কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের জেরে দেশে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পর্যটকশূন্য শ্রীমঙ্গল। উপজেলার হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজসহ খাবারের হোটেল ও পর্যটকদের কেনাকাটার দোকানগুলোতে কারো আনাগোনা নেই। পর্যটন ব্যবসায় দেখা দিয়েছে বড় মন্দাভাব। এতে লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা। চায়ের রাজ্যখ্যাত শ্রীমঙ্গলে চা-বাগান ছাড়াও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), টি মিউজিয়াম, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, বধ্যভূমি-৭১, চা-কন্যা ভাস্কর্যসহ নানা পর্যটন স্পটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পর্যটকবিহীন খাঁ খাঁ করছে পর্যটন স্পটগুলো। চারদিকে একেবারেই সুনসান নীরবতা। নেই কোনো পর্যটকের কোলাহল। বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট। খালি পড়ে আছে আবাসিক হোটেল-মোটেলের রুম। এতে অর্থনৈতিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন শিল্প শ্রীমঙ্গল। বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা যায়, এগুলোর বেশিরভাগই পর্যটকশূন্য। নেই দেশি কিংবা বিদেশি পর্যটক। শহরের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট-কটেজগুলোতেও শূন্যতা বিরাজ করছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। শ্রীমঙ্গলের চামুং রেস্টুরেন্ট ও ইকো ক্যাফের সত্বাধিকারী তাপস দাশ বলেন, আমাদের ব্যবসাটাই পর্যটক কেন্দ্রিক। পর্যটক না আসলে আমাদের প্রতিদিন লোকসান দিতে হয়। কারফিউ জারির পর থেকেই আমাদের রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে হয়েছে। রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও প্রতিদিন রেস্টুরেন্টের কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, পানি বিলসহ আনুষাঙ্গিক খরচ আমাদের ঠিকই বহন করতে হচ্ছে। শহরের বধ্যভূমির সামনে আনারস বিক্রেতা দুলাল মিয়া বলেন ‘মানুষ অস্থিরতা দেখে ভয় পাচ্ছে ঘর থেকে বের হতে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ার পর থেকেই কোনো পর্যটক আসছে না। ফলে কোনো বেচা বিক্রিই হয় না। কষ্ট করে দিন পার করি।’ শ্রীমঙ্গল গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন দেশে ছাত্র আন্দোলনে নিমিষেই সব শেষ হয়ে যায়। এ কারণে অনেক পর্যটক বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছে সকল হোটেল, রিসোর্ট। এতে করে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের শ্রীমঙ্গল শাখার সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম বলেন, দেশের পর্যটকদের পাশাপাশি অনেক বিদেশি পর্যটক বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন।
বর্তমান পরিস্থিতি কথা বিদেশি পর্যটকেরা জানতে পেরেছেন। দূতাবাস থেকে স্ব–স্ব দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ জন্য বিদেশি পর্যটকেরা ঘুরতে বের হচ্ছেন না। বিদেশ থেকেও কেউ আসছেন না। রাসেল আলম আরও বলেন, ‘বিদেশি পর্যটকেরা যখন দেশের বাইরে যান, তখন প্রায় তিন-চার মাস আগেই পরিকল্পনা শুরু করেন। আমাদের দেশে হয়তো কিছুদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু বিদেশি অনেক পর্যটকই বাংলাদেশের আসার পরিকল্পনা বাতিল করতে পারেন। শীতের শুরু অর্থাৎ অক্টোবরে দেশি–বিদেশি পর্যটকেরা ঘুরতে বের হন। আর মাত্র কয়েকটি মাস বাকি। পরিস্থিতি যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমে যাবে। দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।