সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

ইসলামী শরিয়তে পর্দার কয়েকটি শর্ত

কাজী সিকান্দার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

‘পর্দা’ শব্দটি মূলত ফারসি। যার আরবি প্রতিশব্দ ‘হিজাব’। পর্দা বা হিজাবের বাংলা অর্থ আবৃত করা, ঢেকে রাখা, আবরণ, আড়াল, অন্তরায়, আচ্ছাদন, বস্ত্রাদি দ্বারা সৌন্দর্য ঢেকে নেওয়া, গোপন করা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায়, নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনের নিমিত্তে উভয়ের মধ্যে ইসলাম কর্তৃক নির্ধারিত যে আড়াল বা আবরণ রয়েছে তাকে পর্দা বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, নারী তার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ। রূপলাবণ্য ও সৌর্ন্দয পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখার যে বিশেষ ব্যবস্থা ইসলাম প্রণয়ন করেছে তাকে পর্দা বলা হয়।
মূলত হিজাব বা পর্দা অর্থ শুধু পোশাকের আবরণই নয়, বরং সামগ্রিক একটি সমাজব্যবস্থা, যাতে নারী-পুরুষের মধ্যে অপবিত্র ও অবৈধ সম্পর্ক এবং নারীর প্রতি পুরুষের অত্যাচারী আচরণ রোধের বিভিন্ন ব্যবস্থা আছে।
পর্দার বিধান: পর্দা ইসলামের সার্বক্ষণিক পালনীয় অপরিহার্য বিধান। কোরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি বিধানের মতো সুস্পষ্ট এক ফরজ বিধান।
পর্দা নারী-পুরষ উভয়ের জন্যই ফরজ। পর্দার বিধান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৯)
হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয়, তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। (তিরমিজি, হাদিস : ১১৭৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট তারাই, যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। ’ (বায়হাকি, হাদিস : ১৩২৫৬)
হঠাৎ দৃষ্টি পড়লে: জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে করণীয় কী—জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে আদেশ করলেন। (মুসলিম, হাদিস : ২১৫৯)
পর্দা পালনের পদ্ধতি
পর্দা পালনের তিনটি পর্যায় আছে; ১. গৃহে অবস্থানকালীন পর্দা ২. বাইরে গমনকালীন পর্দা এবং ৩. বৃদ্ধ অবস্থায় পর্দা।
গৃহে অবস্থানকালীন পর্দা: নারীর প্রধান আবাসস্থল হলো তার গৃহ। গৃহে কিভাবে পর্দা রক্ষা করে চলবে তার নির্দেশনা আল্লাহ তাআলা বলে দিচ্ছেন—‘যখন তোমরা তাদের (নবীপতœীদের) কাছে কিছু চাইবে, পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩)
এ আয়াতে বিশেষভাবে নবীপতœীদের কথা উল্লেখ থাকলেও এ বিধান সমগ্র উম্মতের জন্য ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য। এ বিধানের সারমর্ম নারীদের কাছ থেকে ভিন্ন পুরুষদের কোনো ব্যবহারিক বস্তু, পাত্র, বস্ত্র ইত্যাদি নেওয়া জরুরি হলে সামনে এসে নেবে না, বরং পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নেবে।
বাইরে পর্দা: নারীদের জন্য গৃহের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য ইসলাম প্রয়োজনে নারীকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রী সাওদা (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৯৫)
বাইরে কিভাবে পর্দা করবে তার স্পষ্ট বর্ণনা আল্লাহ তাআলা দিচ্ছেন—‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন (প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার সময়) তাদের (পরিহিত) জিলবাবের একাংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে; ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৯)
