রাজধানী ঢাকা শহরের লক্কড়-ঝক্কড় বাস নিয়ে চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ঢাকায় যে বাসগুলো চলে, ভীষণ খারাপ অবস্থা, গরীব-গরীব, জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। জরাজীর্ণ বাসগুলো দেখতে কেমন! আমরা লজ্জা পাচ্ছি, আমাদের মালিক সাহেবেরা কি লজ্জা পান না, বিদেশে গিয়ে দেখেন না? ঢাকা শহরে যে বাস চলে তার চেয়ে আফ্রিকার অনেক ছোট শহরের বাস সুন্দর। রোববার (১৯ মে) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) আয়োজিত ঢাকা মেট্রোরেলের ব্রান্ডিং সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বসবাসযোগ্য ১৪০টি দেশের মধ্যে ১৩০ এর পরে আমাদের অবস্থান। এটা দেশের উন্নয়নের সঙ্গে মেলে না। এ শহরে এত দামি গাড়ি চলে, কিন্তু বাসের অবস্থা এত খারাপ কেন! বারবার কথাবার্তা বলেও সমাধান করা যায়নি। এ অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতেই হবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এসব বাসের কেন এত জরাজীর্ণ চেহারা! উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রদের বলবো—আপনারা এ ব্যাপারটা দেখুন। আপনাদের কর্মপ্রয়াসের সঙ্গে এটি সামঞ্জস্য ও সংগতিপূর্ণ নয়।
মেট্রোরেলের বিভিন্ন স্থাপনায় অপরিকল্পিত ব্যানার-পোস্টার ও রেলে যাত্রীদের অসচেতনতায় হতাশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী শেষ। বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে হলে ঢাকাকে ও সিটিজেনকে স্মার্ট করতে হবে। মুখে ‘লিপ সার্ভিস’ দিয়ে তো লাভ নেই। সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেট্রোরেলের যে সুবিধা জাপান দিয়েছে, এখানে শব্দদূষণ নেই, অপরিচ্ছন্নতা কিংবা নোংরামি নেই। অথচ আমরা ব্যবহারে মনোযোগী নই। মেট্রোরেল আমাদের মূল্যবান সম্পদ। এর ভালো ব্যবহার আমাদের শিখতে হবে।
মেট্রোরেলে ভ্যাট বসানো ভুল সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) জনপ্রিয় পরিবহন মেট্রোরেলে হঠাৎ করে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের ঘোষণা দিলো। এ সিদ্ধান্তটা ঠিক নয়। এতে করে মেট্রোরেলের সুনাম নষ্ট হয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এটা পুনর্নিবেচনার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নূরীর সভাপতিত্বে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন— ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, জাইকা বাংলাদেশের মুখ্য প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহোদি।
ভ্যাট বসলে মেট্রোরেলের সুনাম নষ্ট হবে: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এনবিআর মেট্রোরেলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে, এটা হতে পারে না, ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ভারতে মেট্রোরেলে কি ভ্যাট আছে? ভারতে ভ্যাট নেই আমরা কেন করবো? আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন। গতকাল রোববার (১৯ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা মেট্রোরেলের এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট বসলে মেট্রোরেলের সুনাম নষ্ট হবে। আমি মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি তুলে ধরেছি। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঢাকা সিটি, যেটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নে অর্জনে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশের রাজধানী এখন ইকোনমিস্টের পর্যবেক্ষণে মোস্ট আন বিলিভ্যাবল সিটি অব দ্য ওয়ার্ল্ড।
বহির্বিশ্বের পরিবহনের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, এই শহরে যে বাসগুলো চলে, এখানে এত গরিব বাস। টিভিতে দেখি আফ্রিকান ছোট ছোট গাড়ি চলে, সেগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। অথচ এই শহরের বাসগুলো জরাজীর্ণ। কাদের বলেন, এই জরাজীর্ণ বাস নিয়ে আমরা মিটিং করে বিআরটিএর সঙ্গে কথা বলেও সমাধান করতে পারিনি। ঢাকার সঙ্গে এসব যায় না। আজ আমাদের বুড়িগঙ্গা শেষ, কর্ণফুলীও শেষ। তিনি বলেন, আমাদের মেট্রোরেল অনেক সুন্দর, শব্দদূষণ নেই। অথচ পিলারগুলো পোস্টার দিয়ে ভরা। অপরিচ্ছন্ন নোংরা। মেট্রোরেল আমাদের সম্পদ। ২০৩০ সালে আমাদের টার্গেট ছিল ৬টি এমআরটি লাইনের যে কাজ শেষ হবে। ১ ও ৫ এর গ্রাউন্ড ম্যাপিং হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ব্রেইনে আজ মেট্রোরেল, এলিভ্যাটেড এক্সপ্রেস। এই বাংলাদেশ নিয়ে তার যে বহুমুখী পরিকল্পনা। এই ঢাকা তার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তিনি মেয়রের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাকে সহযোগিতা করুন। যে বাসগুলো চলে, ভীষণ খারাপ লাগে। এত আধুনিক মেট্রোরেল থেকে নেমে যখন গরিব, জীর্ণশীর্ণ বাস দেখতে কেমন লাগে। আমাদের মালিকরা কি লজ্জা পায় না। তারা কি বিদেশে যান না, দেখেন না। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নূরীর সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, জাইকা বাংলাদেশে প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহোদি।