বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন

উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রিমাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতকাল রোববার ( রাত আটটা) জানা গেছে রাত ৯টায় সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করবে। কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে ঘূর্ণিঝড় রেমাল তার সর্বোচ্চ শক্তি অর্জন করতে যাচ্ছে রাত ৯ টার মধ্যে। এই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘন্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠার আশঙ্কা রয়েছে। জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, রেমেল সর্বোচ্চ গতিবেগের (১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার) বাতাস নিয়ে উপকূলে আঘাতের কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয়ে জেলাগুলোর জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ব্যাপক প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। আজ রবিবার রাতের জোয়ারের সময় সাতক্ষীরা, খুলনা বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ও নোয়াখালী জেলার নদ-নদী ও চর অ লগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
এর আগে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হয়েছে। ঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা আছে মধ্যরাত নাগাদ।
তিনি জানান, যেসব জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো : খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং অদূরবর্তী দ্বীপ এলাকা। এসব জেলা আঘাতের সবচেয়ে ঝূঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বিকেল তিনটা থেকে চৌদ্দটি জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত সহ দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে। এটি যতই উপকূলের দিকে আসবে ততই দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাত ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাবে।’ তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত নাগাদ সময়ে মোংলার কাছ দিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর আগে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবতী অংশের প্রভাবে দক্ষিণা লীয় জেলাগুলোতে ৮-১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসও হতে পারে। রিমাল-এর গতিবেগ সম্বন্ধে রহমান ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে এটি অত্যন্ত ভয়াবহ হতেও পারে। বাংলাদেশের আবহাওয়াজনিত সতর্ক সংকেতের মাপকাঠিতে এটাই সর্বোচ্চ সংকেত। দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত মানে হলো ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রমকালে বন্দর ঝড়ের তীব্রতার কবলে পড়তে পারে। বন্দরের উপর দিয়ে বা পাশ দিয়েই ঝড় উপকূল অতিক্রম করবে। এরপরে রয়েছে ১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত, যার মানে আবহাওয়ার বিপদ সংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন। রিমাল একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ বালি। এটি ওমানের দেয়া নাম।
তবে, রিমাল নামে আফগানিস্তানে একটি শহর আছে। সেই শহরের নামানুসারেই এটির নামকরণ করা হয়েছে বলে এর আগে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।
বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। গতকাল রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টার পর এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। রাত ৯/১০টা নাগাদ এর মূল অংশ অতিক্রম করতে পারে। একই সঙ্গে মোংলাও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত বহাল রয়েছে বলেও জানান তিনি। ঘূর্ণিঝড় গতিবিধি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিকেলে এর গতিপথ ছিল ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার। অতিক্রম শুরুর পর এটির গতিপথ বেড়েছে। এখন গতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের পুরোটা অতিক্রম করবে মধ্য রাতের পর।
এদিকে রিমালে অতিক্রমের প্রভাবে বিকেল থেকে দেশের উপকূলীয় অ লে দমকা বাতাস বইছে, সঙ্গে আছে বৃষ্টি। বিভিন্ন জেলায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে অনেক গ্রাম। আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছে হাজারো মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
এছাড়াও উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকুলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œা ল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়া সহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অ লের কোথাও কোথাও ভূমিধসে হতে পারে।
ফুফু-বোনকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করতে গিয়ে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেলেন যুবক
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের হাত থেকে ফুফু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে শরীফ (২৪) নামের এক যুবক ভেসে গিয়ে মারা গেছেন। রবিবার (২৬ মে) দুপুরে উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই যুবক অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীফের ফুফু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুর একটার দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন এবং ফুফুকে উদ্ধার করতে যান। এ সময় জলোচ্ছ্বাসে কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত ছিল। সাঁতার কেটে তারা ফুফুর ঘরে যাওয়ার সময় ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ ভেসে যান। এক ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। মহিপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। বাতাসের গতিবেগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন উপজেলার মানুষ। রাতে জোয়ারের পানি আর কয়েক ফুট বাড়লেই বাঁধ ছাপিয়ে তলিয়ে যাবে এলাকা। আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। ৫ নম্বর কয়রা গ্রামের আছাদুল হক বলেন, ‘অন্য সময়ের চেয়ে জোয়ারের পানি ৩-৪ ফুট বেড়েছে। বেলা যত গড়াচ্ছে বাতাসের গতিবেগও বাড়ছে। রাতে কী হবে সেই চিন্তায় কপালে ভাজ পড়েছে মানুষের।’ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মামুনর রশীদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা যেকোনো দুর্যোগের সময় মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় ১১৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের শুকনা খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে, সেজন্য উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি ভবনগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিএম তারিক-উজ-জামান।
তিনি বলেন, গৃহপালিত প্রাণীর জন্যও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্যোগের খবর আদান-প্রদানের জন্য উপজেলা পরিষদে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বেড়েছে। যে স্পটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে জিও ব্যাগ, বস্তা ফেলার কাজ চলছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com