টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তার দল বিজেপি আগের দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও এবার এনডিএ জোটসঙ্গীদের কাঁধে ভর করে ক্ষমতায় বসতে হয়েছে মোদীকে। তার জন্য মিত্রদের দিতে হয়েছে ১১টি মন্ত্রীপদ। কিন্তু সেই মন্ত্রণালয় বণ্টন নিয়েই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এনডিএ জোটে। ক্ষমতা ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছে বিজেপির দীর্ঘদিনের মিত্র শিবসেনা।
মোদী ৩.০ সরকারে কোনো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ পায়নি একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা। কেবল একটি প্রতিমন্ত্রী পদ পেয়েছে মহারাষ্ট্রের দলটি। এ নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ এবং পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন শিবসেনার সংসদ সদস্য শ্রীরঙ্গ বার্নে। যদিও দলটির আরেক নেতা শ্রীকান্ত শিন্ডে স্পষ্ট করেছেন, তারা নিঃশর্তভাবেই মোদী সরকারকে সমর্থন করছে এবং এর সঙ্গে ক্ষমতার জন্য দরকষাকষি বা আলোচনা জড়িত নয়।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে মাওয়াল আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন শিবসেনার শ্রীরঙ্গ বার্নে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পর গত সোমবার তিনি বলেন, শিবসেনা বিজেপির পুরোনো মিত্র। আমরা প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপদ আশা করছিলাম। মন্ত্রিত্ব বণ্টনে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমরা বিজেপির তৃতীয় বৃহত্তম মিত্র। অনেক কম আসন পাওয়া অন্য মিত্ররাও মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আমাদের প্রতি বৈষম্য হয়েছে।
তার এই অনুভূতি দলীয় প্রধান একনাথ শিন্ডেকে জানানো হয়েছে বলেও জানান শ্রীরঙ্গ। এদিন ‘অন্য মিত্র’ বলতে শিবসেনার এই নেতা মূলত লোক জনশক্তি পার্টির (রাম বিলাস) চিরাগ পাসওয়ান এবং হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার জিতন রাম মাঝিকে বুঝিয়েছেন। পাসওয়ানের দল এবারের নির্বাচনে পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছে এবং পাসওয়ান নিজে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তবে শিবসেনার আসল জ্বালা জিতন রাম মাঝিকে নিয়ে। নির্বাচনে দল মাত্র একটি আসন জিতলেও পূর্ণ মন্ত্রীর পদ পেয়েছেন তিনি। বিপরীতে, শিবসেনা সাতটি আসনে জয় পেলেও মন্ত্রিসভায় পেয়েছে কেবল একটি প্রতিমন্ত্রী পদ।
শুধু শিবসেনা নয়, মন্ত্রিত্ব বণ্টন নিয়ে হতাশ অজিত পাওয়ারের এনসিপিও। দলটির নেতা প্রফুল্ল প্যাটেল গত রোববারই বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্বতন্ত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করা তার জন্য পদাবনতি হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, তিনি এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারে পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। প্রফুল্ল প্যাটেল সাংবাদিকদের বলেন, গত রাতে আমাদের জানানো হয়, আমাদের দল একজন স্বতন্ত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী পাবে। আমি আগে কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ণ মন্ত্রী ছিলাম। তাই এটি আমার জন্য পদাবনতির সমতুল্য।
তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে বিষয়টি বিজেপি নেতৃত্বকে জানিয়েছি। তারা আমাদের বলেছে, কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেবে।
গত ৪ জুন ভারতের নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফল অনুসারে, লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৪০টিতে জয় পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ৯৯ আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় কংগ্রেস। অন্য দলগুলোর মধ্যে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ৩৭, তৃণমূল কংগ্রেস ২৯, ডিএমকে ২২, তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ১৬, জনতা দল (জেডি-ইউ) ১২, শিবসেনা (উদ্ভব) নয়টি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপিএসপি) সাতটি ও শিবসেনা (এসএইচএস) সাতটি আসনে জয় পেয়েছে। সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস