তথ্য সংশোধন করে গত মাসে দেশের রফতানি আয়ের পরিসংখ্যান থেকে ১ হাজার ৪২০ কোটি বা ১৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকা রফতানি খাত হঠাৎ করেই ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। দেশে বিদেশী বিনিয়োগ ও ঋণ বা সহায়তার পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। ইতিবাচক ধারায় ছিল কেবল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেটিও বড় ধরনের ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। এতে দেশের ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ আরো বেশি ভঙ্গুর হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুই বছরের বেশি সময় অস্থিতিশীল থাকার পর ডলারের বিনিময় হার কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে এসেছিল। কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছিল বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘাত-সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী সব সংবাদমাধ্যমে এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরা হচ্ছে। ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয়াসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ নিয়ে যে ধারণা তৈরি হয়েছে, সেটি কাটিয়ে উঠতেও অনেক সময় লাগবে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সর্বশেষ প্রকাশনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের বিষয়ে যেসব পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি মৌলিক বিষয় ছিল যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, যাতে বড় ধরনের কোনো ব্যাঘাত এখানে না ঘটে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ একপ্রকার লকডাউনের মধ্য দিয়ে গেছে দেশের অর্থনীতি। এখনো একটা ভার্চুয়াল লকডাউন চলছে। কভিডের সময় বাইরে বের হতে না পারলেও ডিজিটাল মাধ্যমে বাসায় বসেও অনেক কিছু করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা একটা ই-মেইল পর্যন্ত বিদেশী ক্রেতাদের পাঠাতে পারছিলেন না। অনেক ছোট স্টার্টআপ ও ফ্রিল্যান্সার যাদের তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা, তারা একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। ইন্টারনেট না থাকার প্রভাব সব খাতের ওপরই পড়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অর্থনীতি নিয়ে পূর্বাভাস দিতে হলে আগে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে স্বাভাবিক অবস্থা কবে ফিরছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলতে আমরা যেটা বুঝি যে কারফিউ থাকবে না, রাস্তায় পুলিশ থাকলেও সেনাবাহিনী থাকবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ থাকে, তাহলেও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসছে বলা যাবে না। এ মুহূর্তে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনাটাই মূল চ্যালেঞ্জ। আর্থিক খাতের দুর্দশা, বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতো বড় বিষফোঁড়া আমাদের অর্থনীতিতে গত দুই-তিন বছর রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক যে সংঘর্ষ ও প্রাণহানি সেটি তো রক্তক্ষরণের মতো। রক্তক্ষরণ বন্ধ না করে আপনি ফোঁড়ার চিকিৎসা করবেন কীভাবে?’
বহির্বিশ্বের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বলতে প্রধানত দেশের আমদানি, রফতানি, রেমিট্যান্স, বিদেশী ঋণ, বিনিয়োগ ও সহায়তাকে বোঝায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে রেমিট্যান্স ছাড়া সবক’টি খাতই ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) আমদানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও দেশের আমদানি ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছিল। ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে দুই অর্থবছর ধরেই আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়েছিল নানা শর্ত। ডলার সংকটের কারণে দেশের ব্যাংকগুলোও আমদানির এলসি খোলা থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিল। আমদানি কমলেও দেশের রফতানি বাড়ছিল বলে গত দুই অর্থবছর ধরে দাবি করে আসছিল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছিল ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) রফতানি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয় ২ শতাংশের বেশি। কিন্তু গত অর্থবছরের শেষ মাসে এসে রফতানির তথ্য সংশোধন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে গত দুই অর্থবছরে রফতানি আয়ের তথ্য থেকে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে দেয়া হয়। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশ থেকে ৫০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। কিন্তু সংশোধিত তথ্যে বলা হচ্ছে, ওই সময় মূলত ৩৯ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়। সে হিসাবে গত অর্থবছরের ১১ মাসে ১০ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল। একই পরিস্থিতি হয়েছে গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের ক্ষেত্রেও। গত মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৫১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়। কিন্তু জুনে এসে বলা হয়, ওই ১১ মাসে মাত্র ৩৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘রফতানির পরিসংখ্যান পরিবর্তনের কারণে আমাদের অনেক প্রক্ষেপণই এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। এগুলোকে নতুন করে আবার করতে হবে। এখনো বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হয়নি। এটিকে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। বিদেশ থেকে কিছু অর্থ পাওয়ার কারণে আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। কিন্তু এটি ধারাবাহিকভাবে আসবে এমন নয়। আমদানিতে অনানুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হতে না পারলে অর্থনীতি সমস্যায় পড়বে। এটি দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকলে আমদানিকারকরা কম টাকার এলসি দেখিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ দিয়ে আমদানির প্রবণতা তৈরির শঙ্কা রয়েছে। রফতানির ক্ষেত্রে আমরা ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে না পারলে রফতানির পরিমাণ বাড়বে না। এখন তৈরি পোশাকের রফতানির ভরা মৌসুম বলা যায়। ক্রিসমাসকে সামনে রেখে এখন ক্রয়াদেশ আসবে। কিন্তু এ সময়ে আমরা এক সপ্তাহ পুরোপুরি যোগাযোগের বাইরে ছিলাম। এতে বিদেশী ক্রেতারা চিন্তা করতে পারেন যে তাদের পণ্য সংগ্রহের বিকল্প উৎস তৈরি করতে হবে। সামনের দিনগুলোয় এটি একটি বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে হুন্ডিকে বন্ধ করতে না পারলে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ আসবে না। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে। বিদ্যমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলে সহায়তা আসবে না। এমনিতেই দেশের ভেতরে বিনিয়োগ এখন কঠিন। এফডিআই তো অবশ্যই কঠিন। বর্তমান পরিস্থিতি এটিকে আরো ঘনীভূত করবে। বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে আমাদের দেশের সুনাম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ সমস্যাকে প্রশমিত করতে হলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুনাম বাড়ানো নিয়েও কাজ করতে হবে।’
