ভোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার (৪ আগষ্ট) ৩ জন সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
ভোলা সদর হাসপাতাল সূত্রে ৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জেলা বিএনপির দাবি, তাদের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দাবি করছেন, তাদের এক যুবলীগ কর্মীকে বিক্ষোভকারীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিক্ষোভকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ তাদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে ছাত্রলীগ পিছু হটে যায়। পরে বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিক্ষোভকারীরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ সকাল ৯টার দিকে ভোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে জমায়েত হয়। পরে ১০টার দিকে ভোলা ইলিশা সড়কের মধ্যে ইলিশ চত্বর দখল করে বিক্ষোভকারীরা। এর নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রাইসুল আলম। বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে কালিনাথ বাজার, মহাজনপট্টি ও বরিশাল দালান হয়ে বাংলাস্কুল মোড়ে এলে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে।
ছাত্রলীগ বাধার মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সামনে রাখা প্রায় ৪০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, উপজেলা ভূমি কার্যালয়, ভোলা পৌরসভা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়। পৌরভবন ও ডিসি অফিসের সামনে রাখা বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
ভোলা সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলামসহ ১৫ জন ভর্তি হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু ঢাকা মেইলকে বলেন, বিক্ষোভকারীরা যুবলীগের কর্মী মো. মিলনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রাইসুল আলমের অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগের হামলায় তাঁদের দুই নেতাকর্মী নিহত ও শতাধিক কর্মী আহত হয়েছেন।
এদিকে জেলা জুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেলা ২টা থেকে শহরজুড়ে নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নৌবাহিনী মাইকিং করে আন্দোলনকারীদেরকে সরে যেতে অনুরোধ করছেন।
শুধু ভোলা শহরেই নয়। শহরের বাহিরেও পরাণগঞ্জ বাজার এলাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাংচুর করা হয়। সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এসময় ভোলা-লক্ষ্মীপুর-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে থমথমে ভোলা।