সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

মিথ্যা অপবাদের কঠিন শাস্তি

মুফতি তাজুল ইসলাম
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪

মিথ্যা বলা পাপ। মিথ্যার সর্বোচ্চ পর্যায় হলো কারো ওপর অপবাদ দেওয়া। যে অপরাধ বা দোষ কারো ভেতর নেই, এমন অপরাধ বা দোষ তার জন্য সাব্যস্ত করাকে অপবাদ বলা হয়। অপবাদ কখনো কখনো কুফরি পর্যন্ত নিয়ে যায়। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সম্পর্কে অপবাদ দেওয়া কুফরি। পবিত্র কোরআনে মূর্তি পূজার সঙ্গে মিথ্যা সাক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘…সুতরাং তোমরা বর্জন করো মূর্তি পূজার অপবিত্রতা এবং দূরে থেকো মিথ্যা কথা থেকে। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩০) চরিত্রবান নারীদের অপবাদ দেওয়া কঠিন পাপ : অপবাদ দেওয়া হয় ব্যক্তিগত শত্রুতা ও বিদ্বেষ থেকে। অপবাদের মাধ্যমে সাময়িক নির্দোষ ব্যক্তির চরিত্রে কালিমা লেপন করা হলেও এর পরিণতি ভয়াবহ। সচ্চরিত্রবান নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া কঠিন অপরাধ।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রবান সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখিরাতে) আছে মহা শাস্তি। ’ (সুরা: নুর, আয়াত : ২৩)
ব্যভিচারের অভিযোগ প্রমাণে চার সাক্ষী : যারা কোনো সৎ ও নির্দোষ নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তাদের অবশ্যই চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হবে।
চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে না পারলে প্রত্যেককে ৮০টি করে বেত্রাঘাত করা হবে, কারো ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং তখন থেকে তাদের পরিচয় হবে ফাসিক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা সৎ নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিল, অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণিত করতে পারেনি তাহলে তোমরা ওদের ৮০ বেত্রাঘাত করো, কারো ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ কোরো না এবং তারাই তো সত্যিকার ফাসিক। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিজেদের সংশোধন করে নেয় (তারা সত্যিই অপরাধমুক্ত)। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৪-৫) । মহান আল্লাহ ব্যভিচারের অপবাদকে গুরুতর অপরাধ বলে সাব্যস্ত করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছ; অথচ তা আল্লাহর কাছে খুবই গুরুতর অপরাধ। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৫)
অভিযোগ প্রমাণে যা যা করণীয় : অপবাদ দুই ধরনের। এক. যে অপবাদে ইসলামে নির্দিষ্ট পরিমাণের শাস্তির ব্যবস্থা আছে। যেমন—ব্যভিচারের প্রকাশ্য অপবাদ অথবা কারো বংশীয় পরিচয় অস্বীকার করা। দুই. যে অপবাদে ইসলামে নির্দিষ্ট পরিমাণের কোনো শাস্তি নেই। এমন অপবাদের ক্ষেত্রে অপবাদীকে শিক্ষামূলক কিছু শাস্তি অবশ্যই দেওয়া হবে। তবে যে যে কারণে অপবাদকারীকে বেত্রাঘাত করতে হয় না, সেগুলো চার ধরনের অপবাদ। যেমন—
১. যাকে অপবাদ দেওয়া হলো সে অপবাদকারীকে ক্ষমা করে দিলে। ২. যাকে অপবাদ দেওয়া হয়েছে সে অপবাদকারীর অপবাদকে স্বীকার করলে। ৩. অপবাদকারী অপবাদের সত্যতার ব্যাপারে কোনো প্রমাণ দাঁড় করালে। ৪. পুরুষ নিজ স্ত্রীকে অপবাদ দিয়ে নিজেকে লানত করতে রাজি হলে।
অপবাদ থেকে বাঁচার উপায়: অপবাদ থেকে বাঁচার উপায় হলো, সাধারণভাবে মানুষের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করা এবং অনুমান থেকে দূরে থাকা। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থেকো…। ’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)
কারো ওপর অপবাদ দেওয়া হয় তাকে হেয় করার জন্য; মানুষের কাছে তার চরিত্র হননের জন্য। অথচ এটি অপবাদ আরোপকারীর ওপরই বর্তায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৩৫)
কারো ব্যাপারে অপবাদ দেওয়া হলে সে ক্ষমা না করলে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া যাবে না। কেননা অপবাদ বান্দার হক। বান্দা ক্ষমা না করলে মহান আল্লাহ বান্দার হক ক্ষমা করেন না।
তথ্যের যাচাই-বাছাই জরুরি: পাশাপাশি যার কাছে অন্যের বিরুদ্ধে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা হয়, তার উচিত অন্ধভাবে তার কথা বিশ্বাস না করে তা যাচাই-বাছাই করা। অতিরিক্ত আবেগের বশবর্তী হয়ে কখনো ভিত্তিহীন কথা প্রচার করা হয়। অথচ রাসুল (সা.) ভিত্তিহীন কথা বলতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। নিষেধ করেছেন কোনো খবর যাচাই না করেই প্রচার করতে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যা শুনে তা-ই বলতে থাকা কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (মুসলিম, হাদিস : ৫)
তাই কোনো কথাই ভালোভাবে যাচাই না করে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। কেননা অন্য কেউ বিপথগামী হতে পারে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সত্য কল্যাণের পথে পরিচালিত করে, আর কল্যাণ জান্নাতে পৌঁছায়। আর মানুষ সত্যের ওপর অবিচল থেকে অবশেষে সিদ্দিকের মর্যাদা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহর কাছে মহা মিথ্যাচারী প্রতিপন্ন হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস : ৬০৯৪)। মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com