বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ০১:৪০ অপরাহ্ন

স্বামীর আনুগত্যে ইবাদতের তৃপ্তি

মীযান মুহাম্মদ হাসান
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪

আমাদের কর্মব্যস্ততা যখন বেড়ে চলছে তখন স্বভাবতই নারী-পুরুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান সময়ে ইলমে দ্বীন তথা কুরআন ও হাদিসের ইলম অর্জনের সহজলভ্যতা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে আমল ও ইবাদতের প্রতিও অনেক বেশি আগ্রহী করে তুলছে। এটি একটি ভালো দিক এবং আশাজাগানিয়া সংবাদ। অনেক নারীই পর্দা হিজাব নিকাবে আগ্রহী হচ্ছেন। দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করছেন। ইলম চর্চাসহ অনেক দ্বীনি খেদমত করছেন। ঘরের কাজের পাশাপাশি কেউবা বাইরে কর্মের জন্য ছুটছেন। কর্মব্যস্ততার পরও আবার ক্লান্তিহীন ইবাদতের দিকে ঝুঁকছেন। নফল নামাজ রোজা কুরআন তিলাওয়াত ও দান সদকা ইত্যাদি করছেন। কিন্তু এ জাতীয় নফল নামাজ রোজা ও ইবাদত করার পর অনেক নারীই স্বামী সংসার সন্তানের প্রতি যতœশীল হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। হয়তোবা নফল ইবাদতগুলোকে প্রাধান্য দিতে গিয়েই; অজ্ঞতাবশত কিছুটা উদাসীনতা তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ, স্বামীর প্রতি আনুগত্য না করা। সন্তানের হক আদায়ে ত্রুটি করা ইত্যাদি। আল্লাহর অবাধ্যতা নেই এমন কাজে স্বামীরও আনুগত্য করা হচ্ছে না। নিয়মিত সন্তানের হক আদায় করা হচ্ছে না। তাদের লালন পালন ও দেখাশোনা করা হচ্ছে না। নিকটতম মাহরাম ও প্রবীণ আত্মীয়দেরও সেবা যতœ সম্পর্কে উদাসীনতা প্রকাশ পাচ্ছে। এ জাতীয় বিষয় যদি না জানার কারণে কিংবা অজ্ঞতার কারণে হয়ে থাকে, তবে আমাদের জন্য আবশ্যক হবে- এ জাতীয় বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগী হওয়া ও আমল করা।
সহিহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় এসেছে, সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- একবার ঈদুল আজহা বা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য আল্লাহর রাসূল সা: ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি নারীদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, ‘হে নারী সমাজ! তোমরা দান-সদকা করতে থাকো। কারণ, আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমাদের সংখ্যাই অধিক।’ তারা জিজ্ঞেস করলেন- কী কারণে, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, ‘তোমরা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাকো। আর স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হও।’
এ ছাড়া সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, তোমরা নারীরা খুব বেশি অভিযোগ ও আপত্তি করে থাকো। স্বামীর অবাধ্য হয়ে থাকো। এ জন্য তোমরা দান সদকা করো, এ হাদিস দু’টি থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই, তা হচ্ছে নারীদের জন্য সাধ্যমতো নফল দান সদকা করা এবং নিজ নিজ স্বামীর আনুগত্য করা জরুরি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর অবাধ্যতা নেই, এমন কাজে স্বামীর প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ না করা উচিত। গবেষকরা দাবি করেছেন, একমাত্র অভিভাবক হিসেবে মা-বাবার সঠিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উদাসীনতা ও অবহেলার কারণেই সংসার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কারণ তাদের মা-বাবা কর্মব্যস্ত। অথবা তাদের মধ্যে দ্বীনের সঠিক বুঝ নেই। সঠিক জ্ঞানের অভাব ও সদিচ্ছার কারণেই এমনটি হচ্ছে প্রতিনিয়ত প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে। আফসোসের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দ্বীনি কমিউনিটিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে