রাসূলুল্লাহ সা:-এর মক্কা বিজয়ের অভিযান সংঘটিত হয় অষ্টম হিজরি সালের ১৭ থেকে ২১ রমজানের মধ্যে। এটি ছিল মূলত গোয়েন্দা অভিযান। মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকে ফোকাস করা হয়েছিল এই অভিযানে। মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বা Psychological Warfare হলো গোয়েন্দা অভিযানের প্রধান কৌশল। রাসূল সা: বলেছেন, যুদ্ধ হলো
বুদ্ধির খেলা। তিনি কৌশলের মাধ্যমে বিনাযুদ্ধে কোরাইশদের পরাজিত করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। আবার উদারতা, মানবাধিকার এবং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে শত্রুদের মনোজগতে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সঞ্চার করেন। ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধির পর মক্কা ও মদিনার মধ্যে আপাত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সন্ধির পর যুদ্ধে বিরতি ঘটলে রাসূল সা: মদিনার চারপাশে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে দ্রুত তাওহিদের দাওয়াত পৌঁছাতে থাকেন। যে অঞ্চলে যে পদ্ধতি কার্যকর সেই অঞ্চলে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেই রাসূল সা: চারদিকে ইসলামের দাওয়াত প্রেরণ শুরু করেন। ছোট ছোট দলে সামরিক অভিযানও পরিচালনা করেন উচ্ছৃঙ্খল বেদুঈন ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলোকে সন্ত্রাসী তৎপরতা ছেড়ে সভ্যজীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য। এভাবে সন্ধি পরবর্তী এক-দেড় বছরের মধ্যেই নওমুসলিমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে পরিস্থিতি আরো অনুকূলে চলে আসে। এমতাবস্থায় মক্কার কোরাইশরা বেশ কিছু কর্মকা- করে প্রকাশ্যে হুদায়বিয়ার চুক্তি ভঙ্গ করে। ফলে রাসূলুল্লাহ সা:-এর জন্য কোরাইশদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর বিকল্প থাকল না।
রাসূলুল্লাহ সা: একটি রক্তপাতহীন অভিযানের মাধ্যমে কোরাইশদের পরাস্ত করার দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মুসলিম বাহিনীসমেত হঠাৎ মক্কার উপকণ্ঠে হাজির হলে কোরাইশরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বিনা বাধায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে। তাই তিনি অভিযানের পুরো পরিকল্পনা নিজের মনের মধ্যে রেখে মুসলমানদেরকে শুধু যুদ্ধ-প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন। আসল উদ্দেশ্য আড়ালে রেখে সৈন্য সংগ্রহের জন্য তিনি শুধু ঘোষণা দিলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছে সে যেন রমজান মাসে মদিনায় উপস্থিত থাকে।’ (সিরাত বিশ্বকোষ, ৭ম খ-, ২০০৩ : ৪০৬)। ঘোষণা শুনে আশপাশের বিভিন্ন গোত্রের বহুসংখ্যক সৈন্য মদিনায় সমবেত হতে থাকে। তবে এই সৈন্য সমাবেশের সংবাদ যেন মক্কায় না পৌঁছে সে জন্য তিনি সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। তিনি হজরত ওমর রা:-এর নেতৃত্বে একটি টহল দলকে দায়িত্ব দিলেন যারা মক্কা অভিমুখে যাত্রা করা প্রতিটি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনবে, সব ধরনের যাত্রীদের গতিবিধি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করবে এবং তাদের কাছ থেকে মক্কা ও পাশর্^বর্তী অঞ্চল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। একই সাথে মদিনার ভিতর-বাহির সবার মনোযোগ মক্কা থেকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য একটি ভিন্নমুখী অভিযান বা Diversionary Offensive launch করেন। অর্থাৎ আবু কাতাদা ইবনে রিবয়ী রা:-এর নেতৃত্বে ৮০ জন সৈন্যের একটি বাহিনী মদিনার ‘বতনে হিসাম’ অঞ্চলের দিকে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ সা: মক্কার উদ্দেশে অগ্রাভিযান শুরু করলে এই বাহিনী গতি পরিবর্তন করে ‘সুকিয়া’ নামক স্থানে গিয়ে রাসূল সা:-এর মূল বাহিনীর সাথে মিলিত হয় (সাল্লাবী, ২০২২ : ৪৫৫)। হাতিব ইবন আবি বাল্তা’আ রা: নামক একজন মর্যাদাপূর্ণ সাহাবি নিতান্ত নিজ পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে উম্মে সারা নামের মক্কার একজন মহিলার মাধ্যমে দশ দেরহামের বিনিময়ে পত্র মারফত মক্কা আক্রমণের আগাম সংবাদ কোরাইশদেরকে পাঠিয়ে দেন। যেন এই তথ্য দিয়ে সহযোগিতার জন্য মক্কার লোকেরা তাঁর (হাতিবের) পরিবারকে নিরাপত্তা প্রদান করে। কিন্তু হাতিবের এই গোপন পত্র প্রেরণের তথ্য ঐশী গোয়েন্দা ব্যবস্থার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক রাসূলুল্লাহ সা:-কে জানিয়ে দেয়া হয়। নবীজি সা: সাথে সাথে আলী রা:-এর নেতৃত্বে হজরত যুবায়র রা: এবং হজরত মিকদাদ রা:সহ তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধানী দল পাঠিয়ে ওই পত্রটি জব্দ করার ব্যবস্থা নেন।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাসূলুল্লাহ সা: ১০ রমজান, অষ্টম হিজরি/৬৩০ সালের ১ জানুয়ারি দশ হাজার মুসলমানের এক বিশাল বাহিনীসহ মক্কার উদ্দেশে অগ্রাভিযান শুরু করেন (প্রাগুক্ত : ৪০৯)। অন্যদিকে হজরত যুবায়র রা:-এর নেতৃত্বে দুইশত সৈন্যর অশ্বারোহী বাহিনীসমেত একটি ‘অ্যাডভান্স গার্ড’ দল মোতায়েন করেন। যাত্রার সপ্তম দিনে রাসূলুল্লাহ সা: মুসলিম বাহিনী নিয়ে মক্কা থেকে এক দিনের দূরত্বে ‘মাররুজ-জাহরান’ নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। এখানে তিনি কোরাইশদের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে মুসলিম বাহিনীর প্রত্যেককেই পৃথক পৃথক তাঁবু টাঙিয়ে রাতের বেলা নিজ নিজ তাঁবুর সামনে আগুন জ্বালানোর নির্দেশ দেন। ফলে পৃথকভাবে ১০ হাজার চুল্লিতে প্রজ্বলিত হওয়া অগ্নি পুরো প্রান্তরে রাতের আঁধার ভেদ করে এক ভয়াবহ দৃশ্যের অবতারণা করে (সিরাত বিশ^কোষ, ৭ম খ-, ২০০৩ : ৪০৯)।
এতবড় বাহিনীর প্রস্তুতির সব তথ্য গোপন করে হঠাৎ মক্কার দ্বারপ্রান্তে উপস্থিতি ছিল রাসূলুল্লাহ সা:-এর এক বিরাট নিরাপত্তা সাফল্য। যুদ্ধে জয়ের প্রথম শর্ত Surprise achieve করা। রাসূল সা: সফলতার সাথেই এই ‘সারপ্রাইজ’ অর্জন করতে সক্ষম হলেন অর্থাৎ শত্রুকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করতে পারলেন। হঠাৎ এক রাতে বিশাল এলাকাজুড়ে অগ্নিশিখা দেখে কোরাইশরা ভরকে যায়। তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তারা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টহল দল প্রেরণ করে (প্রাগুক্ত : ৪১১)। এমন সময় হজরত ওমর রা:-এর নেতৃত্বাধীন টহল দল অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে আবু সুফিয়ানের টহল দলের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে ফেলে। ওমর রা: আবু সুফিয়ানকে বন্দী করে দ্রুত রাসূলুল্লাহ সা:-এর সামনে হাজির করেন। এ সময় হজরত আব্বাস রা: দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন এবং রাসূল সা:-এর নিকট আবু সুফিয়ানের নিরাপত্তা ভিক্ষা চাইলেন। অন্যদিকে হজরত ওমর রা: আবু সুফিয়ানকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন। দীর্ঘ ২১টি বছর যে ব্যক্তিটি রাসূল সা:-এর ওপর চরম নির্যাতন করেছে; মদিনাকে এবং মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য বারবার আরব গোত্রসমূহকে একত্রিত করে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে এসে নিজে নেতৃত্ব দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে; রাসূল সা:কে গোপনে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে সেই প্রাণের দুশমন আজ রাসূল সা:-এর হাতের মুঠোয়। এমন পরিস্থিতিতেও তিনি কোনো ধরনের প্রতিশোধ না নিয়ে বরং আবু সুফিয়ানকে নিরাপত্তা দেয়ার প্রস্তাবটিই গ্রহণ করলেন।
পরদিন সকালে রাসূলুল্লাহ সা: ইসলামের সবচেয়ে বড় দুশমন এই আবু সুফিয়ানের মনস্তত্ত্বকে ভেঙে চুরমার করে দেয়ার উদ্দেশ্যে তাকে বললেন, তুমি আমার পক্ষে মক্কায় গিয়ে ঘোষণা দেবে, ‘যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নেবে সে নিরাপদ থাকবে।’ সেই সাথে তিনি হজরত আব্বাস রা:-কে নির্দেশ দিলেন আবু সুফিয়ানকে মক্কাগামী সরু গিরিপথের পাশের কোনো পাহাড়ের ওপর দাঁড় করিয়ে মুসলিম বাহিনীর অগ্রাভিযান দেখার ব্যবস্থা করতে। ফলে পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আবু সুফিয়ান পুরো বাহিনীর সরু পথ দিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় বাহিনীকে আরো বিশাল আকারে দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। অস্ত্র হাতে পতাকা উড়িয়ে একের পর এক ব্যাটালিয়নগুলোর অগ্রসর হওয়া দেখে আবু সুফিয়ান বুঝতে সক্ষম হয় এই বাহিনীকে আজ কেউ পরাজিত করতে পারবে না। আবু সুফিয়ান দ্রুত মক্কায় ফিরে সবাইকেই আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয় এবং নিরাপত্তার জন্য নিজ নিজ ঘরে অথবা আবু সুফিয়ানের গৃহে অথবা ‘কাবায়’ প্রবেশের পরামর্শ দিয়ে প্রতিরোধ গড়ার সব উৎস নির্মূল করে দেয়।
ফাইনাল অফেনসিভ বা চূড়ান্তভাবে বাহিনীসহ মক্কায় প্রবেশের পূর্বে রাসূল সা: বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন কমান্ডারদের বিস্তারিতভাবে নির্দেশনা প্রদান করেন। তাঁর এই চূড়ান্ত পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ‘রক্তপাতহীন’ বিজয়। তিনি সব কমান্ডারকে কঠোর নির্দেশ দিলেন, ‘সংঘর্ষের উপক্রম না হলে তলোয়ার কোষমুক্ত করা যাবে না।’ দুর্র্ধষ যোদ্ধা হজরত খালিদ বিন ওলিদ রা:কে বিশেষভাবে নির্দেশ দেন, যদি কোরাইশরা তোমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ না করে তবে তাদের কারো ওপর তরবারি ওঠাবে না (প্রাগুক্ত : ৪১৫)। কোরাইশরা যেন কোনোভাবেই কোনো প্রতিশোধ গড়ে তোলার সাহস না করে সেজন্য তিনি পুরো বাহিনীকে চারটি কমান্ডে ভাগ করে চারদিক থেকে মক্কায় প্রবেশের নির্দেশ দেন। চারটি ব্রিগেডের অগ্রাভিযান এমনভাবে বিন্যাস করেন যেন প্রতিটি বাহিনী একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে। হজরত যুবায়র রা: তার ব্যাটালিয়ন নিয়ে উত্তর দিক থেকে অগ্রসর হবেন যেখানে ফোর্সেস হেডকোয়ার্টারসহ ফোর্স কমান্ডার রাসূলুল্লাহ সা: নিজে থাকবেন। দক্ষিণ দিক থেকে খালিদ রা:, পশ্চিম দিক থেকে কায়স ইবন সাদ ইবন উবাদা রা: আনসার ব্রিগেডসহ এবং পূর্ব দিক থেকে হজরত আবু উবাদা রা: মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করবেন। উত্তর দিকটা উঁচু বিধায় সেখান থেকে পুরো মক্কা