শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন

কত কী মুগ্ধতা উপহার দিয়ে গেছে ছেলেটা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশ হয়ে উঠেছিল উত্তাল। এই অস্থির সময়ে অনেক শিক্ষার্থীই হারিয়েছেন তাঁদের সতীর্থকে। পড়ুন এমনই একজনের শোকগাথা। মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে নিয়ে লিখেছেন তাঁর বন্ধু সাঈফ রিফাত মুগ্ধর মৃত্যুসংবাদটা আর সবার মতো আমিও মেনে নিতে পারিনি। ওর পুরো নাম মীর মাহফুজুর রহমান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একসঙ্গে পড়েছি। মুগ্ধ ছিল গণিত বিভাগে, আমি পরিবেশবিজ্ঞানে। দুজনই ১৯ ব্যাচ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ও ভর্তি হয়েছিল ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি)।
শুরুতে বিশ্বাস হয়নি। পরে যখন নিশ্চিত হলাম, হ্যাঁ, উত্তরায় নিহত হওয়া তরুণ আমাদেরই মুগ্ধ—হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। মানসপটে ভেসে উঠছিল মুগ্ধর মুখ। ভাবছিলাম, এত চনমনে আর হাসি-খুশি একটা ছেলে এভাবে বুলেটের কাছে হেরে যেতে পারে না!
চোখের সামনে ভাসছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রোড, মুক্তম , তপনদার চায়ের দোকান। এই জায়গাগুলোয় আর কোনো দিন মুগ্ধকে দেখব না! গত পাঁচ বছরে আমাদের কত–কী মুগ্ধতা উপহার দিয়ে গেছে ছেলেটা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বারো মাসে তেরো পার্বণের সবকটাতেই ওকে পাওয়া যেত। কখনো দর্শক, কখনো আয়োজক হিসেবে। এই তো সেদিন আমরা সত্যম-সৃঞ্জয়ের অনুষ্ঠানে একসঙ্গে সিনিয়রদের ‘কামলা খাটলাম’, মুক্তমে র সামনে দাঁড়িয়ে কত যে গানে একসঙ্গে গলা মেলালাম। ১৯ ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে মে দাঁড়ানো পাঞ্জাবি পরা ছেলেটির ছবি মাথা থেকে কিছুতেই সরাতে পারছি না।
খুব বেশি দিন আগের কথা না। পরদিন বৃষ্টি হতে পারে জেনেও দীপাবলির প্রোগ্রামের জন্য সন্ধ্যায় আমরা ডাকবাংলো মোড়ে গিয়েছিলাম আতশবাজি কিনতে। আরেকবার সরকারি জয় বাংলা কলেজের মোড়ে আমাদের এক ব্যাচমেটের সঙ্গে পুলিশ অন্যায় আচরণ করেছিল, সে ঘটনার প্রতিবাদে আমরা সব শিক্ষার্থী মিলে গল্লামারীর রাস্তা আটকে দিয়েছিলাম। মুগ্ধও ছিল সঙ্গে।
এখন আনমনে ভাবছি, ঘুড়ি উৎসবের সেই সময়টা যদি আরেকবার ফিরিয়ে আনতে পারতাম, মুগ্ধর সঙ্গেও তো আরও একবার দেখা হয়ে যেত। স্লোগানে, রাজপথে, কবিতায় কিংবা নিতান্ত তুচ্ছ কোনো কাজেও ঠিকই হল রোডে হাজির হয়ে যেত আমাদের মুগ্ধ। ক্যাম্পাসে কারো বিপদে ছুটে আসত সব সময়। ওর একটা বিশেষ গুণ ছিল—হোক জুনিয়র, ব্যাচমেট কিংবা সিনিয়র, সবাইকে আগলে রাখতে চেষ্টা করত। মানুষ হিসেবে কেমন ছিল, সেই চারিত্রিক সনদ দিতে যাব না। শুধু এটুকু বলতে পারি, ছেলেটা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটাকে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানুষগুলোকে ভীষণ ভালোবাসত। এই ভালোবাসাটা দূর থেকে দেখতেও ভালো লাগত।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ১৮ জুলাই যখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য বাংলা ভাস্কর্যের চোখমুখ কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হলো, সেদিন মুগ্ধ ফেসবুকে লিখেছিল, ‘আমার জুনিয়রদের কাছে অনুরোধ: এই কালো কাপড় যেন আর কখনো না সরানো হয়। আমি জানি, তোমরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছ। এটা সব সময় মনে করিয়ে দেবে আমাদের দুর্বলতা, এবং পরাধীনতা।’
হতাশা, আফসোস, দুঃখের ভিড়েও মুগ্ধরা সব সময় আমাদের সাহস দিয়ে যায়, আর যাবেও। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক থেকে বর্তমান প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী এখন গর্ব করে বলে—আমি মুগ্ধর বন্ধু, ব্যাচমেট, জুনিয়র কিংবা সিনিয়র।
মুগ্ধ নেই, আর কখনো ফিরেও আসবে না। কিন্তু মুগ্ধরা আমাদের মন থেকে হারাবে না কোনো দিন। ওয়ারফেজের ‘জনস্রোত’ গানের কয়েকটা লাইন বোধ হয় মুগ্ধদের জন্যই লেখা—
‘কুয়োতেই ওরা বড় হোক,
আর জড়ো হোক হাতে চাতুর্য সম্ভার।
অসীমের পথে চলব,
আর বলব এই আমার অহংকার।’ ( প্রথমআলো অনলাইন)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com