শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন

বাণিজ্যিক লেনদেনে দ্রুত আধিপত্য হারাচ্ছে মার্কিন ডলার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নীতির মোকাবেলায় নানা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইরান ও রাশিয়ার লেনদেন থেকে ডলার বাদ দেওয়া হয়েছে। ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে সব ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ইরানের সংসদ স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কলিবাফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একপেশে নীতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের আধিপত্য ক্ষুণ্ণ করতে ভুক্তভোগী দেশগুলো চেষ্টা করে আসছে। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেখগুলো ডলারের আধিপত্যের কারণে এ পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। পার্সটুডে জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন অ লের অনেক দেশই ডলারের স্থলে স্থানীয় অথবা অন্য কোনো দেশের মুদ্রা ব্যবহারে আগ্রহী। আমেরিকা ডলারকে নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ হাসিলের জন্যও ব্যবহার করছে যা এখন সব দেশের কাছেই স্পষ্ট। আমেরিকার এই আধিপত্যকামী নীতি ডলারের প্রতি বিভিন্ন দেশের আগ্রহকে কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জোরদার করেছে আমেরিকা, আর এই পদক্ষেপও ডলার বাদ দেওয়ার আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের কবল থেকে মুক্ত হতে নানা অর্থনৈতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমরা রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরঘিজিস্তান ও আর্মেনিয়াকে নিয়ে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের কথা উল্লেখ করতে পারি। মোলদোভা ও কিউবা এরিমধ্যে এই সংস্থার পর্যবেক্ষক সদস্য হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির ওপর পাশ্চাত্যের একচ্ছত্র আধিপত্য মোকাবিলা করার লক্ষ্যে রাশিয়ার নেতৃত্বে যেসব অর্থনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়েছে এটি তার অন্যতম।
এছাড়া আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হলো সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা ও ব্রিকস। বিশ্ববাজারে মার্কিন ডলারের প্রভাব খর্ব করার লক্ষ্যে বর্তমানে একটি অভিন্ন মুদ্রা চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করছে ব্রিকস। বর্তমানে রাশিয়া এবং চীন তাদের বাণিজ্যিক লেনদেনের প্রায় ৭০ শতাংশই সম্পন্ন করছে নিজেদের মুদ্রার মাধ্যমে। লাতিন আমেরিকায় ব্রাজিল এবং আফ্রিকা মহাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকা ডলারের বিকল্প মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেনের পক্ষে। এসব দেশও ডলার মুক্ত বাণিজ্যিক লেনদেন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এরিমধ্যে রাশিয়া ও ইরান বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারকে বাদ দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ডলারে রিজার্ভ রাখার প্রবণতা কমছে। ২০০৩ সালে এটি ছিল ৬৬ শতাংশ, আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা কমে ৫৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেছেন, ডলারের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর তৎপরতা আগের চেয়ে বেড়েছে। কারণ বিভিন্ন দেশ মার্কিন ডলারের উপর তাদের অর্থনৈতিক নির্ভরতার ইতি টানতে চায়। বিভিন্ন দেশের ওপর আর্থিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের মার্কিন নীতি এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। আমেরিকার ব্যাংকিং বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল হার্টনেট সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, ডলারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের পরিণতি ভালো হবে না। সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছেন, ডলারকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে ধরে নিয়ে এর ওপর ইউরোপের নির্ভরশীল থাকা উচিত হবে না এবং কৌশলগত স্বাধীনতা না থাকলে ইউরোপ ইতিহাস থেকে মুছে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা হয়ে উঠেছে চীনা ইউয়ান। রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্যের একটি বড় অংশই ইউয়ানে সম্পন্ন হচ্ছে। এই বিষয়ে রুশ বার্তা সংস্থা স্পুতনিক জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন ৯২ শতাংশ বেড়েছে এবং এসব লেনদেনে রুশ মুদ্রা রুবল ও চীনা মুদ্রা ইউয়ান ব্যবহৃত হচ্ছে। বাণিজ্য বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এই বিষয়ে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লি টি ওয়ান বলেছেন, আ লিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সূচকগুলোর একটি হচ্ছে জাতীয় মুদ্রার ব্যবহার। জাতীয় মুদ্রা ব্যবহারে চীন অনেক বেশি অগ্রগামী এবং চীন একশ’রও বেশি দেশের সঙ্গে জাতীয় মুদ্রায় লেনদেনের বিষয়ে চুক্তি করেছে।
আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক নিল ফার্গুসন বলেছেন, আমেরিকা বিশ্বে নিজের কর্তৃত্ব হারাতে বসেছে যেমনিভাবে এক সময় স্পেন, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড তাদের আধিপত্য হারিয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com