নানান অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে শুরু হয়েছে ৩দিনব্যাপি কৃষিমেলা। উপজেলা তালিকাভূক্ত ৫৪জন নার্সারি মালিক থাকলেও মেলায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ১১জন। রোববার সকাল সাড়ে দশটায় উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে এ মেলার উদ্বোধন করেন লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মো: আবদুল্যাহ আল মামুন। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল, উপজেলা নির্বাহি অফিসার সৈয়দ আমজাদ হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো: নাজিমসহ প্রমূখ। মেলায় অংশ নেওয়া একাধিক নার্সারি মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবার উন্মুক্ত স্থানে মঞ্চ করে মেলা উদ্বোধন করা হলেও এবার করা হয়েছে উপজেলা পরিষদের হল রুমে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নার্সারি মালিক কিংবা মালিক সমিতির কাউকে ডাকা হয়নি বলেও তারা অভিযোগ করেন। অন্যদিকে একাধিক নার্সারি মালিক জানান, মেলার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে মেলায় সর্বমোট ১৬টি স্টল রয়েছে। এর মধ্যে এক মালিকের অধীনেই ভিন্ন ভিন্ন নামে রয়েছে ৬টি স্টল। সে হিসেবে মেলায় স্ট্রল সংখ্যা মাত্র ১১টি। সবকটি স্টলেই ফল-ফলাদি, ফুল ও ঔষধিগাছের চারাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা স্থান পেয়েছে। নামে কৃষিমেলা হলেও পুরো মেলায় ফলমূল এবং সবজির স্টল রয়েছে মাত্র দুটি। কোন কৃষক নয়, এ দুটি স্টল পরিচালনা করছে উপজেলা কৃষি অফিস। জানা যায়, উপজেলায় মোট নার্সারি মালিক রয়েছেন ৫৪জন। এদের মধ্যে ৬জনের লাইসেন্স থাকলেও সক্রিয় রয়েছে দুটি লাইসেন্স মালিক। লাইসেন্স অনাগ্রহী কেন জানতে চাইলে সততা নার্সারির মালিক সোহেল জানান, সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়েও বেশি টাকা দাবি করায় তারা লাইসেন্স করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। টাকার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি ফি ৬শ টাকা হলেও উপজেলা হতে জেলা হয়ে খরচ চায় ৬হাজার টাকার মতো। উপজেলা নার্সারি মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক বেলাল উদ্দিন জানান, লাইসেন্স করতে সোনালি ব্যাংকে ৫শ ৫০টাকা চালান জমা দিতে হয়। কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রক্রিয়া করে লক্ষ্মীপুর থেকে আনতে আমাদের একজনের ৫হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। সততা নার্সারির মালিক মো: সোহেল এবং বেলাল নার্সারির সত্ত্বাধিকারী বেলাল উদ্দিন জানান, আমরা সবসময়ই অবহেলিত। সরকার কৃষি ও সবুজায়নকে অগ্রাধিকার দিলেও মেলা ছাড়াও আমরা অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে বঞ্চিত। সারাবছর আমাদের কোন খোঁজ খবর থাকেনা। কেবল জুন-জুলাইয়ে মেলা আসলে আমাদের খবর নেওয়া হয়। স্থানীয় বাজারগুলোতে চারা বিক্রির স্থান পাওয়ার জন্য নানান পক্ষের কাছে আমাদের ধরনা দিতে হয়। ইজারাদার এবং বাজারের ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে মূল হাঁটে জায়গা দিতে চান না। এছাড়াও প্রতিবছর খাজনার পরিমান বাড়ানো হয়। যে খাজনা গত বছর ৬০টাকা দিয়েছি, সেটা এখন দিতে হয় ২শ টাকা। বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ জানিয়েও সমাধান পাইনি। এমনটা চলতে থাকলে নার্সারী বা চারা উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত স্থানে করতে চেয়েছি, এমপি স্যারের সময় কম থাকায় ইউএনও মহোদয়ের সিদ্ধান্তক্রমে অনুষ্ঠানটি হলরুমে করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে নার্সারী মালিকদের অংশগ্রহন না থাকা বিষয়ে তিনি জানান, সবাইকে তো বলা হয়েছে, এখন কে আসলো আর কে আসলো না তা তো খেয়াল রাখা সম্ভব হয়নি। নার্সারি মালিকদের বিভিন্ন সময়ে সহযোগীতা না করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, সত্যি বলতে শুধুমাত্র নার্সারি মালিকদের সরকারি বিভিন্ন সহায়তা দেওয়ার সুযোগ নাই, তবে কৃষি জমি থাকা সাপেক্ষ্য কৃষক হিসেবে আবেদন করলে সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি সরঞ্জামসহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।