চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কৃষকেরা লাভজনক ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। ভুট্টা উপজেলার কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নতমানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। গরু, হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট চাহিদা আছে।
কম সময়ে ও ভূগর্ভস্থ পানি কম ব্যবহার করতে রবিশস্য আবাদের জন্য কৃষকেরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূল ও ভুট্টায় পোকার আক্রমণ না থাকায় তারা ভালো ফলনের আশা করছেন। অনাবাদি ও এক ফসলি জমিতে ভুট্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। পতিত জমিতে ভুট্টা আবাদ করে বাড়তি আয় করছেন তারা। আগামীতে এর পরিধি বাড়বে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় ৪৬ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়। ২০২৩ সালে আবাদ দাঁড়ায় ৩৬ হেক্টরে। চলতি বছর আরও ১০ হেক্টর বেড়েছে।
জানা গেছে, উপজেলায় একাধিক পোল্ট্রি ফিড হ্যাচারি আছে। এসব হ্যাচারিতে ফিড উৎপাদনের জন্য প্রতি বছর ৫০০ টনেরও বেশি ভুট্টা স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহের পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। তাই অনেক পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কৃষকদের চাষের খরচ দিয়ে ভুট্টা আবাদে আগ্রহী করে তুলছে। অনেক গরুর খামারি পশুর খাদ্যের জন্য ভুট্টা ব্যবহার করছেন।
কৃষি অধিদপ্তর জানায়, মিরসরাইয়ে রকেট-৫৫, সুপার সাইন, টাইগার-৫৫, কোহিনূর পাইওনিয়ারসহ বেশকিছু জাতের ভুট্টা চাষ হয়। এ ছাড়া হাইব্রিড কেএমএসবি-৪১০ ও বিডব্লিউএমআরআই হাইব্রিড-২ জাতের ভুট্টা বেশি চাষ হয়। উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ করেছে নাহার এগ্রো গ্রুপ। নিজেদের জমিতে চাষের পাশাপাশি অন্য জমি লিজ নিয়ে চাষ করছে। কৃষকদের অনাবাদি ও এক ফসলি জমিতে ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। অনেক কৃষক ভুট্টা চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন। আগামীতে ব্যাপক আকারে কৃষিপণ্যটি চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, মিরসরাইয়ে ডেইরি শিল্প দ্রুত বাড়ছে। গড়ে উঠেছে বড় আকারের একাধিক খামার। এসব ফার্মে গরুকে খাওয়ানোর জন্য প্রতি বছর অনেক ভুট্টার প্রয়োজন হয়। আগে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আনা ভুট্টা দিয়ে প্রয়োজন মেটানো হতো। এখন এখানকার চাষ করা ভুট্টা দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিমজোয়ার গ্রামের ভুট্টা চাষি শেখ মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি গরুর খাবারের জন্য উত্তরবঙ্গ থেকে ভুট্টা কিনে থাকি। কিন্তু চলতি বছর সাড়ে ৭ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। এতে উৎপাদন হতে পারে ৮১ টন। সম্প্রতি পোকার আক্রমণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভুট্টা ক্ষেত। কৃষি অফিসের কোনো সহযোগিতা পাইনি। এমনকি কোনো কৃষি কর্মকর্তা আমার ক্ষেতটি দেখতেও আসেননি।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভুট্টা চাষে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর আবাদ বেড়েছে। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের ধান চাষের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন।’