বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন

পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবরোধ

শাহজাহান সাজু
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪

উত্তাল সারা দেশ পুলিশের ফাঁকা গুলি, টিয়ারশেল, লাঠিচার্জ ও বাধা উপেক্ষা করে গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে অবরোধ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি করার অভিযোগ করেছে। রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের লাঠি চার্জে ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশের বাধা পেরিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাঁদের একটি অংশ বিএসএমএমইউর ফটকের সামনেও অবস্থান নিয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত রোববার ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁরা। প্রথম দুই দিন রবি ও সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তাঁরা। মঙ্গলবার গণসংযোগ কর্মসূচি পালনের পর গতকাল বুধবার আবার সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। তাঁদের এ কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে রাজধানী অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সারা দিনের অবরোধে সড়কে যানবাহন আটকে থাকায় দিনভর চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাজধানীবাসীকে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে আবারও অবরোধের কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা। তবে দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সমবেত হতে কিছুটা সময় নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে সেখানে আসেন শিক্ষার্থীরা। কয়েক শ শিক্ষার্থী সেখানে সমবেত হন। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশও হয়।
আন্দোলনকারীদের এ সমাবেশ থেকে ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। ওই সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে আসেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর এই অবস্থানে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অপর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দলে দলে এসে মধুর ক্যানটিনের সামনে জড়ো হয়েছেন। সেখানে ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতাকর্মীর সমাবেশ দেখা গেছে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মিছিলে বাধা: সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই মিছিল বের করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। মিছিলে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীরা জানান, ঢাকা কলেজের এই মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশের বাধায় তা সম্ভব হলো না। পরে শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করার ঘোষণা দিয়ে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকেন। এর আগে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের প্রধান ফটক থেকে এই মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের এই মিছিলে ইডেন কলেজের কিছু ছাত্রীও অংশ নেন। সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত রোববার থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁরা। প্রথম দুই দিন রবি ও সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তাঁরা। মঙ্গলবার গণসংযোগ কর্মসূচি পালনের পর গত বুধবার আবার সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। তাঁদের এই কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে রাজধানী অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সারা দিনের অবরোধে সড়কে যানবাহন আটকে থাকায় দিনভর চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাজধানীবাসীকে।
সে ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে আবার অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এ লক্ষ্যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সমানে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বিকেল ৫টার দিকে শাহবাগে গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা।
ছাত্রলীগ সভাপতির কক্ষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে মারধর, হল থেকে বিতাড়ন: সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও তাঁর কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের পর ওই ছাত্রকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মোস্তফা মিয়া। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (বাবু), সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন খান ও নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা। অভিযোগপত্র ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনে অংশ নেন শিক্ষার্থী মোস্তফা। বিষয়টি ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদকে জানান ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। পরে ফরহাদ ভুক্তভোগীকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। এতে শঙ্কিত হয়ে বিষয়টি তাঁর (ভুক্তভোগী মোস্তফা) বিভাগের সিনিয়র আরিফ মাহমুদকে জানান তিনি। এ ঘটনার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। হল থেকে নামিয়ে দেওয়ায় আমি আবাসন-সংকটে পড়েছি। বাধ্য হয়ে আমি বাড়ি চলে এসেছি। পরে গত মঙ্গলবার আরিফের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মু. শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে দেখা করেন মোস্তফা মিয়া। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরিফের বন্ধু ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজা। এরপর তাঁকে (শামীম) বিস্তারিত ঘটনা বললে তিনি ফরহাদ হোসেনকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘শিবির ধরছি, নিয়ে আসব নাকি?’ পরে মোস্তফা মিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে গালিগালাজ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান তাঁরা। কক্ষটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের।
ওই কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর মোস্তফা মিয়াকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে তাঁর ফোন চেক করতে শুরু করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেখে রেগে যান ছাত্রলীগের সভাপতি। একই সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার কারণে তাঁকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন তিনি। এ সময় তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘তুই শিবির করিস, স্বীকার কর।’ দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাঁকে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতারা। পরে মোস্তফা মিয়ার সঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতির এক অনুসারী পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের গণরুম থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে মোস্তফা মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। হল থেকে নামিয়ে দেওয়ায় আমি আবাসন-সংকটে পড়েছি। বাধ্য হয়ে আমি বাড়ি চলে এসেছি। বর্তমানে আমি বাড়িতে আছি।’ অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন খান বলেন, মোস্তফা মিয়া নামের কোনো শিক্ষার্থীকে তিনি চেনেন না। এমনকি অতীতেও তাঁর সঙ্গে কোনো ধরনের সাক্ষাৎ হয়নি। এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। কিছুক্ষণ আগেই শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তারপর বলতে পারব।