বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারীদের যৌক্তিক আন্দোলন সমর্থন করছি। অবিলম্বে এই পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের এবং ছাত্রদের ন্যায়সংগত যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েক দিন যাবৎ ছাত্ররা সরকারী চাকুরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলন করছে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস সমূহ এমনকি তাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানের সহিত দাফন সম্পূর্ণ করা হয়। এগুলো তাদের প্রাপ্য, এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ নানান সুবিধা আছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণপত্রের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ করা। সাংবিধানিকভাবে ও আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান। কিন্তু সংবিধানের ২৮ (৪) এবং ২৯ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারী ও নাগরিকদের পিছিয়ে পড়া অংশ এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এর বাহিরে ব্যতিক্রম হিসেবে কিছু সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে প্রযুক্তি ও মেধানির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় জাতি হিসেবে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী কোনো শ্রেণীতেই কোটা পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না এবং মেধাভিত্তিক বৈষম্যহীন জাতি ও সমাজ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের সাথে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ, অনির্বাচিত, কতৃত্ববাদী সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে অর্থাৎ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জনগণের ন্যায্য দাবিসমূহ দমিয়ে রাখার ঘৃণ্য পুরোনো কৌশলেই তারা ছাত্রসমাজের ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তাই সাধারণ ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিসমূহের সাথে আমারা একমত। আইন ও বিচার বিভাগের দোহাই দিয়ে ছাত্র সমাজের যৌক্তিক দাবিসমূহকে দমানোর সকল অপচেষ্টাই ব্যর্থ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কারণ ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কখনোই দমানো যায় না।
আমরা আশা করি, সরকার সময় থাকতে ছাত্রসমাজের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবিসমূহ মেনে নেবে। ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে এই সমস্যা সমাধানের জন্য আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি দেশের সব কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও কর্মচারী সম্প্রতি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বজনিন পেনশন স্কিম চালু করার জন্য দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করে সরকারি পরিপত্র জারি করেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সম্প্রদায় ও কর্মচারীবৃন্দ এই স্বারক প্রত্যাখান করেছে এবং এর প্রতিবাদ করেছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দান, পরীক্ষা গ্রহণসহ সকল প্রকার কার্মকা- বন্ধ রেখেছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রকৃতপক্ষে এটি এই দেউলিয়া সরকারের দুর্নীতির আর একটি পথ খুলে দেয়া। যেহেতু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম সঙ্কটাপন্ন সেহেতু অন্যান্য খাতসহ শিক্ষকদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে এই পেনশনের টাকা তুলে নিতে চাচ্ছে।
‘সাবেক অর্থ মন্ত্রী লোটাস কামাল সংসদে এই বিল উত্থাপনের ভাষণে বলেছিলেন সর্বজনিন পেনশন স্কিমের টাকা রাখার জন্য সরকার জায়গা খুঁজে পাবে না। সরকারের আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে সর্বজনিন পেনশন স্কিম নামে নতুন স্কিম চালু করা সরকারের দুর্বল আর্থিক খাত মেরামত করার একটা কৌশল। এটি এই অবৈধ ও আর্থিকভাবে দেওলিয়া সরকারের আরেকটি নতুন লুটপাট স্কিম, যার নাম পেনশন স্কীম, প্রত্যয় স্কীম ইত্যাদি।’
তিনি বলেন, সরকার স্কিম বেসরকারি, স্বশাসিত রাষ্ট্রয়াত্ব ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহে সোয়া চার লাখ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে চালু করতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে অর্থাৎ অংশিজনদের সাথে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই স্বেচ্ছাচারী কায়দায় এই বিধান বাধ্যতামূলকভাবে চালু করতে চাচ্ছে অবৈধ সরকার। অথচ এই আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত প্যারায় এটি অপশনাল (ইচ্ছাধীন) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক সমাজের যে আন্দোলন ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই যৌক্তিক ও সমর্থন যোগ্য।
তিনি বলেন, সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতাকে পুঁজি করে শাসক গোষ্ঠীর আশির্বাদ পুষ্ট এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীক লুটেরা সিন্ডিকেট ও কিছু কিছু সরকারি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীরা সীমাহীন লুটপাট করছে। ব্যাংক ও সকল আর্থিক খাত সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে তারা বিদেশে অর্থ পাচার করছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সেরকম পরিস্থিতিতে নাগরিকরা সারাজীবনের অর্জিত সম্পদ কোন ভরসায় এই নতুন লুটপাট স্কিমে বিনিয়োগ করবে? রাষ্ট্রীয় কোষাগার প্রায় শূন্য, ব্যাংকিং খাত প্রায় দেউলিয়া, এরকম লুটেরা তন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য এরকম পেনশন স্কিমের মতো আরো স্কিম চালু করে জনগণের পকেট শূন্যে করতে চায় এই লুটেরা সরকার। সরকার তথাকথিত উন্নয়নের নামে জনগণের ঘাড়ে ব্যয়ের বোঝা চাপাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের বুলি যদি এতই শক্তিশালী হয়ে থাকে তাহলে পেনশন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। অতএব, জনগণ সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও অনৈতিক তথাকথিত পেনশন স্কিমসহ ইত্যকার সকল প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করেছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মচারীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন সমর্থন করছি এবং অবিলম্বে এই পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।