দেখা যাওয়ার কারণে ‘কমান্ড ও কন্ট্রোলের’ সুবিধার জন্য রাসূল সা: তার কমান্ড পোস্ট উত্তর দিক থেকে প্রবেশ করা যুবায়র রা:-এর ব্রিগেডের সাথে সংযুক্ত রাখেন। তিনি যুবায়র রা:কে ‘হাজুন’ নামক স্থানে পৌঁছে বিজয় পতাকা উত্তোলন করে পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে বলেন। আর খালিদ রা: কে মক্কায় প্রবেশ করে ‘সাফা’ পাহাড়ে এসে নবীজির সা: সাথে সাক্ষাতের নির্দেশনা দেন। বাকি তিন ব্রিগেড নির্বিঘ্ণে মক্কায় প্রবেশ করলেও খালিদ রা:কে সামান্য প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। আসলে দক্ষিণ দিক অর্থাৎ মক্কার নি¤œভূমির দিক থেকে সম্ভাব্য প্রতিরোধের আশঙ্কা থেকে রাসূলুল্লাহ সা: দূরদর্শিতার সাথেই খালিদ রা:কে সেই পাশের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আবু জেহেলের পুত্র ইকরামা এবং আরো দুই তিনজন কোরাইশ নেতা কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। তারা মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দুইজন মুসলিমকে শহীদ করে ফেলে। ফলে খালিদ রা: তীব্র প্রতি-আক্রমণ শুরু করলে ১২ জন শত্রু নিহত হয় এবং বাকিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করে (প্রাগুক্ত : ৪১৬)। এভাবে এই সামান্য খ-যুদ্ধ ছাড়া সবগুলো বাহিনী অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে নীরবে মক্কায় প্রবেশ করে। কোনো ধরনের শোরগোল, মহাবিজয়ের তা-ব, ভাঙচুর, নির্বিচারে হত্যা, লুটতরাজ ইত্যাদির কোনটি বিন্দুমাত্র না ঘটিয়েই দশ হাজার সৈন্যের একটি বিজয়ী দল নীরবে মক্কায় প্রবেশ করে।
মক্কা প্রবেশের সময় তিনি বিজয়ীর বেশে নয় বরং উটের পিঠে বসে মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে বিনয়ের সাথে প্রবেশ করেছেন। এ সময় তিনি তারই মুক্ত করা দাস হজরত যায়েদ রা:-এর পুত্র উসামা রা:কে উটের পিঠে তাঁর পিছনে বসিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। মক্কার সাধারণ মানুষের কাছে এটি ছিল বিস্ময়কর দৃশ্য! আল্লাহর নবী, আজ মহা বিজয়ের কা-ারি মুহাম্মদ সা: সবার পিছনে মক্কায় প্রবেশ করলেন একজন ক্রীতদাসের পুত্রকে পাশে বসিয়ে (প্রাগুক্ত : ৪১৫)! তিনি মক্কায় প্রবেশ করে কাবায় গিয়ে তাওয়াফ করেন। তাওয়াফ শেষে রাসূলুল্লাহ সা: কাবাঘরের ভিতরে প্রবেশ করে মুশরিকদের মূর্তিগুলো ভেঙে চুরমার করে কাবাকে পবিত্র করেন। সেখানে তিনি সালাত আদায় করে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কাবার দরজায় দাঁড়িয়ে সমবেত মক্কাবাসীর উদ্দেশে যুগান্তকারী ভাষণ দেন। এদিকে সমবেত মক্কাবাসী লজ্জায় আর ভয়ে থর থর করে কাঁপছে। তারা বিগত ২১ বছরের তাদের কর্মকা-ের কথা স্মরণ করে দিশেহারা হয়ে আছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা: ভাষণ দিয়ে বললেন, ‘আজ তোমাদের প্রতি কোনোই অভিযোগ নাই। যাও, তোমাদেরকে মুক্তি দিলাম, তোমরা স্বাধীন’ (প্রাগুক্ত : ৪২২)। রাসূল সা:-এর এই ভাষণে সমবেত কোরাইশরা অভিভূত হয়ে পড়ল। অশ্রুসজল নয়নে তারা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল। তারা ইসলামের সৌন্দর্য উপলব্ধি করে দলে দলে মুসলমান হতে লাগল (আশরাফী, ২০০২ : ৪৭০)। রাসূলুল্লাহ সা:-এর এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ অস্ত্র হাতে যুদ্ধের চেয়েও শক্তিশালী প্রমাণিত হলো। লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক Email: maksud2648@yahoo.com