সাবেক পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার জন্য এবং তাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে’ এক আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের সময় তিনি (বেনজীর আহমেদ) র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। তখন তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, সেই সরকারকেই, সেই দলকেই ভোট দিন, যারা উন্নয়ন করছে, উন্নয়ন করতে চাচ্ছে, আমরা উন্নয়নের পক্ষে আছি। আর বিরোধী দলকে সে নিপীড়ন নির্যাতন করেছে। বেআইনিভাবে হত্যা করেছে। গুম করেছে, খুন করেছে এবং মিথ্যা মামলা দিয়েছে। গায়েবি মামলা সেই (বেনজীরের দায়িত্ব পালনের সময়) সময়ের তৈরি ছিল।
বেনজীর আহমেদকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, বেনজীর সাহেব ছিলেন পুলিশ বাহিনীর প্রধান, র্যাবের প্রধান। যখন পত্রিকাগুলোতে তার অপকীর্তি, চুরি, দুর্নীতি বেরিয়ে আসছে, তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সে কী আওয়ামী লীগ করেন।
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাই তো চিহ্নিত সন্ত্রাসী, এটা জেনেও তাকে সেনাপ্রধান করেছিল। এরপর তাদের (আওয়ামী লীগের) নির্বাচনে পার করে নিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে। সেটা হচ্ছে যে, প্রাইমারি স্কুলের পাঠ্যবইয়ে এমন সব কারিকুলাম আনছে যে, আমাদের কৃষ্টি-কালচারের বিরুদ্ধে, আমার ধর্মের বিরুদ্ধে।
অথচ কখনোই কোনো কাজে ওইভাবে চিন্তা করিনি। আমরা বড় হয়েছি, ইসলামিক যে চিন্তাধারা সেই চিন্তা আমাদের ধর্মের মধ্যে বেরিয়েছে। আজকে সেখান থেকে সম্পূর্ণভাবে বের করে নিয়ে ধর্মহীন একটা রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফখরুল বলেন, ভোটাধিকারের সেই অবস্থাটা আমাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষজন ভোট দিয়ে যাতে তার নিজস্ব পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারি তার ব্যবস্থা করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি, সেজন্য আমাদের সংগ্রাম-লড়াই করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব নির্বাসিত আছেন মিথ্যা মামলায়, তাকে ফিরিয়ে আনার লড়াই করতে হবে। সর্বোপরি দেশের মানুষকে মুক্ত করবার জন্য আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে। এই সংগ্রাম-লড়াই আমার জন্য নয়, এখানে যারা মঞ্চে বসে আছেন তাদের জন্য নয়, এই সংগ্রাম দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য। এই সংগ্রামের ডাকে সকলে সাড়া দিয়ে দল-মতনির্বিশেষে সবাই মিলে গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে, যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশে যে দানব গত ১৫ বছর ধরে আমাদের ঘরের মধ্যে, বুকের মধ্যে চেপে বসে আছে, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে, একে সরাতে না পারলে কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে না। আমাদের ভোটের অধিকার নেই, আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকে দেখেন, ভারত বর্ষে ভোটের অধিকার আছে বলেই তারা অন্তত মোদীর তিনবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার যে ইচ্ছা-ভাবনা, সেটাকে কিন্তু তারা (জনগণ) রোধ করে দিয়েছে। আজকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা পাচ্ছে না।
ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মাওলানা মোহা. কাজী আবুল হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।