বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ন

সাপে কাটা রোগীরা রাজধানীর কোন হাসপাতালে যাবেন?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪

বৃষ্টি এলেই বেড়ে যায় সাপের উপদ্রব। সঙ্গে বাড়ে মানুষকে সাপে কাটার ঘটনাও। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে এখন সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হলেও রাজধানীতে কোন হাসপাতালে এই চিকিৎসা পাওয়া যাবে এনিয়ে কৌতুহল আছে অনেকের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর সব হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা বা এন্টিভেনম নেই। ফলে রাজধানী ও আশপাশের এলাকার মানুষেরা যদি না জানেন কোথায় গেলে চিকিৎসা মিলবে, তাহলে ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের সব উপজেলা ও জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাপে কাটার চিকিৎসা হবে এবং পর্যাপ্ত এন্টিভেনম থাকবে। সে অনুযায়ী রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতেও এন্টিভেনম থাকার কথা। তবে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে, হাতে গোনা দু একটি হাসপাতালেই আছে সাপে কাটার চিকিৎসা এবং পর্যাপ্ত এন্টিভেনম।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, বারডেম জেনারেল হাসপাতালে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর এক ডজনেরও বেশি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে এন্টিভেনমের সন্ধান মেলেনি। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, এন্টিভেনম নেই, এন্টিভেনমের জন্য আবেদন করা হয়েছে অথবা সাপে কাটা রোগী তেমন একটা আসে না। তাই এন্টিভেনম নেই। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা হয় এবং পর্যাপ্ত এন্টিভেনম আছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। এন্টিভেনমের বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাকে ইমেইল করলেও তিনি কোনও প্রশ্নের দেননি।
তবে এই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মফিজুর রহমান মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন যে এখানে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা হয় এবং পর্যাপ্ত এন্টিভেনম আছে। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে সবধরনের রোগী আসে। সাপে কাটা রোগীও আসে। সাপে কাটা রোগী বেশিরভাগ আশেপাশের এলাকা কেরানীগঞ্জ এবং শরীয়তপুর, মাদারীপুর জেলা থেকে আসে। গত এক মাসে সাপে কাটা রোগী এসেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মফিজ বললেন, হ্যাঁ এসেছে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছে গেছে। সাপে কাটা রোগী ছাড়াও এখানে কুকুরে কামড়ানো রোগী আসে। সবাই বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নেয়।
গত জুনের তৃতীয় সপ্তাহে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সাপে কাটার চিকিৎসা সেবা নেওয়া মিনহাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, আমার বাসা শরীয়তপুর সদরে। জুনের ১৭ তারিখে আমাকে সাপে কাটে। কিন্তু কী সাপ তা জানা ছিল না। বাসায় সবাই অনেক চিন্তায় পড়ে যায়। আমাকে তাৎক্ষণিক ঢাকায় নিয়ে আসে। অ্যাম্বুলেন্সে থাকাকালীন আমার বাবা ঢাকার বেশ কয়েকটা হাসপাতালে সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তারা জানান, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা হয় না। পরে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। তখন সরাসরি ওই হাসপাতালে নিয়ে যায়। মিনহাজুল আরও জানান, আমাকে কিন্তু কোনও বিষাক্ত সাপে কাটেনি। কিন্তু তবুও পরিবারের সবাই আতঙ্কিত হয়ে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তারা ভেবেছেন ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা পাওয়া যাবে। তবে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা যে ঢাকার সব হাসপাতালে হয় না তা আমাদের জানা ছিল না। এজন্য ঠিক কোন হাসপাতালে চিকিৎসা হয় সেটা জানতে আমাদের কষ্ট হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে না থাকলেও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার ফার্মেসিতে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে এন্টিভেনম। চড়া মূল্যে ফার্মেসিতে বিক্রি হচ্ছে তা। মিটফোর্ড হাসপাতাল সংলগ্ন এম এইচ মেডিক্যাল হলে পাওয়া যাচ্ছে এন্টিভেনম। সেই ফার্মেসির এক কর্মচারী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সাপে কাটার ১০ ডোজ এন্টিভেনম ১৪ হাজার টাকা। তবে বেশি বেচাকেনা হয় না। মাঝেমধ্যে কেউ আসে। কেউ বললে আমরা সংগ্রহ করে দিতে পারবো। তিনি জানান, ইনসেপটা কোম্পানির এন্টিভেনমগুলো ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালে এন্টিভেনম নেই। তবে আমরা ইতোমধ্যে এন্টিভেনমের জন্য আবেদন করেছি। এই হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী আসে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে আমি এখানে এসেছি দু’মাস হয়েছে। এর মধ্যে এমন কোনও রোগী আসার তথ্য নেই। এখন যেহেতু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে হয়তো সব সরকারি হাসপাতাল এন্টিভেনম পাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আমিনুল ইসলাম পলাশ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার জানামতে এই হাসপাতালে এন্টিভেনম নেই। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট দফতর এন্টিভেনমের বিষয়ে কথাবার্তা বলেছে। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. আরিফুল বাসার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই হাসপাতালে কুকুর, বিড়াল ও শিয়ালের কামড় খাওয়া রোগীরা আসেন। সবচেয়ে বেশি আসেন কুকুরে কামড়ানো রোগীরা। জন্ডিস, ধনুষ্টংকার, জলবসন্ত, ডিপথেরিয়া, এনফেলোকাইটিস, ভাইরাল হেপাটাইটিস, এআরভি ভ্যাকসিনের প্রতিক্রিয়া ঘটা রোগীরাও এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে সাপে কাটা রোগীদের তেমন একটা দেখা মেলে না। এজন্য চিকিৎসাও হয় না। তবে যেহেতু এখানে আইসিইউ আছে আমরা সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার প্ল্যান করছি। আমরা ডিজি হেল্থ এর কাছে এর জন্য আবেদন করবো।
এন্টিভেনমের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সব উপজেলা, জেলা ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এন্টিভেনম দেওয়া হয়েছে। তারা সাপে কাটার চিকিৎসায় এন্টিভেনম ব্যবহারে সক্ষম। তবে স্পেশালাইজড হাসপাতালগুলোতে দেওয়া হয়নি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com