বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দীঘিনালায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ভ্যান-ঠেলাগাড়ি দিয়ে এইচএসসি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা বরিশালে নদীতে চলছে ‘বিমান’ বেনাপোলে ভারতীয় ট্রাক থেকে ফেনসিডিলসহ চালক গ্রেফতার কিডনি বিকল হতে যাওয়া রিকশাচালক সিরাজুলকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন ডোমারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম (বিপিএএ)’র বিদায় সংবর্ধনা নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক পেলেন শুদ্ধাচার পুরস্কার বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালের ১০ লিফটের ৮টিই অচল মাদারগঞ্জে বিক্ষোভ ও হরতাল ঘোষণা : চেয়ারে বসার একদিন আগে উপজেলা চেয়ারম্যান কারাগারে মাইজভান্ডারী গাউছিয়া হক কমিটি কেন্দ্রীয় পর্ষদের সাংগঠনিক সংলাপ উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা দুর্গাপুরে বঙ্গববন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা

দুর্নীতি রোধে ইসলামের ১০ নির্দেশনা

মুফতি ইবরাহীম আল খলীল
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

ইসলাম নীতি ও নৈতিকতার ধর্ম। এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম সব সময় সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আমানতদারি ও বিশ্বস্ততার গুণাবলি অর্জনের নির্দেশনা দেয়। ইসলাম দুর্নীতি প্রতিরোধে আইন ও শাস্তির বিধানের সঙ্গে সঙ্গে আরো কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা ইনসাফপূর্ণ একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করার পথ দেখায়।
জেনে নেওয়া যাক—দুর্নীতি দমনে ইসলাম কী কী নির্দেশনা দিয়েছে।
এক. আল্লাহর ভয় সম্পর্কে সচেতন করা: আল্লাহর ভয় ও আখিরাতের শাস্তি সম্পর্কে সচেতন করার দ্বারা অপরাধ দমন করা যায়। কারণ দুনিয়ায় অপরাধের শাস্তি হোক বা না হোক, আখিরাতে সব অপরাধের বিচার হবে। দুনিয়ায় মানুষের চোখ ফাঁকি দেওয়া গেলেও আখিরাতে আল্লাহর দরবারে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগই থাকবে না; বরং সব কর্মকা-ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে।
সেখানে কোনো বিষয়ে দুর্নীতি, ব্যক্তি বা জাতির হক আত্মসাৎ প্রমাণিত হলে তার জবাবদিহি করতে হবে এবং পরিণামে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬৫)
আল্লাহর সামনে হিসাব দিতে হবে এই মানসিকতা জনসাধারণের মধ্যে সৃষ্টি হলে দুর্নীতি ও অপরাধ কমে আসবে।
দুই. সর্বত্র ইসলামী শিক্ষা: দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ জন্য প্রথমেই পারিবারিকভাবে এ বিষয়ে পরিকল্পনা নিতে হবে। কারণ একজন শিশুর ওপর পরিবারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই প্রত্যেক মা-বাবার উচিত, সন্তানকে সৎ, আল্লাহভীরু ও ইসলামী অনুশাসনের পূর্ণ অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলার সুব্যবস্থা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লোকালয়ের মানুষগুলো যদি ঈমান আনত এবং তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬)
তিন. হালাল-হারাম সম্পর্কে অবগত করা: দুর্নীতি দমন বা সর্বপ্রকার অপরাধ দমনের মূলনীতি হিসেবে ইসলাম হালাল-হারাম তথা পবিত্র-অপবিত্রের মধ্যে পার্থক্য করে দিয়েছে।
বৈধ ও অবৈধের প্রভেদ পরিষ্কার করেছে। যা মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে পবিত্র, তা হালাল ও বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর যা অপবিত্র, তা হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হালালের কল্যাণ ও উপকারিতা এবং হারামের অপকারিতা ও ক্ষতি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না। শুধু তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা কোরো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)
চার. হারাম উপার্জনের প্রতি নিরুৎসাহ করা: অসৎ ও হারাম উপায়ে উপার্জনের প্রবণতা থেকেই মূলত মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, যা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সর্বপ্রকার ক্ষতির মুখোমুখি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) হারাম উপার্জনের প্রতি উম্মতকে নিরুৎসাহ করেছেন। এ ব্যাপারে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, হারাম দ্বারা বর্ধিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মেশকাত )
