বর্ষাকাল এখনো আসেনি, কড়া নাড়ছে মাত্র। আকাশজুড়ে কখনো কালো মেঘের ঘনঘটা, কিংবা এক চিলতে রোদের মুখে কালো মেঘের ভিড়। অথবা, হঠাৎ করেই মুষলধারায় বৃষ্টি! জ্যৈষ্ঠের প্রখর রোদের পরে এমন প্রশান্তিই বলে দেয় বর্ষাকালের আগমন বার্তা। আষাঢ়-শ্রাবণ মূলত এ দু’মাস বর্ষাকাল। বর্ষা দ্বারে কড়া নাড়ছে।, তখন তার সঙ্গী হতে গাছে গাছে দেখা মিলে আরেক অতিথির। গ্রীষ্মের প্রখরতা কমাতে যখন আম, জাম, লিচুসহ নানা ফলের ঘ্রাণে মুখর চারপাশ। ঠিক তখনই আগমন ঘটে বর্ষার সঙ্গী কদম ফুলের।
সরু সবুজ পাতার ডালে ডালে গোলাকার মাংসল পুষ্পাধার আর তার থেকে বের হওয়া সরু হলুদ পাপড়ির মুখে সাদা অংশ কদমকে সাজিয়ে তোলে ভিন্নভাবে। একটি ফুলের মাঝে এত ভিন্নতার ছোঁয়া প্রকৃতিতে কদমকে করে তোলে আরও গ্রহণযোগ্য।
বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে কদম ফুল। কদমের মিষ্টি হাসি আমাদের মনে করিয়ে দেয় এ বুঝি বর্ষা এলো। বাংলার গ্রাম ও বনে বনে বর্ষার বারিধারায় কদম ফুলের রেণু ভেসে চলে। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের মিষ্টি সুবাস। বাতাসে দোল খাওয়া কদম ফুলের তালে তালে পাখিরাও নেচে আজ পাগলপারা। গাইতে থাকে মিষ্টি সুরে গান।
বর্ষা এলেই কদম গাছের শাখায় শাখায় পাতার আড়ালে ফুটে থাকা অজস্র কদম ফুলের সুগন্ধ লোকালয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আর তাই তো কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত। দেখতে মনে হয়, প্রকৃতি যেন আজ কানের দুলে সেজেছে কদম ফুল দিয়ে। এ ফুল পথচারীদের একবার হলেও নজর কাড়ে।
বৃষ্টি স্নানে কদম ফিরে পায় তার চিরচেনা রূপ। গাছ গাছে এ ফুলের সমাহার ঘটে। হাজারও গান ও কবিতা দখল করে আছে এ ফুল। কদমের এ রূপের কারণের একে যুগে যুগে কবিরা তাদের কবিতা ও গানের মাঝে অলঙ্কার হিসেবে সাজিয়েছেন। তাই তো পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের সেই বিখ্যাত গানের কথা মনে পড়ে।
প্রাণ সখীরে/ ঐ শোন কদম্ব তলে বংশী বাজায় কে/ বংশী বাজায় কে রে সখী, বংশী বাজায় কে/ আমার মাথার বেণী বদল দেবো, তারে আইনা দে। বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/ আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান/ মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে/ এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান/রবি ঠাকুরের এ গান কে না জানে।
কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। ভাগবত গীতাতেও রয়েছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি।
বর্ষা নিয়ে কবি, সাহিত্যিক ও গায়কদের উৎসাহের কমতি নেই। আর এ রূপসী বাংলা ছাড়া বিশ্বের কোথাও বর্ষার এ স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক রূপ চোখে পড়ে না।
কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে এখন হলুদে সেজেঁছে সর্বত্র। বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে কদম ফুলের। এ বিরামহীন বর্ষনে গাছের শাখে শাখে সবুজ পাতার আড়ালে ফুটে উঠেছে অসংখ্য কদম ফুল। যেখানে সবুজ পাতার ফাঁকে উকি দিচ্ছে হলুদ বর্ণের অসংখ্য কদম ফুল। অনেক শিক্ষার্থীকেই দেখা গেছে কদম ফুল হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।
স্কুল শিক্ষক মশিউর রহমান বাসসকে জানান, বাংলার হাজার ফুলের মধ্যে কদমের সৌন্দর্য অন্যতম। আপাত দৃষ্টিতে আমরা গোল আকৃতির যে একেকটি কদম ফুল দেখি সেটি আসলে অজস্র ফুলের সমারোহ। কদম মূলত বর্ষার ফুল হলেও ফোঁটা শুরু করে জৈষ্ঠ্যের শুরু থেকেই। তবে আষাঢ় মাসেই এ ফুলের সমারোহ বেশি হয়। কদমফুল ছাড়া বাংলাদেশে বর্ষাকাল যেন অসমাপ্ত।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ রহমান বাসসকে বলেন, বর্ষা এলেই বাংলার খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে ভরে ওঠে। সেইসঙ্গে পথে-প্রান্তে কদম গাছে ফুটে থাকে ফুল। কদম গাছের বাণিজ্যিক মূল্য কম থাকায় গাছটি রোপণ কম হয়। তাছাড়া বিভিন্ন সময় ইটভাটায় কম মূল্যে গাছগুলো বিক্রি হয়ে থাকে। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সব ধরনের গাছ রোপণ করার আহ্বান জানান তিনি।-সূত্র: বাসস