সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

বাজার থেকে করোনার টিকা তুলে নিচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

মহামারির সময় কোন দেশ আগে কোভিডের টিকা পাবে, তা নিয়ে অনেক শোরগোল হলেও সেই বাস্তবতা এখন আর নেই। টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাজার থেকে তারা ভ্যাক্সজেভ্রিয়া বা কোভিশিল্ড টিকা তুলে নেবে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, বাজারে এখন উদ্বৃত্ত টিকা আছে।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, একই সঙ্গে ইউরোপ মহাদেশে ভ্যাক্সজেভ্রিয়া টিকার বাজারজাতকরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। অ্যাস্ট্রাজেনেকা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে করোনার যে টিকা উৎপাদন করে, তার ব্র্যান্ড নাম ভ্যাক্সজেভ্রিয়া। এরপর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট সেই টিকা উৎপাদনের লাইসেন্স পায়। তারা কোভিশিল্ড নামে সেই টিকা বাজারজাত করে।
বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, কোভিড-১৯-এর বিভিন্ন ধরনের টিকা বাজারে চলে আসায় এখন উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভ্যাক্সজেভ্রিয়ার চাহিদা কমে গেছে। এখন আর এই টিকা উৎপাদন ও সরবরাহ করা হচ্ছে না। এর আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকা আদালতে স্বীকার করেছিল, এই টিকার কারণে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, চলতি বছরের মার্চ মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এই টিকা বাজার থেকে তুলে নেওয়ার আবেদন করে। ৭ মে তা কার্যকর হয়। কোভিড মহামারি শেষ হয়ে যাওয়ার পর অ্যাস্ট্রাজেনেকা গত বছর শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস ও স্থূলতাসংক্রান্ত ওষুধ তৈরিতে জোর দেয়।
মহামারির সময় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদন করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। যৌথভাবে উৎপাদিত তাদের টিকা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই গেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বাণিজ্যিক কারণে এই টিকা তুলে নেওয়ার কথা বললেও তাদের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা চলছে। যেখানে মামলাকারীর দাবি, কোভিশিল্ডের ডোজ নিয়ে একাধিক মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আদালতের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে, এই টিকা ব্যবহারের কারণে বিরল ক্ষেত্রে থ্রম্বসিস বা থ্রম্বসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের করুনিয়া নামের এক তরুণী কোভিশিল্ড টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারা গেছেন—অভিযোগ করেছেন তাঁর বাবা বেণুগোপাল গোবিন্দ। ইকোনমিক টাইমসকে তিনি বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট, ভারত সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা—সবাই তাঁর মেয়েসহ আরও অনেক মৃত্যুর জন্য দায়ী।

বেণুগোপাল গোবিন্দের অভিযোগ, এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যে এমন হতে পারে, তার পূর্বলক্ষণ থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তখন ব্যবস্থা নেওয়া হলে এ রকম দুঃখজনক ঘটনা এড়ানো যেত। তিনি মেয়ের মৃত্যুর বিচার চান; প্রয়োজন হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। এ রকম আটটি পরিবার একত্র হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেণুগোপাল গোবিন্দ। তারা সবাই প্রিয়জনের মৃত্যুর বিচার চায়। যারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে এই পরিবারগুলো বদ্ধপরিকর।
এদিকে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, থ্রম্বসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে ৮১ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। এই বাস্তবতায় আচমকা কোভিশিল্ড বন্ধ করে দেওয়ার খবরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা দাবি করেছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার স্বীকারোক্তির সঙ্গে কোভিশিল্ড বাজার থেকে তুলে নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
বিশ্বব্যাপী মহামারি মোকাবিলায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এই কোভিশিল্ড টিকা জীবনদায়ী ছিল বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। এর কার্যকারিতা সারা পৃথিবীতেই প্রশংসিত হয়েছে। কোভিড-১৯–এর নানা ধরর ও উপধরন ছড়িয়ে পড়ার পরও এই টিকা দেশে দেশে ব্যবহৃত হয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শুরুতে বলা হলেও এখন যে মৃত্যুর অভিযোগ আসছে, তা–ও অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে খতিয়ে দেখতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com