অনেক নারীই এখন স্বামী সংসার সন্তানের প্রতি চরম উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। এ জন্য আমাদের কর্তব্য হলো- নারীদেরকে তথা আমাদের মা বোন স্ত্রী ও কন্যাদেরকেও যেখানে দ্বীনি পরিবেশ নেই সেই পরিবেশ থেকে বিরত রাখা। তবে হাদিসের ভাষ্য কী? সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তাদের অধীনস্থদের (দায়িত্ব সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করা হবে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামী-গৃহের কর্ত্রী, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। খাদেম তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকেও তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ হাদিসের শেষাংশে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আবারো উঠে এসেছে, ‘তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (বুখারি-৮৯৩)
এ হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, একজন নারীকে তার স্বামী সংসার সন্তান সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা হবে। কাজেই নারীদের জন্য আবশ্যক হবে তারা নিজ স্বামী সংসার সন্তানদের বিষয়ে সচেতন হওয়া।
হজরত আলী রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমার কাছে ফাতেমা রা: অভিযোগ করেন, গম পেষানোর চাকতি ঘোরানোর ফলে তার প্রত্যেক হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। আমি বললাম, তুমি তোমার বাবা (রাসূলুল্লাহর) কাছে গিয়ে যদি একজন খাদেম চেয়ে আবেদন করতে। (ফাতিমা রা: আবেদন জানানোর পর) রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিস বলে দেবো না, যা তোমাদের জন্য দাস খাদেম অপেক্ষা ভালো হবে! তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে, তখন ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে।” (সুনানে তিরমিজি-৩৪০৮) এ হাদিসে আমাদের জন্য শিক্ষা হলো নবীকন্যা ফাতেমা রা:-এর ঘরের কাজ কেমন ছিল?
নবীজী যাকে খুব বেশি ভালোবাসতেন তাকেও তিনি ঘরের কাজে সহযোগিতা করার জন্য কাজের লোক রাখার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছেন। বরং আমলের বিনিময়ে উত্তম প্রতিদানের ঘোষণা করেছেন। এতে পরোক্ষভাবে এ বিষয়টিও উঠে এসেছে যে, ঘরের কাজ নিজ হাতে করা উত্তম আমল। তবে সাধ্য ও সামর্থ্য থাকলে ঘরের কাজে সহযোগিতার জন্য লোক রাখা দোষণীয় নয়; বরং এরও অনুমতি আছে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো এ বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করা যে, গৃহস্থালি কাজ নিজ হাতে করাই উত্তম।
একবার এক নারী শায়েখ নাসির উদ্দীন আলবানি রহ:-কে জিজ্ঞেস করেন, শায়েখ, আমি বিয়ের আগে অনেক বেশি নামাজ, রোজা আদায় করতাম। কুরআন তিলাওয়াত করে শান্তি অনুভব করতাম। নেক আমলে শান্তি পেতাম। কিন্তু এখন আমি এসবের মধ্যে ঈমানের স্বাদ খুঁজে পাই না!
আলবানি রহ: ওই নারীকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার মুসলিম বোন! তুমি তোমার স্বামীর হক আদায় করা এবং তার আনুগত্যের প্রতি কেমন মনোযোগী? এ কথা শুনে মহিলা একটু বিরক্তবোধ করলেন। বললেন, শায়েখ আমি আপনাকে নামাজ, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের কথা জিজ্ঞেস করেছি। আর আপনি আমাকে আমার স্বামীর ব্যাপারে বলছেন!
শায়েখ আলবানি রহ. বলেন, হে আমার বোন! অধিকাংশ নারী এ কারণে ঈমানের স্বাদ ও আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের তৃপ্তি পায় না। কারণ রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, কোনো নারী ওই সময় পর্যন্ত ঈমানের স্বাদ বা তৃপ্তি পাবে না, যতক্ষণ সে নিজ স্বামীর হক আদায় না করবে। (কানজুল উম্মাল-৪৪৮০০)। লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com