তৃণমূল চাঙ্গা করতে ৫ অঙ্গসংগঠনের নেতারা মাঠে
রাজধানী ঢাকায় ‘দুর্নীতি বিরোধী’ সমাবেশ করার কথা ভাবছে বিএনপি। সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ সরকার সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির প্রসঙ্গ দেশজুড়ে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দলটির প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবাদমূলক কী কী কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে, তা নিয়ে গত সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, বৈঠকে বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতির বিস্তার নিয়ে নেতারা আলোচনা করেছেন। কেউ কেউ বৈঠকে ঈদের পরে ঢাকায় দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এর আগে এ বিষয়ে দলটি একটি লিফলেট প্রকাশ করবে, যা সারা দেশে সাংগঠনিক কর্মসূচি হিসেবে বিতরণ করা হবে।
আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতি নিয়ে বিএনপির নেতারা এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে কথা বলছেন। ‘ইনস্টিটিউশন হিসেবে আজ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর ইজ্জত-সম্মান কোথায়’ গত সোমবার এক আলোচনা সভায় এমন প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনার প্রেক্ষিতে বিএনপির একটি কমিটি ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি নয়, আর্থিক সেক্টরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের দুর্নীতিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে দলটি একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করতে পারে। প্রতিবেদনে দুর্নীতিসহ দেশের বর্তমান সঙ্কট যেমন তুলে ধরা হবে, তেমনি সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় নিয়েও কিছু সুপারিশ থাকবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রধানত তিনটি কারণে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেগুলো হলো- লাগামহীন লুটপাট, অব্যবস্থাপনা এবং অযোগ্যতা। দলটির অভিযোগ, ব্যাংকিং ও সেবাখাতসহ প্রায় প্রতিটি সেক্টর এখন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এর পাশাপাশি চলছে লুটপাট ও টাকা পাচার। এর সাথে ক্ষমতার ঘনিষ্ঠ লোকেরাই জড়িত, যে কারণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ও আন্দোলন প্রসঙ্গে বিস্তারিত পর্যালোচনা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করার বিষয়ে কেউ কেউ মতামত দিয়েছেন। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি দিন নির্ধারণ করে আলোচনা হতে পারে বলে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বৈঠকে দল পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সাংগঠনিক ইউনিটগুলো পুনর্গঠনের বিষয়ে নেতারা একমত হয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় জাতীয় কাউন্সিলও করা প্রয়োজন বলে বৈঠকে মতামত এসেছে। জানা গেছে, তৃণমূল সংগঠনকে চাঙ্গা রাখতে ইতোমধ্যে বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশনায় সারা দেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে বিএনপির তিনটি অঙ্গসংগঠন। বৈঠকে সেটি অবহিত করা হয়। ছাত্রদল ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী এবং মাদারীপুর জেলাসহ আরো কয়েকটি জায়গায় কর্মী সম্মেলন করেছে। এসব সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির উপস্থিত ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দু’টি টিম পৃথকভাবে গত ১৭ মে থেকে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহীতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম সফর করেছে। অন্য দিকে সংগঠনের সভাপতি এস এম জিলানীর নেতৃত্বে আরেকটি টিম ময়মনসিংহ মহানগর ও দক্ষিণ জেলা সফর করে সেখানে বিগত আন্দোলনে আহত-নিহত নেতাকর্মীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানো ছাড়াও এসব ইউনিটের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। এ ছাড়া চাঁদপুর, কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজবাড়ী, নোয়াখালী, ফরিদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সভা করেছেন দলটির নেতারা।
যুবদলও সংগঠনকে সুসংগঠিত, শক্তিশালী ও গতিশীল করতে জেলা সফর শুরু করেছে। দেশের ৮২ সাংগঠনিক জেলায় পর্যায়ক্রমে সফর করবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। এজন্য যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে ৩৫ টিমে বিভক্ত করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা সুবিধাজনক সময়ে তাদের নির্ধারিত জেলা কিংবা সাংগঠনিক ইউনিট সফর করবেন। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না গতকাল এ প্রসঙ্গে বলেন, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তৃণমূলকে আরো উজ্জীবিত ও সক্রিয় করা। সফরকালে প্রতিটি টিম বিগত আন্দোলনে আহত, নিহত কিংবা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াবেন, তাদের উৎসাহ দেবেন এবং সবার খোঁজখবর নিবেন। সাংগঠনিক কোনো দুর্বলতা থাকলে সেটিও তারা চিহ্নিত করবেন। সারা দেশে কর্মিসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল ও শ্রমিকদলও। এ জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমও গঠন করেছে সংগঠন দুইটি।