অদৃশ্যজগতের বস্তুগুলো বা ভবিষ্যতের ব্যাপারে আগাম কিছু বলতে পারা অথবা কাশফ হওয়া কোনো ব্যক্তির দ্বিনি পূর্ণতার প্রমাণ নয়। আর তা আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিদর্শনও নয়। এ ধরনের কাশফ হওয়ার জন্য মুসলমান হওয়া বা সুস্থ জ্ঞানের অধিকারী হওয়াও শর্ত নয়। অমুসলিম ও পাগল ব্যক্তিও এমন জ্ঞান লাভ করতে পারে।
ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘শরহে আসবাবে’ মস্তিষ্কের রোগ অধ্যায়ে লেখা হয়েছে, অনেক পাগলের ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হয়ে যায়। আর অবিশ্বাসী ও পাপাচারীদের ভবিষ্যদ্বাণী শুদ্ধ হওয়ার অসংখ্য ঘটনা ও প্রমাণ রয়েছে। কুদরতুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি ছিল। এমনিতেই তার কাছে কবরের ভেতর মানুষের অবস্থা প্রকাশ পেতে লাগল এবং সে যে ভবিষ্যদ্বাণী করছিল তা শুদ্ধ হতে থাকল। অথচ লোকটি ঠিকমতো নামাজই পড়ত না। যেমন একবার সে একটি কবরের কাছে গিয়ে বলল, এই কবরের লোকটি কবরে দাঁড়িয়ে চন্দন কাঠের তাসবিহ পাঠ করছেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, কবরবাসী ব্যক্তি চন্দন কাঠের তাসবিহ বেশি পছন্দ করতেন এবং সব সময় তা সঙ্গেই রাখতেন। মৃত্যুর সময় তিনি তাঁর এক বন্ধুকে বলে যান, যেন তাঁর দাফনের সময় কবরে চন্দন কাঠের তাসবিহটি দিয়ে দেওয়া হয়। অসিয়ত অনুসারে কবরে তাসবিহ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আরেকবার কুদরতুল্লাহ এক ব্যক্তির কবরের কাছে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে শুরু করল। হঠাৎ সে চমকে উঠে বলল, এই কবরে শাস্তি হচ্ছে। শাস্তির কারণ হলো- আমানতের খিয়ানত করা। এক ব্যক্তি তার কাছে আমানত রেখেছিল। অতঃপর সে আমানত ফেরত চাইলে কবরস্থ ব্যক্তি তা অস্বীকার করে। অথচ কুদরতুল্লাহর সঙ্গে এই ব্যক্তির পরিচয় ছিল না এবং তার সম্পর্কে কোনো ধারণাও সে রাখত না। অতঃপর কবরস্থ ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে।
মোটকথা, অদৃশ্যজগতের বস্তুগুলোর এসব কাশফ শরীরের একটি অদৃশ্য শক্তির অধীনে থাকে, যা অবিশ্বাসী, পাপাচারী ও পাগলের মধ্যেও থাকতে পারে এবং তারাও বিভিন্ন বস্তু সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। আর তা সত্য হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। সুতরাং এসব জিনিসের ওপর ভিত্তি করে কাউকে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বা বুজুর্গ বলার সুযোগ নেই। বর্তমান যুগের লোকেরা অস্বাভাবিক ও আশ্চর্যজনক বিষয়গুলো খুব বেশি পছন্দ করে। কেউ যদি অদৃশ্যের দু-একটি সংবাদ বলতে পারে, কারো ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়, তবে তারা তার ভক্ত হয়ে যায়। এসব ভবিষ্যদ্বাণী করা ব্যক্তিদের অনেকেই নিজেরা পথভ্রষ্ট থাকে এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করতে থাকে।
হক ও বাতিল, গ্রহণযোগ্য ও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার প্রকৃত মাপকাঠি হলো ইসলামী শরিয়ত ও সুন্নতে নববীর অনুসরণ। এই মৌলিক মাপকাঠির বিচারে যে সঠিক ও যথার্থ বলে বিবেচিত হবে না, সে কখনো অনুসরণযোগ্য নয়, বরং সে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত। যারা শরিয়তের অনুসরণ এবং নবীজি (সা.)-এর সুন্নত জীবনে ধারণ করতে পারে না, তাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাদের থেকে কাশফ ও অস্বাভাবিক কিছু প্রকাশিত হলেও প্রভাবিত হওয়া যাবে না। সূত্র: মাজালিসে হাকিমুল উম্মত থেকে মুফতি আবদুল্লাহ নুরের ভাষান্তর