরাইলি অপরাধের প্রতিবাদকারী ছাত্রদের ‘অহিংস ও ধ্বংসবিহীন বিক্ষোভের ঘটনায় আমেরিকা এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আচরণকে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অবস্থানের আরেকটি প্রমাণ বলে উল্লেখ করেন।
এই বিষয়টি সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে গাজার জনগণকে হত্যা করার মতো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইহুদিবাদীদের সহযোগী। তাদের আপাতদৃষ্টিতে সহানুভূতিশীল কিছু কথাও পুরোপুরি মিথ্যা। তাই ইসলামি প্রজাতন্ত্রের মার্কিন বিরোধী অবস্থান এবং আমেরিকার সরকারের প্রতি ইরানের আস্থা রাখতে না পারার কারণ প্রমাণিত হয়েছে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা ফিলিস্তিন সমস্যার একমাত্র সমাধান হিসেবে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সেটা হলো মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদিসহ ফিলিস্তিনের আসল মালিকদের কাছে তাদের দেশকে ফিরিয়ে দেওয়া। তিনি বলেন:
যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে তাদের মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া না হবে ততদিন পশ্চিম এশিয়ার সমস্যার সমাধান হবে না। ইসরাইলের অস্তিত্বকে আরও বিশ-ত্রিশ বছরও যদি এভাবে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়-যদিও সেটা সম্ভব হবে না ইনশাআল্লাহ-তারপরও এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
খামেনি বলেন:ফিলিস্তিনকে তাদের জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং ফিলিস্তিনি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর তারা সিদ্ধান্ত নেবে ইহুদিবাদীদের সাথে তাদের করণীয় কী।
এ অঞ্চলের কোনো কোনো দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে সে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন:কেউ কেউ মনে করে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, যদিও ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেও সমস্যার সমাধান তো হবেই না, বরং সমস্যাটা ইসরাইলি অপরাধের ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রাখা সরকারগুলোর দিকেই পরিচালিত হবে।
খামেনি শিক্ষক দিবসকে অভিনন্দিত করে বলেন: শিক্ষককে সম্মান করা এবং তাদের ধন্যবাদ জানানো সমগ্র জাতির কর্তব্য। তিনি বলেন:তরুণ প্রজন্মের পরিচিতি তৈরি করা এবং তাদের মধ্যে আশা ও উদ্দীপনা জাগানো, শিক্ষকদের বস্তুগত ও অ-বস্তুগত ক্ষমতায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে সহায়তা দেওয়া, শিক্ষা সহায়কদের শক্তিশালীকরণ এবং সমাজে শিক্ষকদেরকে রোল মডেল হিসেবে দেখা-এগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
শিক্ষার “ক্ষমতায়ন” ছিল আরেকটি বিষয় যা আয়াতুল্লাহ খামেনি শিক্ষকদের দায়িত্ব সম্পর্কে উত্থাপন করেন। তিনি বলেন:শিক্ষকদের জীবিকা ও বৈষয়িক ক্ষমতায়নের ওপর সবসময় জোর দেওয়া হয়েছে এবং এখনও এক্ষেত্রে সম্ভাব্য সবকিছু করা উচিত। ইসলামী বিপ্লবের নেতা যুবকদের কাছে সামাজিক ক্ষতির বিস্তার রোধকে প্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করে বলেন:এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি উপলব্ধি করার জন্য শর্ত হল স্বয়ং স্কুলগুলোতে যেন কোনও রকমের সামাজিক ক্ষতির অস্তিত্ব না থাকা। এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব শিক্ষা সচিব এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের। দেশের মৌলিক সমস্যাগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা এবং কিশোর-তরুণদের জন্য সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া শিক্ষা সচিবদের আরেকটি দায়িত্ব।
বিপ্লবের নেতা দায়িত্বশীলদের ইঙ্গিত করে আরও বলেন: লাখ লাখ তরুণ ও যুবক যদি দেশের মৌলিক স্বার্থ ও সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানে, বন্ধু ও শত্রু ফ্রন্ট সম্পর্কে সচেতন হয় এবং জাতির শত্রুদের টার্গেটের মোকাবেলায় অটল থাকে তাহলে শত্রুদের বিশাল মিডিয়া ও রাজনৈতিক বিনিয়োগে কোনো কাজ হবে না।
খামেনি আরও বলেন:ছাত্র, যুবক ও কিশোর-কিশোরীদের উচিত বুদ্ধিমত্তার সাথে সরকারের নীতি ও আচরণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া। সেইসঙ্গে তাদের জানা উচিত “আমেরিকা নিপাত যাক” এবং “ইসরায়েলের পতন হোক” স্লোগানের পেছনে কী যুক্তি রয়েছে এবং ইরান কেন কিছু দেশ ও সরকারের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক নয়। ‘ছাত্রদের মাঝে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দেওয়া’ ছিল আরেকটি প্রত্যাশা। বিপ্লবের নেতা এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন:জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির অর্থ হল যে শিক্ষার্থীদের জানা উচিত শিক্ষা এবং শ্রেণীকক্ষ প্রগতি ও উন্নয়ন তথা দেশ ও সরকার ব্যবস্থাকে চালিত করার বিশাল একটি প্রক্রিয়ার অংশ। তাই শিক্ষার্থীদের জাতীয় সম্মান ও মর্যাদার উপায় উপকরণের সাথে পরিচয় করানো প্রয়োজন। দেশের অর্জন, সঠিক পথ থেকে আসা বিজয় এবং সেইসাথে বিপদ ও শত্রুদের সম্পর্কে সচেতন করে তোলা উচিত।
ছাত্রদের মাঝে আশার সঞ্চার করাকে তিনি শিক্ষকদের আরেকটি কর্তব্য বলে মনে করেন সর্বোচ্চ নেতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন:আশাই হলো দেশের ভবিষ্যতের গ্যারান্টি। যদি কেউ তরুণদের অন্তরাত্মায় আশা জাগিয়ে তোলে, তাহলে তিনি প্রকৃতপক্ষে দেশের ভবিষ্যত গড়তে সাহায্য করেছেন এবং এই কারণেই আমরা বারবার আশা তৈরি করার ওপর জোর দিয়ে থাকি। সূত্র: পার্সটুডে।