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, জিলবাব হলো নারীর এমন পোশাক, যা দিয়ে তারা পুরো দেহ ঢেকে রাখে। অর্থাৎ বাইরে গমনের সময় দেহের সাধারণ পোশাক—জামা, পাজামা, ওড়না ইত্যাদির ওপর আলাদা যে পোশাক পরিধান করার মাধ্যমে নারীর আপাদমস্তক আবৃত করা যায় তাকে জিলবাব বলা হয়। আমাদের দেশে যা বোরকা নামে পরিচিত। এ থেকে বোঝা যায় যে বাইরে গমনের সময় বোরকা অথবা এমন কোনো পোশাক, যার মাধ্যমে পর্দা করা যায় তা পরিধান করে আপাদমস্তক আবৃত করে বের হওয়া আবশ্যক। আর আয়াতে জিলবাবের একাংশ নিজেদের ওপর টেনে দেওয়ার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাথা ও মুখম-ল ঢেকে নেওয়া। যা সাহাবি, তাবেঈ ও নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরদের তাফসির থেকে প্রতিভাত হয়।
নারীর সতর: সতর হলো যা খোলা যায় না বা কেউ দেখতে পারে না। এতটুকু ঢেকে রাখা ফরজ। নারীর সতরের ক্ষেত্রে অবস্থাভেদে পরিবর্ত হয়। নামাজের সময় নারীর সতর হলো মুখম-ল, হাতের কবজি, পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতা ছাড়া পরিপূর্ণ শরীর। পরিপূর্ণ শরীর ঢেকে নামাজ পড়তে হবে। মাহরাম পুরুষের সামনে নারী মাথা, দুই বাহু, হাত, পা ও মুখ খোলা রাখতে পারবে। গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর সতর বা পর্দা হলো পরিপূর্ণ শরীর। তাদের সামনে পরিপূর্ণ শরীর ঢেকে রাখতে হবে।
অন্য নারীদের সঙ্গে নারীর সতর হলো হাত, মুখ, পা, মাথা, পেট ও পিঠ ছাড়া বাকিগুলো। নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত হলো অন্য নারীর জন্য সতর। স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর কোনো সতর নেই। তেমনি স্ত্রীর জন্য স্বামীর কোনো সতর নেই, সব দেখতে পারবে। তবে গোপনাঙ্গ না দেখার বিষয়ে হাদিসে নির্দেশনা এসেছে। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী গোপনাঙ্গ না দেখা উত্তম।
পুরুষের সতর : নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত।
বৃদ্ধ অবস্থায় পর্দা: এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতিশয় বৃদ্ধ নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের অতিরিক্ত বস্ত্র খুলে রাখে। তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৬০)
আয়াতের নির্দেশনা হলো যে বৃদ্ধা নারীর প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না এবং সে বিবাহেরও যোগ্য নয় তার জন্য পর্দার বিধান শিথিল করা হয়েছে। গায়রে মাহরাম ব্যক্তিও তার কাছে মাহরামের মতো হয়ে যায়। মাহরামদের কাছে যেসব অঙ্গ আবৃত করা জরুরি নয়, বৃদ্ধা নারীদের জন্য গায়রে মাহরাম পুরুষদের কাছেও সেগুলো আবৃত করা জরুরি নয়। এরূপ বৃদ্ধা নারীর জন্য বলা হয়েছে, মাহরাম পুরুষদের সামনে যেসব অঙ্গ খুলতে পারবে, গায়রে মাহরাম পুরুষদের সামনেও সেগুলো খুলতে পারবে। (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন : খ- ৬, পৃষ্ঠা-৪৩৯)
ইসলামী পর্দার কয়েকটি শর্ত: ১. মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে নেওয়া। বোরকা বা অন্য কোনো পন্থায় গোটা শরীর ঢেকে রাখা জরুরি। ২. পরিহিত বোরকা ফ্যাশনমূলক না হওয়া। ৩. বোরকার কাপড় মোটা হওয়া, যাতে শরীরের আকৃতি অনুধাবন করা না যায়। ৪. বোরকা ঢিলেঢালা হওয়া। (আবু দাউদ : ২/৫৬৭, মুসলিম : ২/২০৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৮/২৮, তিরমিজি : ২/১০৭)।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com