শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
দাবা খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া আসমা আব্বাসীর ইন্তেকাল রোহিঙ্গা সঙ্কট: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সহায়তা কমছে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় হাতের টানে ঊঠে যাচ্ছে রাস্তার পিচ দেবিদ্বারে ঝূঁকিপূর্ণ সেতুতে চালক ও যাত্রীদের আতংকে পারাপার পাঁচবিবিতে বণিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র বিক্রি শুরু গাইবান্ধায় দিনমজুরের বাড়ীঘর ভাংচুর লুটপাট কোটা বাতিলের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কালীগঞ্জে মিন্টুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের মিছিল ফরিদপুরে টানা চতুর্থ দিনের মতো চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মবিরতি

সীতাকুন্ডে বিলীন হচ্ছে সৈকতের বনাঞ্চল বিপর্যস্ত উপকূল হুমকিতে পরিবেশ

সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো সীতাকুন্ড ও দুর্যোগ কবলিত উপকূলীয় এলাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর, আম্পান, মহাসেন, মোখা, ফনি, হামুন, নার্গিস, আইলা, বুলবুল ও রিমালের মতো শক্তিশালী যে কোনো ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের করালগ্রাস থেকে উপকূলবাসীদের রক্ষায় আশি‘র দশকে সরকারি উদ্যোগে সমুদ্র তীরে গড়ে উঠে উপকূলীয় বনায়ন। শীত-বসন্ত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা‘সহ যে কোন মৌসুমে এ কৃত্রিম বনাঞ্চলে কয়েক যুগ ধরে অবাধে বিচরণ করে আসছে হরিণ, বানর, ডাহুক, কোকিল, কুমির, বক ও চিল‘সহ নানা প্রজাতির পশুপাখি। উপজেলার সমুদ্র সৈকত ও বেড়িবাঁধের সৌন্দর্য রক্ষায় ঝাউবন‘সহ উপকূলীয় বনায়নের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। জোয়ারের প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিনিয়ত জর্জরিত উপকূলীয় এ বনাঞ্চল। এ আঘাতে ঝাউগাছ‘সহ অন্যান্য বৃক্ষ কোথাও উপড়ে গেছে, আবার কোথাও মাটি সরে শুধু শেকড়ের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। আবার কিছু ঝাউগাছ পড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় সৈকতে চিৎকাৎ হয়ে আছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতটি একদিকে হারাচ্ছে সৌন্দর্য অন্যদিকে সেখানে ঘটছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। তাতে হুমকির মুখে সৈকতের জীব-বৈচিত্র্য। আর পর্যটনের ঐতিহ্য ধ্বংসের পাশাপাশি প্রাণ হারাচ্ছে প্রকৃতি। বনরক্ষীদের দায়িত্বহীন কর্মকান্ড‘সহ দুর্বল অবস্থানের সুযোগে একাধিক সংঘবদ্ধ চক্রের যোগসাজশে দিনের পর দিন বৃক্ষ নিধনে উজাড় হচ্ছে উপকূলীয় বনাঞ্চল। অপরদিকে বনাঞ্চল ধ্বংস করে মৎস্য প্রকল্পের নামে চরাঞ্চলের মাটি বিক্রি ও দীঘি খনন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। উপজেলার মুরাদপুর, গুলিয়াখালী, ভাটেরখীল, বাঁশবাড়িয়া, নড়ালিয়া, অলিনগর, মান্দারীটোলা, পশ্চিম সৈয়দপুর, বগাচতর ও মহানগর‘সহ অন্যান্য সমুদ্র সৈকতগুলোর উপকূলীয় বনাঞ্চল ঘুর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস‘সহ জোয়ারের প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাতে জর্জরিত। সাথে যোগ হয়েছে সৈকতের মাটি বিক্রি, মৎস্য চাষের নামে দিঘী খনন ও বৃক্ষ নিধন। মুরাদপুরের ঢালীপাড়ার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ নাসিমুল আবেদীন নওশাদ বলেন, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে ভেসে উপকূলীয় বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সে হারে হচ্ছে না নতুন বনায়ন। নেই সৈকতের বনাঞ্চল রক্ষায় স্থায়ী কোন সরকারি পরিকল্পনা। গত কয়েক বছর ধরে জোয়ারের ঢেউ ও প্রচন্ড স্রোতে ভাঙতে শুরু করেছে ভ্রমণপিপাসুদের প্রাণের এ সৈকতটি। এভাবে ভাঙতে থাকলে সৈকতের সব ঝাউগাছই এক সময় বিলীন হয়ে যাবে। বাঁশবাড়িয়ার আকিলপুরের বাসিন্দা মোঃ ইকবাল উদ্দিন সবুজ বলেন, একটি শিল্পগ্রুপ উপকূলের অদূরে সাগর থেকে বালি উত্তোলন করলে ওই গর্ত ভরাট হতে গিয়ে উপকূলজুড়ে শুরু হয় ভাঙন। ২০১৮ সালে সৈকতটিতে গোসলে নেমে গর্তের চোরাবালিতে ডুবে মৃত্যু হয় ৫ পর্যটকের। উপকূলবাসীদের রক্ষায় সরকার সমুদ্রের মোহনায় বিশাল এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ঝাউবন, বাউল, কেওড়া, বাইন, গড়ান, কাকড়া, গেওয়া, আকশমণি, বাবলা, নীম, ইপিল-ইপিল, নারিকেল, খেজুর, তালগাছ‘সহ নানা প্রজাতির গাছে গড়ে তোলে বনায়ন।
সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় অসংখ্য প্রজাতির গাছ-গাছালিতে ভরে ওঠে এ উপকূলীয় বনাঞ্চল। আবার বেসরকারি ভাবেও চলছে সৈকতে বৃক্ষরোপন। গত ৪ মে থেকে এ মৌসুমে ৩০ হাজার বৃক্ষরোপনের অংশ হিসেবে ইপসা ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর যৌথ উদ্যোগে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের এক কিঃ মিঃ অংশজুড়ে প্রায় ২৫শ তালগাছ লাগানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দু‘টির পরিবেশবান্ধব এ উদ্যোগ উপজেলায় বেশ আলোচিত হয়। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে গড়ে তোলা হয় সাড়ে ১২ একরের ঝাউবাগান।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ঢেউয়ের ধাক্কায় এ সৈকতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। জোয়ারের ধাক্কায় গোড়ালি থেকে বালু সরে ব্যাপক ক্ষতির মূখে উপকূলীয় বনাঞ্চল। উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন বলেন এক সময় বাঁশবাড়িয়া সৈকতে প্রায় সাড়ে ১২ একর ঝাউবাগান থাকলেও বিলীন হতে হতে এখন তা মাত্র আধা একরে দাঁড়িয়েছে। উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব‘সহ সাগরের তীব্র জোয়ার ও প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাতে সীতাকু-ের বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধে দেখা দেয় ভাঙ্গন। উপকূলীয় জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের নিবিড় মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে নিয়মিত মেরামত করায় বিগত ৫ বছরেও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রবেশ করেনি সমুদ্রের লোনা জল। তাতে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও মৎস্য প্রকল্প নিয়ে স্বস্থিতে রয়েছে উপকূলীয় জনসাধারণ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com