পাঁচ. পরকালের পুরস্কারের ঘোষণা করা: সততা ও হালাল জীবনযাপনের ফলে ইহকালীন ও পরকালীন পুরস্কারের ঘোষণার মাধ্যমেও ইসলাম দুর্নীতি দমনের পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ একজন মানুষের মধ্যে যখন কিছু পাওয়ার আশা থাকবে এবং সে তা পাবে, তখন সে এর জন্য কষ্ট স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকবে। অনৈতিক ও দুর্নীতিযুক্ত কাজে জড়িত হবে না। কারণ যারা নেক আমল করে তাদের জন্য প্রতিদান আছে। পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে পুরুষ বা নারী ঈমানের সঙ্গে নেক আমল করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তাদের বেহিসাবে রিজিক দেওয়া হবে।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৪০)
ছয়. রাষ্ট্রে সুদ-ঘুষ নিষিদ্ধ করা: দুর্নীতি নির্মূল করতে হলে প্রথমেই সমাজ থেকে সুদ, ঘুষ ও দুর্নীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সমাজ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুষদাতা ও গ্রহীতার প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের দলিল লেখক এবং সুদের দুই সাক্ষীর ওপর অভিশাপ করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
সাত. অধীনদের মধ্যে সুষম বেতন-ভাতা প্রদান: দুর্নীতির একটি কারণ হলো অধীন বা কর্মচারীদের সীমিত বেতন-ভাতা নির্ধারণ। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিখ্যাত উক্তি হলো, তারা (শ্রমিক ও কর্মচারী) তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। কারো ভাই তার অধীনে থাকলে তার উচিত নিজে যা খাবে তাকে তাই খাওয়াবে। নিজে যা পরবে তাকেও তাই পরতে দেবে, তাকে দিয়ে এমন কোনো কাজ করাবে না, যা তার সাধ্যের বাইরে। কোনোভাবে তার ওপর আরোপিত বোঝা বেশি হয়ে গেলে নিজেও তাকে সে কাজে সহায়তা করবে। (সহিহ বুখারি)
আট. সততার সঙ্গে নিয়োগদান: রাষ্ট্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হলো অযোগ্য ও অসৎ ব্যক্তিদের অসদুপায়ে চাকরি, নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রদান। কর্মকর্তাদের কাছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পবিত্র আমানত। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দায়িত্ব আমানত হিসেবে সাব্যস্ত করে বলেছেন, আমানত নষ্ট হতে থাকলে তোমরা কিয়ামতের প্রতীক্ষায় থেকো। আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কিভাবে আমানত নষ্ট হবে? তিনি বলেন, যখন অযোগ্য, অদক্ষ ব্যক্তিদের কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তখন তোমরা কিয়ামতের প্রতীক্ষায় থেকো।’ (সহিহ বুখারি )
নয়. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: দুর্নীতি প্রতিরোধের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো বিচারব্যবস্থার পূর্ণ স্বাধীনতা। বিচার বিভাগকে প্রভাবমুক্ত রাখতে পারলেই দুর্নীতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মাখজুম গোত্রের এক নারী চোরের ঘটনা কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলল। এ অবস্থায় তারা বলাবলি করতে লাগল—এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে কে আলাপ করতে পারবে? তারা বলল, একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয়তম উসামা বিন জায়েদ (রা.) এ ব্যাপারে আলোচনা করার সাহস করতে পারেন। উসামা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে কথা বলেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারীর সাজা মওকুফের সুপারিশ করছ?’ অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবায় বলেন, ‘তোমাদের আগের জাতিগুলোকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে যখন তাদের মধ্যে কোনো বিশিষ্ট লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অন্যদিকে যখন কোনো অসহায় গরিব সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার ওপর হদ জারি করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা ফাতিমা চুরি করত তাহলে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দিতাম।’ (সহিহ বুখারি )
দশ. সমাজের সবাই সচেতন থাকা: নাগরিক সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেও দুর্নীতি দমনের উদ্যোগ নিয়েছে ইসলাম। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সাধারণ জনগণও এর আওতাভুক্ত থাকবে। কোথাও দুর্নীতি হতে দেখলে সাধ্যমতো প্রতিবাদ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় হতে দেখে, সে যেন সম্ভব হলে তা হাত দিয়ে রুখে দেয়। আর তা সম্ভব না হলে প্রতিবাদী ভাষা দিয়ে যেন তা প্রতিহত করে। আর তা-ও না পারলে সে যেন ওই অপকর্মকে হৃদয় দিয়ে বন্ধ করার পরিকল্পনা করে (মনে মনে ঘৃণা করে), এটি দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক।’ (জামে তিরমিজি)। আল্লাহ তাআলা আমাদের দুর্নীতির করাল থাবা থেকে হেফাজত করুন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com