শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৫:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে : রাষ্ট্রপতি রাসূল (সা.)-এর সীরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে দৃঢ় শপথবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে—ড. রেজাউল করিম চৌদ্দগ্রামে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫, আহত ১৫ চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান: ফরাসউদ্দিন নতজানু বলেই জনগণের স্বার্থে যে স্ট্যান্ড নেয়া দরকার সেটিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক হামাসের অভিযানে ১২ ইসরাইলি সেনা নিহত আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় গাজানীতির প্রতিবাদে বাইডেন প্রশাসনের ইহুদি কর্মকর্তার লিলির পদত্যাগ

এক কলসি পানির জন্য ১ ঘণ্টা অপেক্ষা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪

বান্দরবান জেলা শহর থেকে থানচি সড়কে ৪২ কিলোমিটার দূরে কোরাং পাড়া। এ পাড়ার ৫২ বছর বয়সী নারী লুংনে ম্রো। তার দিনের অর্ধেক সময় চলে যায় পানি আনতে। পাহাড় ডিঙিয়ে ঝিরি থেকে সকাল-বিকাল দুই বার পানি নিতে গেলে চার ঘণ্টা লাগে শুধু পানির জন্য। তবুও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। তার ছয় সদস্যের পরিবার। পরিবারে রান্না ও পান করার জন্য প্রতিদিন পাঁচ-ছয় কলসি পানির প্রয়োজন। ঝিরি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পানি পাওয়া যায় না। তার মতো কোরাং পাড়া ও কোরাং বাজারে আরও ২০০ পরিবার পানির সংকট নিয়ে দিন পার করছে- বললেন এই নারী।
লুংনে ম্রো বলেন, বছরে (ফেব্রুয়ারি, মার্চ-এপ্রিল-মে) চার মাস পানির তীব্র সংকটে থাকি। এ সময়ে ঝিরি-ঝর্ণার পানির উৎস শুকিয়ে যায়। ঝিরির শেষ মাথায় তৈরি করা কুয়াতে বা গর্তে অল্প অল্প পানি জমে। সেখান থেকে এক কলসি পানি নেওয়ার পর আরেক কলসি নিতে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। পাড়ার নারীরা ওই কুয়া বা গর্ত থেকেই পানি সংগ্রহ করেন। বান্দরবান চিম্বুক পাহাড় রেঞ্জ এলাকার থানচি সড়কে কোরাং পাড়া ও কোরাং বাজার এলাকায় ম্রো, ত্রিপুরা ও বম জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০০ পরিবারে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এমন দৃশ্য শুধু কোরাং পাড়ার নয়। চিম্বুক পাহাড় এলাকার গেৎশমানি পাড়া, ম্রলং পাড়া, বসন্ত পাড়া, ক্রামাদি পাড়া, দেওয়াই হেডম্যান পাড়া, নোয়া পাড়া, ১৬ মাইল বাগান পাড়া, চিম্বুক বাজার, রাংক্লাং পাড়া, এম্পু পাড়া, ক্রাপুং পাড়া, লংবাইতং পাড়াসহ চিম্বুক-নীলগিরি-থানচি সড়কের দুই পাশে এবং পাহাড়ে বসবাসরত ৯০টি পাড়ার ম্রো, ত্রিপুরা, মারমা, বম জনগোষ্ঠী প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারে তীব্র পানি সংকটের এমন দৃশ্য প্রতিদিনের।
কোরাং পাড়ার রাইনহিন ত্রিপুরা বলেন, ঝিরি থেকে একবার পানি আনতে গেলে এক কলসির বেশি পাওয়া যায় না। এক কলসি পানি নেওয়ার পর এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে আবার পানি নিতে হয়। কোরাং পাড়া বাজারের বাসিন্দা রেং য়ক ম্রো বলেন, প্রচ- গরমে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ, তার মধ্যে পানির সংকট। এলাকার মানুষের বসবাসের জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।
কোরাং বাজার এলাকার বাসিন্দা চিংহ্লাউ খেয়াং বলেন, শুষ্ক মৌসুমের এলাকা মানুষের খাদ্যের চাইতে খাবার পানির সংকট বেশি। পাড়া থেকে কয়েক হাজার ফুট নিচে নেমে রান্নার পানি ও সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হয়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে করে পানি সংগ্রহ করতে হয়। পাড়ার মানুষের পানি সংগ্রহ করতেই অধিকাংশ সময় চলে যায়। ১৬ মাইল বাগান পাড়ার কারবারি (পাড়া প্রধান) পায়া ম্রো বলেন, পানি সংকটের কারণে পাড়ার বাসিন্দারা দুই-তিন দিন পর পর ১-২ লিটার পানি দিয়ে গোসল করতে হয়। ম্রলং পাড়ার বাসিন্দা বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজের নার্সিং’র ছাত্রী চামেলে ম্রো বলেন, বনাঞ্চল ধ্বংস, ঝিরির পাথর উত্তোলন করে পানির উৎস ধ্বংস করার কারণে প্রতিবছর চিম্বুক পাহাড়ের আশপাশের প্রায় ৯০টি পাড়ার বিশুদ্ধ পানির সংকটে থাকেন। দুর্গম এলাকার অন্যান্য সকল সম্প্রদায়ের বসবাসকারীরাও পানির সংকটে থাকেন।
চিম্বুক পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী সব ছোট-বড় ঝিরি-ঝর্ণাগুলো শুকিয়ে গেছে। ফলে পানির তীব্র সংকটে থাকেন এইসব পাড়ার বাসিন্দারা। পানি সংকটে থাকা ওইসব পাড়ায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে বান্দরবানের সংবাদকর্মী বাটিং মারমা, মংসিং হাই মার্মা, সুফল চাকমা, ফরিদুল আলম সুমন, উসিথোয়াই মার্মা ও মংহাইসিং মার্মা মিলে গত পাঁচ দিনে (২৬-৩০ এপ্রিল) ২০ হাজার লিটার এবং বান্দরবান রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট গত ৩০ এপ্রিল ৭ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করেছেন।
পানি সরবরাহের সময় চিম্বুক বাজার এলাকার চিংপাও ম্রো জানান, একটি ট্যাংকে ১৮০ লিটার বিশুদ্ধ পানি পেয়েছেন। এই পানি দিয়ে তার পরিবার সপ্তাহখানেক চলতে পারবেন। পানি সংকটে থাকা এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অন্যতম উদ্যোক্তা সংবাদকর্মী বাটিং মারমা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন সময় পানি সংকট নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে সমস্যার কথা জানতে পারেন। মানবিক জায়গা থেকে গত দুই বছর ধরে চিম্বুক ও নীলগিরির বিভিন্ন পাড়ায় নিজ উদ্যোগে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছি। চলতি বছরও রেড ক্রিসেন্ট, জেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে পানি সংকটে থাকা এলাকায় পানি সরবরাহ করে যাচ্ছি।
জানতে চাইলে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বলেন, বান্দরবান জেলায় সুপেয় পানির সংকট নিরসনে বান্দরবান ও লামা পৌরসভায় এডিবির অর্থায়নে দুটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আরও দুটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদন পেলে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সুপেয় পানির সংকট কমে যাবে বলে মনে করি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com