কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় গত এপ্রিল মাসের শেষ ১২ দিনে পানিতে ডুবে ১২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের বেশিরভাগই মারা গেছে বাড়ির পাশের পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে। প্রতিটি মৃত্যুর সময় অভিভাবকরা শিশুদের সঙ্গে ছিলেন না বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল জেলার মুরাদনগর উপজেলায় বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে চাচাতো ভাই-বোনের মৃত্যু হয়। এর আগে, ২৭ এপ্রিল দেবিদ্বারে পানিতে ডুবে মারা যায় তিন শিশু। এছাড়া, ২৫ এপ্রিল জেলার চান্দিনায় দুই জন, দাউদকান্দিতে দুই জন, ২৬ এপ্রিল বুড়িচংয়ে একজন মারা যান। গত ১৮ এপ্রিল জেলার বরুড়া উপজেলা পানিতে ডুবে মারা গেছে দুই শিশু। মারা যাওয়া ১২ শিশুর মধ্যে ১১ জনেরই বয়স ৮ বছরের মধ্যে।
জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম বাঙ্গরা ইউনিয়নের কালারাইয়া গ্রামে বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে চাচাতো ভাই-বোনের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া দুই শিশুরা হলেন- কালারাইয়া গ্রামের কাজী সেলিম মিয়ার ছেলে কাজী ইয়াছিন আরাফাত (৫) ও ইদন মিয়ার মেয়ে রোজা মনি (৩)।
গত ২৭ এপ্রিল জেলার দেবিদ্বারে চার ঘণ্টার ব্যবধানে তিন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। তারা হলেন- পৌর এলাকার বিজলীপাঞ্জার গ্রামের রঙমিস্ত্রি অলিউল্লাহর মেয়ে রাইসা আক্তার (৭), পৌর এলাকার বড় আলমপুর গ্রামের সোহরাব হোসেন সোহাগের দেড় বছরের মেয়ে সালমা আক্তার এবং উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের ইমান্দি ভূইয়া বাড়ির ইউনুস ভূঁইয়ার মেয়ে হাফসা আক্তার (৫)। এই তিন শিশুরই মৃত্যু হয়েছে বাড়ির পাশের পুকুরে। তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান।
গত ২৬ এপ্রিল জেলার বুড়িচংয়ে পুকুরে সাঁতার শিখতে নেমে মোহাম্মদ হৃদয় হাসান নামের মাদরাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়। ওইদিন বিকেলে উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের কিংবাজেহুড়া এলাকায় মারা যায় সে। হৃদয় একই গ্রামের আবদুল হকের ছেলে।
গত ২৫ এপ্রিল কুমিল্লার চান্দিনা ও দাউদকান্দিতে পানিতে ডুবে চার শিশুর মৃত্যু হয়। ওইদিন সকালে দাউদকান্দি উপজেলার বিটেশ্বর ইউনিয়নের বরকোটা গ্রামে বাড়ির পাশের ডোবা থেকে এবং দুপুরে চান্দিনা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাতলী গ্রামের একটি মাছের খামার থেকে ওই শিশুদের মরদেহ উদ্ধার হয়।
চান্দিনায় মারা যাওয়া শিশুরা হলো- উপজেলার তুলাতলী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মন্টুর মেয়ে নাদিয়া আক্তার (৭) ও এই গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া আক্তার (৮)। অপরদিকে দাউদকান্দিতে মারা যাওয়া দুই শিশু হলো- উপজেলার বরকোটা গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল ইসলাম (৮) এবং একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে রিফাত হোসেন (৭)।
চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সানজুর মোর্শেদ ও দাউদকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।
গত ১৮ এপ্রিল বরুড়া পৌরসভার শুশুন্ডা গ্রামে নানা আনোয়ার হোসেন আনু মিয়ার বাড়িতে বেড়াতে এসে দুই খালাতো ভাই পানিতে ডুবে মারা যায়। তারা হলেন- মোহাম্মদ আশিক (৩) ও আজহার হোসেন (৪)। মোহাম্মদ আশিক জেলার লাকসাম উপজেলার যহরপুর গ্রামের মো. হাফিজুর রহমানের ছেলে। আর আজহার বরুড়া পৌরসভা কাসেড্ডা গ্রামের ওয়াসিমের ছেলে। তারা খেলা করার সময় বাড়ির পাশের ছোট একটি গর্তে পড়ে মারা যায়।
এসব শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। শিশুদের মৃত্যু নিয়ে অভিভাবকদের কেউ থানায় অভিযোগ করেনি বলে জানা গেছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি রোকেয়া বেগম সেফালি বলেন, এভাবে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এমন মৃত্যুর ঘটনা রোধে পুকুর, ডোবা কিংবা জলাশয়ের পাশে শিশুদের খেলাধুলা থেকে বিরত রাখতে হবে পরিবারকে। শিশুরা যাদি পুকুরে গোসল করতে যায় তাহলে অবশ্যই যারা সাঁতার জানেন এমন অভিভাবকদের পাশে থাকতে হবে।
কুমিল্লার বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইকবাল আনোয়ার বলেন, বর্ষা শুরুর আগেই হঠাৎ কুমিল্লায় পানিতে ডুবে এতো শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি আশঙ্কাজনক। এনিয়ে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন ও শিশুদের প্রতি যতœশীল হওয়া উচিৎ।