ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। ঝড়ের তীব্রতায় ল-ভ- হয়েছে বসতবাড়ি। রাস্তাঘাট ভেঙে এবং গাছ উপড়ে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক গ্রাম। মেঘনার তীর সংরক্ষণ বাঁধের একাধিক স্থান ধসে পড়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ২২টি গ্রাম। ঝড়ের পর চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও বিদ্যুৎহীন অনেক এলাকা। পানিবন্দি হয়ে অন্ধকারে মানবেতর দিনযাপন করছে লক্ষাধিক মানুষ। ঝড়ের তা-ব থামলেও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় আতঙ্ক কাটছে না তাদের। বাঁধে ধস : ২০১৫ সালে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় মেঘনার তীর সংরক্ষণ বাঁধ। গত রবিবার রেমালের আঘাতে বাঁধের কয়েকটি অংশ ধসে পড়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদসংলগ্ন আলেকজান্ডার সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধের তিনটি পয়েন্টে, রামগতি বাজারসংলগ্ন এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধের তিনটি পয়েন্টে ধস দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন ৩১ কিলোমিটার অংশেরও কয়েকটি এলাকায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্তের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তীব্র জোয়ারে ভাঙন দেখা দিয়েছে বড়খেরী, চরগোসাই, চররমিজ, চরআলেকজান্ডারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। ঝড়ের পর বন্ধ রয়েছে ব্লক তৈরি ও জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। ভাঙন দেখা গেছে বিবিরহাট-রামগতি সড়কের কোরের বাড়ি মোড়সংলগ্ন বেড়িবাঁধেও।
এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে বাঁধ সংস্কারের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি লাখো মানুষ : ঝড়ের সময় অস্বাভাবিক জোয়ারে মেঘনার তীরবর্তী লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চআলেকজান্ডার, চরআবদুল্লাহ, বয়ারচর, তেলিরচর, চরগজারিয়া, বড়খেরী, চরগাজী ও কমলনগর উপজেলার লুধুয়া, মাতাব্বরহাট, নাছিরগঞ্জ, নবীগঞ্জ, মতিরহাট, পাটারীরহাট, চরফলকন, চরকালকিনি, সাহেবেরহাট ও চরমার্টিন ইউনিয়নের অন্তত ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত শুক্রবার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপকূলীয় এলাকাজুড়ে রেমালের ক্ষত এখনও দগদগে। পানিবন্দি দিন কাটছে কমলগর উপজেলার অনেক এলাকার মানুষেরও। নাছিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা রাসেল, শেখ আহমদসহ কয়েকজন জানান, সোমবার দুপুরে তাদের এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগও নেই। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। ভেঙেছে সড়ক, নেই বিদ্যুৎ : রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট থেকে জনতা বাজার সড়কে দুটি কালভার্ট ধসে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। চরগোসাই গ্রামে একাধিক সড়ক ভেঙে গেছে। তীব্র জোয়ারে রামদয়াল বাজার থেকে বিবিরহাট ও রামগতি বাজার পর্যন্ত একাধিক স্থানে ধসে গেছে রাস্তা। খসে গেছে সড়কের পিচ ও ইটের সুরকি। পাশাপাশি বেইলি সেতুর দুই পাশের মাটি সরে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে এ দুটি এলাকার। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দুই উপজেলায় বিপুলসংখ্যক গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ও তার ছিঁড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যা বলছেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তারা কমলনগরের চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফুল্লাহ জানান, তার ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি তিনি প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। একই তথ্য দিলেন রামগতির চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন ও বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাকছুদ মিজান। তারাও জানালেন, রেমালের আঘাতে তাদের ইউনিয়নের অনেক ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নষ্ট হয়েছে। পরিষদের পক্ষ থেকে তারা উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, তিনি উপজেলার মেঘনার তীরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। অবশ্যই তাদের সহায়তা করা হবে। এ প্রসঙ্গে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এরই মধ্যে তারা পরিদর্শন করেছেন। জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের ধসে পড়া অংশ সংস্কারকাজ চলমান। পাশাপাশি প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, ঝড়ের রাতে তিনি সরেজমিনে মাঠে উপস্থিত ছিলেন। ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজখবর নিয়েছেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন।