সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

কোটা বাতিলসহ আরও তিন দাবি অনড় শিক্ষার্থীরা

শাহ্জাহান সাজু:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ 
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি আদায়ে গতকাল রোববার ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি জানাচ্ছেন। এগুলো হলো, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামন থেকে বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে টিএসসি হয়ে শাহবাগ মোড়ে সমবেদ হয়। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দিচ্ছেন। আন্দোলনে বাধা না দিলেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মধুর ক্যানটিনে জড়ো হয়েছেন। এর আগে বেলা আড়াইটার পর থেকে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল ও বিভাগের ব্যানারে খ- খ- মিছিল নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা আসতে থাকেন। বেলা সোয়া তিনটা বাজতে বাজতে গ্রন্থাগারের সামনের সড়ক জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
উত্তাল শাহবাগ: সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। পঞ্চম দিনের মতো শাহবাগেও বিশাল জমায়েত করেছেন আন্দোলনকারীরা। সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র গত ৫ই জুন হাইকোর্টে বাতিল করার পর থেকে তীব্র আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থীরা গত কয়েক সপ্তাহে পদযাত্রা, সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় গতকাল শনিবার ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল তিনটা থেকে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হতে থাকেন তারা।
সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সাইন্সল্যাব, নীলক্ষেত মোড়, চানখারপুল মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল মিছিল ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগের দিকে এগোতে থাকে। প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর এ মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে গিয়ে সেখানে অবস্থান নেন।পরে মিছিলের একটি অংশ সামনে এগিয়ে গিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সংলগ্ন সড়কও অবরোধ করে। শাহবাগ ও বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলনকারীদের ঘিরে পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য অবস্থান নিয়েছেন।
বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিলেও বড় অংশই মূলত জড়ো হয়েছেন শাহবাগ মোড়ে। তারা রাস্তায় বসে সমস্বরে ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’-ইত্যাদি স্লোগানে উত্তাল করে রেখেছেন শাহবাগ এলাকা। গান-কবিতা, গল্পেও চলছে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ‘বাংলা ব্লকেড’, তীব্র যানজট: কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ অবরোধ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রবিবার (৭ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে বিক্ষোভটি মহাসড়কের কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় এসে তীব্র আকার ধারণ করে। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
শিক্ষার্থীরা উভয় পাশের সড়ক বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগানে তারা বলেন, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’; ‘আমার সোনায় বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’; ‘শেখ হাসিনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’; ‘১৮র হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’; ‘কোটার নামে কুঠার দিয়ে মেধার পিঠে আঘাত কেন’; ‘৫২র হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’; ‘ছাত্রসমাজের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আগুন জ্বালো একসঙ্গে’। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজীব মিয়া, আহমেদ মুকুল, রায়হান আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করতে তাদের এই বিক্ষোভ। তাদের একমাত্র দাবি, কোটা প্রথা বাতিল হোক। কোটা প্রথা বাতিলের মাধ্যমে তারা চাকরির সুষম বণ্টন চান।
এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সড়কে বসে ও শুয়ে পড়তেও দেখা গেছে।
এদিকে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই অবরোধে অংশ নেন তারা। একই দাবিতে কুমিল্লা নগরীর পূবালী চত্বর দখল করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী তারা বিকাল ৩টায় আন্দোলন শুরু করেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম মাহিন বলেন, ‘আমার বয়স ১৯। এ বছর গুচ্ছে পরীক্ষায় দিয়ে মেধা তালিকায় কিছুটা পেছনে ছিলাম। কোটা না থাকলে অনায়াসে একটি সাবজেক্ট পেয়ে যেতাম। কোটার কারণে সাবেজেক্ট পাইনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েও একই ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি।’
ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে শিক্ষার্থীদের অবরোধ: বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ অবরোধের পাশাপাশি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের রাস্তাও অবরোধ করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ গতকাল রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে যায় এবং সেখানে অবরোধ করে। এর আগে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে আসেন।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি: ১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে।
২. ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করতে হবে। ৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। ৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এর আগে শনিবার আন্দোলন থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মসূচিতে বলা হয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় এবং মহানগর ও জেলা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শহরে অবরোধ করবেন। এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পঞ্চম দিনের মতো শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে শাহবাগ অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। প্রতিটি হল ও বিভাগ থেকে মিছিল সমেত আন্দোলনকারীরা গ্রন্থাগারের সামনে আসতে থাকেন। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে সরেজমিনে সায়েন্সল্যাব মোড়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। অবরোধে সায়েন্সল্যাব মোড়সহ আশপাশের এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করা না পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র বহাল করতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com