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ হয়ে তিনজন আমাকে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনজন সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ: সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের এক দফা দাবিতে নবম দিনের মতো ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে অবরোধের শুরুতে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গেলে প্রক্টরিয়াল টিমের বাধার মুখে পড়ে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান ফটক পার হলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে অন্তত ১৫ মিনিট বাগ্?বিত-ার পর শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় প্রধান ফটক এলাকায় অন্তত পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য অবস্থান করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁদের এক দফা দাবি না মানা পর্যন্ত অবরোধ চলবে। এর আগে গত বুধবার আট ঘণ্টা, মঙ্গলবার আধা ঘণ্টা, সোমবার সোয়া চার ঘণ্টা এবং রোববার দুই ঘণ্টা; গত সপ্তাহের ৪ জুলাই ৩৫ মিনিট এবং ৩ জুলাই পৌনে দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া ২ জুলাই ২০ মিনিট ও ১ জুলাই ১০ মিনিট সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। অবরোধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, ‘আমরা সব ধরনের অন্যায্য কোটা বাতিল করে এটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পুলিশ বাহিনী আমাদেরকে বাধা দিয়ে থামাতে চায়। স্পষ্ট করে বলতে চাই, হামলা-মামলা করে পুলিশ দিয়ে আমাদের আন্দোলন দমানো যাবে না।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘আমাদের আজকের কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। পুলিশ আসলে কার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে? প্রশ্নপত্র ফাঁসের হয়ে নাকি সাধারণ জনগণের হয়ে? পুলিশ সাধারণ মানুষের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে থাকলে আজকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে বহর নিয়ে এসে বাধা দিত না। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ব্যাপারে পুলিশের তৎপরতা নেই। তা–ই যদি হতো, তাহলে এতক্ষণে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের যথাযথ আইনের আওতায় আনত। পুলিশ সব সময় সাধারণ জনগণের যৌক্তিক আন্দোলনের ওপর হামলা চালায়। তারা যদি ছাত্রশক্তির কথা ভুলে গিয়ে থাকে, তাহলে মনে করিয়ে দিতে চাই, পুলিশের সব বাধা উপেক্ষা করার মতো ক্ষমতা ছাত্রদের রয়েছে।’ ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘এই মহাসড়ক অবরোধ করলে অসুস্থ মানুষ, রোগী ছাড়াও উত্তরবঙ্গগামী মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হয়। এসব ভোগান্তি এড়াতে মহাসড়ক অবরোধ না করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ করেছি। রাস্তা অবরোধ করে আমাদের জনগণ ও যানবাহনের যে ক্ষতি হয়, সেটি দেশের সামগ্রিকভাবে ক্ষতি হয়। ছাত্র ভাইদের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা ধৈর্য ধরে আদালতের দেওয়া একটি মাস অপেক্ষা করুন, রায় নিশ্চয়ই আপনাদের পক্ষে আসবে।’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ীর দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এ নিয়ে বাগ্?বিত-ার একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর কিছুক্ষণ পাল্টাপাল্টি ধাওয়া বন্ধ থাকলেও আনসার ক্যাম্পের সামনে আবার শুরু হয়। বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে সরেজমিনে দেখা গেছে, আনসার ক্যাম্পের সামনে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের কাউকে কাউকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় আহত কয়েকজনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিতে দেখা যায়। বিকেল সাড়ে চারটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে কোটবাড়ীর দিকে রওনা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে তাঁদের কর্মসূচি পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে তাঁরাও পুলিশকে জবাব দেবেন। এ সময় পুলিশ পথ ছেড়ে দিলে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কোটবাড়ীর দিকে এগিয়ে যান।
পুলিশের বাধা ঠেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ: সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বাধা ঠেলে তাঁরা মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকা অবরোধ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে পিছু হটে পুলিশ। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন তাঁরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। ময়নামতি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, কোটবাড়ীতে অবরোধস্থল থেকে মহাসড়কের দুই পাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহন থেমে আছে। হাইওয়ে পুলিশ সড়কে তৎপর আছে। এর আগে বেলা সোয়া তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে কোটবাড়ী এলাকায় যাওয়ার পথে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন সালমানপুরে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে আনসার ক্যাম্প এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আধা ঘণ্টা ধরে চলা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীরা কোটবাড়ীর দিকে রওনা করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অন্তু বলেন, পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। মিনহাজ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কোটবাড়ীর দিকে রওনা দেওয়ার পরপরই পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। তারপর শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে কোটবাড়ী বিশ্বরোডে এসে অবরোধ শুরু করেন।’
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, বিকেলে পুলিশ সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন কেউ কেউ উসকানিমূলকভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়লে আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। তবে পুলিশ কখনোই শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করতে চায়নি। শিক্ষার্থীরা যেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে পারেন, সে জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় পুলিশ বদ্ধপরিকর।
তোপের মুখে অবরোধস্থল ছাড়লেন উপাচার্য: কোটবাড়িতে অবরোধস্থলে গিয়েছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপাচার্য অবরোধস্থলে যান। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সন্ধ্যা ছয়টা ৯ মিনিটের দিকে তিনি অবরোধস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কোটা বাতিলের দাবিতে অবরোধ করতে আসার পথে আনসার ক্যাম্পের সামনে যখন পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিপেটা করেন, তখন উপাচার্য কোথায় ছিলেন। অবরোধস্থল ত্যাগের পর উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও লাঠিপেটায় আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে সেখানে যান। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা আহত হওয়ার ঘটনায় তিনি মর্মাহত হয়েছেন। পুলিশ সুপারকে ফোনে বিষয়টি জানানোর পর শিক্ষার্থীদের পথ ছেড়ে দেয় পুলিশ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে তিনি অবরোধস্থলে যান। সেখানে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা কেন এমনটি করল তিনি জানেন না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com