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দুই অর্থবছর ধরেই অস্থিতিশীল ডলারের বিনিময় হার। ২০২২ সালের শুরুতেও দেশে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক খাতেই প্রতি ডলার ১১৮ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। সে হিসাবে এ সময়ে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি। বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের শুরু থেকে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকায় দেশে ডলারের বিনিময় হার কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে এসেছিল। কিন্তু চলতি মাসে এসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বড় ধরনের ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। ইন্টারনেট বন্ধ ও দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষ ও কারফিউর প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্সে পতনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২৪ জুলাই পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৯৮ কোটি ডলার এসেছিল প্রথম ১৩ দিনে। আর ১৪ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৫৩ কোটি ডলার। যেখানে গত মাসে (জুন) প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সংঘটিত সহিংসতা, মৃত্যু ও ইন্টারনেট বন্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দেশে দেশে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছে তাদের একাংশ। এ পরিস্থিতিতে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো কমে যাওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে জুলাইয়ে আসা রেমিট্যান্স হতে পারে চলতি বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রেমিট্যান্সের পতনের ধারা আগামী মাসগুলোয়ও অব্যাহত থাকতে পারে।
পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি আরশাদ জামাল (দিপু) বলেন, ‘বর্তমানে লোহিত সাগর সংকটে জাহাজ অনেকটা ঘুরেই যেতে হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে আগে থেকেই আমাদের বন্দরের সীমাবদ্ধতা ছিল। এ রকম একটা অবস্থায় আমরা যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলাম, তখনই সংকট দেখা দিল। বাস্তবতা হলো আমাদের রফতানি কমেছে। বৈশ্বিক বাজার চাহিদা ও মূল্যস্ফীতির প্রতিফলন ক্রয়াদেশ চাহিদায় পড়েছে। সব মিলিয়ে আমরা এমনিতেই চ্যালেঞ্জে ছিলাম। আমদানি কমে যাওয়ায় বন্দরে কনটেইনার সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ তো আছেই—যেমন আমাদের নীতিমালাগুলোর ধারাবাহিকতা নেই। সব মিলিয়ে নিশ্চয়ই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তির সমস্যা নিয়েও চিন্তায় আছি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশী বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হবে।’
গত কয়েক বছর দেশে নিট বৈদেশিক সহায়তা আসার পরিমাণও ক্রমেই কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের নিট বৈদেশিক সহায়তা এসেছিল, যার বেশির ভাগই ঋণ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এটি কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে। সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে দেশে নিট বৈদেশিক সহায়তা এসেছে ৫ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারের নিট বৈদেশিক সহায়তা এসেছিল। এক্ষেত্রে নিট বৈদেশিক সহায়তা কমেছে ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
সহায়তার মতো নিট প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) ধারাও এখন নি¤œমুখী। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে নিট এফডিআই এসেছিল ১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। এর পরের ২০২২-২৩ অর্থবছরে এটি কমে ১ দশমিক ৬৫ ডলারে দাঁড়ায়। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিট এফডিআই এসেছে। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
দেশের বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সদস্যরা গতকালই এক সভা করেন। সভায় বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়। আজ দেশের সব বাণিজ্য সংগঠন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি জাভেদ আক্তার বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য পরিস্থিতি খুবই কঠিন। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গত এক সপ্তাহে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে। এরপর আবার মাল্টিপ্লায়ার ইফেক্ট বা বহুগুণিতক প্রভাবও আছে। অর্থনীতি বন্ধ হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয় না। এ রকম একটা অবস্থায় প্রথমে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এরপর আবার নতুন বিদেশী বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করার দিকে মনোযোগী হতে হবে। বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে না এলে অন্যদেরও আসবে না।’
দেশের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রায় তিন বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে ২০২১ সালের আগস্টে দেশের গ্রস রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এর পর থেকেই রিজার্ভের ক্ষয় চলছে। সরকারের বিদেশী ঋণ পরিশোধ ও আমদানি দায় মেটাতে গত দুই অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৩০ জুন আন্তর্জাতিক মানদ- (বিপিএম৬) অনুসারে দেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। তবে একই দিন নিট রিজার্ভ ছিল ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয় সরকার। দাতা সংস্থাটির কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা নিচ্ছে বাংলাদেশ।-সূত্র: বণিকবার্তা