বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

কোটা আন্দোলন: রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে ‘বাংলা ব্লকেড’

শাহ্জাহান সাজু:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার বিকাল ৪ টা ১৫ মিনিটে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ অবরোধ করেন তারা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। কোটা বাতিলের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের (ঢাবি) বড় অংশ শাহবাগের আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। অবরোধ ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুরক্যান্টিনে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। তবে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
গত রোববার শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় অবরোধ করলেও গতকাল সোমবার করেননি। ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। গত রোববার রাজধানীতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। এতে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে যোগাযোগ। সেখান থেকেই শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি আজও চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
‘কোনঠে বাহে জাগো সবাই, কোটা প্রথা বাতিল চাই’: ‘কোনঠে বাহে জাগো সবাই, কোটা প্রথা বাতিল চাই’ স্লোগানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলা ব্লোকেডের অংশ হিসেবে রংপুরের মডার্ন মোড় অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে সারাদেশের সাথে রংপুর অঞ্চলের ছয় জেলার সড়ক যোগাযোগ দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে ব্লোকেড কর্মসূচি পালন করে তারা।
ব্লোকেডে অংশ নেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর কলেজ, বেগম রোকেয়া কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই, কোনঠে বাহে জাগো সবাই’, ‘সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথা কবর দে’, ‘আমার দেশ আমার মা, কোটা বৈষম্য মানবো না’-সহ নানা স্লোগানের প্লাকার্ড হাতে নিয়ে ব্লোকেড কর্মসূচিতে বসে।
স্লোগান আর বক্তব্যে উত্তাল হয়ে পুরো এলাকা। কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে ব্লোকেড করে দেয় মডার্ন মোড়। এতে দুই ঘণ্টা সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের। সেখানে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। দুপুর দেড়টায় দিনের কর্মসূচি শেষ করলে যাতায়াত স্বাভাবিক হয়। ব্লোকেডে বক্তব্য রাখেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী শয়ন কুমার সাহা, জাহিদ হাসান, বাংলা বিভাগের ফরহাদ হোসেন, মুন্না বিশ্বাস, শাহরিন আলম, মারিয়া তাবাসসুম প্রমুখ।
তারা বলেন, ‘কোটায় মেধাবীরা বঞ্ছিত হচ্ছে। সরকারি চাকরতে মেধাবীরা প্রবেশ করতে না পারায় দুর্নীতি-অনিয়ম বাড়ছে। অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য ১০ ভাগ কোটা রেখে বাকি কোটা পদ্ধতি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ব্লোকেড কর্মসূচি চলবে।’ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তার ক্লাশ-পরীক্ষায় অংশগ্রহণন করবে না বলেও ঘোষণা দেন।
রংপুর মহানগর পুলিশের এডিসি (ক্রাইম) উৎপল রায় বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। তাদের কর্মসূচির নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আমরা মোতায়েন হয়েছি। তাদের এই কার্যক্রম যেন সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয়, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পায়, কেউ যেন কোনো বেআইনি সুযোগ-সুবিধা না নিতে না পারে সে জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তাদের কার্যক্রম যতক্ষণ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বজায় থাকবে, ততক্ষণ আমরা তাদের নিরাপত্তা দেবো।’
বাকৃবিতে বাংলা ব্লকেড : তৃতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ: তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার (৮ জুলাই) দুপুর দেড়টায় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাকৃবির জব্বারের মোড় সংলগ্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা থেকে জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি অবরোধ করেন। এর আগে, দুপুর সাড়ে ১২টায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বাকৃবির কে. আর মার্কেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ভবন ঘুরে জব্বারের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এক দফা কর্মসূচি সম্পর্কে তারা বলেন, সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে নূন্যতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ দেশের ছাত্র সমাজ দেশব্যাপী ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা আরো বলেন, কোটা সংস্কার করে মেধাবীদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
কোটা বাতিলের দাবিতে রেলপথ অবরোধ করলেন রাবি শিক্ষার্থীরা: গত ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে সারাদেশের সাথে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় রাজশাহীর।
গতকাল সোমবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ-সংলগ্ন ফ্লাইওভারের নিচের রেলপথে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। এর আগে, সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হল থেকে প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে এক বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, অ্যাকাডেমিক ভবন, মেয়েদের হল ও ছেলেদের হল হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সমাবেশ শুরু করেন তারা। এ সময় রাজশাহী শহরের ভদ্রা থেকে খড়খড়ি বাইপাসের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকুরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে, কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাকোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে, ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা ব্যবহার করতে পারবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, প্রতি জনশুমারির সাথে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ সময় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com