শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

‘ভালোবাসা’ সৃষ্টি করে যে আমল

রাকীব আলী
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪

এ পৃথিবীর প্রত্যেকটা জিনিস জোড়া লাগার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দিষ্ট তৃতীয় আরেকটি জিনিস দিয়ে রেখেছেন। একটি দিয়ে আরেকটা হয় না। অবশ্যই তৃতীয় মাধ্যমের দ্বারস্থ হতে হয়। কাপড়ে-কাপড়ে জোড়া লাগে কী দিয়ে? সুতা দিয়ে। এখানে কি লোহা কাজ করবে? করবে না। একইভাবে, কাঠে কাঠে জোড়া লাগে কী দিয়ে? পেরেক দিয়ে। এখানে কি সুতা কাজ করবে? করবে না। ইটে ইটে জোড়া লাগে কী দিয়ে? সিমেন্ট-বালি দিয়ে। এখানে কি সুতা কাজ করবে? করবে না। তার মানে আমরা বুঝতে পারলাম যে, এই কাজগুলো সম্পাদন হতে তৃতীয় আরেকটি মাধ্যমের প্রয়োজন হচ্ছে যেটি নির্দিষ্ট। ঠিকই একইভাবে, মানুষের দিলে দিলে জোড়া লাগানোর জন্য তৃতীয় আরেকটি মাধ্যমের প্রয়োজন রয়েছে। আর এই মাধ্যমও নির্দিষ্ট। মানুষের দিলে দিলে জোড়া লাগে কী দিয়ে, জানেন? ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসা এমন এক জিনিস, এমন এক নিয়ামত যা পৃথিবীর কোনো কিছু দিয়ে কেনা যায় না। একমাত্র ভালোবাসার মালিক যদি অন্তরে ‘ভালোবাসা’ সৃষ্টি করে না দেন তবে সেটি কখনোই পাওয়া সম্ভব হবে না।
আমরা চাই সবাই আমাদেরকে ভালোবাসুক, আমরা কেউই চাই না যে, কেউ আমাদেরকে ঘৃণা করুক কিংবা আমরা কারো ঘৃণার পাত্রে পরিণত হই। তবে ভালোবাসা চাইলেই পাওয়া যায় না। ভালোবাসা তখনই পাওয়া যাবে যখন ‘ভালোবাসার’ মালিকের বলা পদ্ধতিতে চলব, যখন সব ক্ষেত্রে মালিকের হুকুমকে প্রাধান্য দেবো। আপনি কি জানেন, আল্লাহ কখন মানুষের মনে আপনার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিবেন?
দু’টি বিষয় যদি আমরা ঠিক রেখে চলতে পারি তবে আল্লাহ মানুষের মধ্যে আমাদের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিবেন। সেগুলো কী কী? সেই দুইটি বিষয় নিয়ে আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, রহমান অচিরেই তাদের জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিবেন। (সূরা মরিয়ম, আয়াত : ৯৬)
ঈমান মানে কী? ঈমান শব্দের অর্থ দৃঢ় বিশ্বাস। আল্লাহর পক্ষ থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু নিয়ে এসেছেন সেসব বিষয়কে অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং সে অনুযায়ী আমল করাকে ঈমান বলে। মোটাদাগে, তিনটি জিনিসের নাম ঈমান। প্রথমত, অন্তর দিয়ে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। এ প্রসঙ্গ যে ছয়টি বিষয়ের ওপর বিশ্বাস রাখতে হয় সেগুলোকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মুখ দিয়ে স্বীকার করা। তৃতীয়ত, সে অনুযায়ী আমল করা। এই তিনিটি জিনিসের একটির অনুপস্থিত থাকা মানে ঈমানদার হতে না পারা। মনে রাখবেন, ঈমানদার শুধু মুখে দাবি করার বিষয় নয় অন্তরে ধারণ করার পাশাপাশি আমলে পরিণত করার বিষয়।
নেক আমল কী? নামাজ-রোজার মতো যত ফরজ ইবাদাত আছে সবগুলোই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট নেক আমল। এ ছাড়া একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যত ভালো আমল করা হবে, হোক সেটি সামান্য মুচকি হাসির আমল, মানুষকে সুন্দর পরামর্শ দেয়ার আমল সবই নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। তবে নেক আমলের পূর্বশর্ত হচ্ছে ঈমান আনা। আসমান-জমিনের পুরোটা যদি নেক আমল দিয়ে ভর্তি করা হয় তবুও ওই সব নেক আমলের কোনো দাম নেই, আল্লাহ ওগুলোকে ছুড়ে ফেলবেন যদি ঈমান না থাকে। এ জন্য ঈমান ছাড়া নেক আমল পূর্ণতা পায় না।
যাদের ঈমান ও আমল দুটোই আছে তাদের প্রতি মহামহিম রব শিগগির ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিবেন। তাদের প্রতি মানুষের একটি সফট কর্ণার সৃষ্টি হবে। এ জন্য লক্ষ করে দেখবেন যারা আলেম ওলামা, যারা আল্লাহওয়ালা তাদের প্রতি মানুষের আলাদা টান থাকে, আলাদা ভালোবাসা থাকে। আমরা সাধারণ মানুষ যদি মানুষের ভালোবাসা পেতে চাই তবে আমাদেরকে নিজেদের ঈমান ও নেক আমল নিয়ে পূর্ণ সচেতন হতে হবে। এগুলো নিয়ে বিন্দুমাত্র গাফিল থাকা যাবে না।
টাকা দিয়ে ভালোবাসা অর্জন করা যায় না। সারা দুনিয়ায় যা কিছু আছে তার সবকিছু যদি খরচ করা হয় তবুও কেউ দিলে দিলে জোড়া লাগাতে পারবে না, ভালোবাসা অর্জন করতে পারবে না। কারণ এটা টাকার কাজ নয়; বরং এটা দিলের মালিক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার কাজ। আল্লাহ তায়ালা ঠিক এ বিষয়ে বলেছেন, আর তিনি (আল্লাহ তায়ালা) তাদের অন্তরসমূহের মাঝে পারস্পরিক (ভালোবাসা ও) সম্প্রীতির বন্ধন স্থাপন করে দিয়েছেন; অথচ তুমি যদি দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদও (এর পেছনে) ব্যয় করতে তবুও তুমি এ মানুষদের দিলের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসার বন্ধন স্থাপন করতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এদের মাঝে প্রীতি স্থাপন করে দিয়েছেন; অবশ্যই তিনি পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ কুশলী। (সূরা আনফাল, আয়াত : ৬৩)
লেখক : প্রবন্ধকার




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com